নারী অধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বৈশ্বিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য: ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন নারী ও কন্যার উন্নয়ন; যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও লিঙ্গ সমতায়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর গতি বাড়ানো এখন সময়ের দাবি।
বিগত কয়েক দশকে নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হলেও বিশ্বজুড়ে বৈষম্য ও অসমতা এখনও প্রকট। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থান, সম্পদের মালিকানা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। সমকালীন বৈশ্বিক সমতায়নের অগ্রগতির হার যদি এমনই ধীরগতিতে চলতে থাকে তাহলে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের রিপোর্ট অনুযায়ী লিঙ্গ সমতা অর্জনে ১৩১ বছর সময় লাগবে। এত দীর্ঘ সময় আমরা অপেক্ষা করতে পারি না। লিঙ্গবৈষম্য দূর ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় এখনই আমাদের ত্বরান্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
নারীর ক্ষমতায়ন শুধু নৈতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, এটি অর্থনৈতিক ও উন্নয়নমূলক প্রয়োজনও বটে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে নারীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য নিরসন ও টেকসই উন্নয়নের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্যমতে, যদি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ সমানভাবে নিশ্চিত করা হয় তাহলে বৈশ্বিক জিডিপি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। আমরা যদি ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী সম্পূর্ণ জেন্ডার সমতা আনতে পারি তাহলে বিশ্ব জিডিপি ২৮ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। শুধু জেন্ডার বৈষম্যের কারণে মানব পুঁজি সম্পদের ক্ষতি হতে পারে ১৬০.
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন যে কোনো দেশ, সমাজ বা পরিবারের প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকাশক্তি। একটি সমাজ তখনই উন্নত হতে পারে যখন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। তবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত না হলে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাবে না। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ রয়েছে, যেখানে প্রায় ৮০ শতাংশ গার্মেন্টস কর্মী নারী। কিন্তু তারা এখনও ন্যায্য মজুরি, মাতৃত্বকালীন সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। তাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রথমত, নারীদের জন্য সমান মজুরি ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা ও উদ্যোক্তা সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। তৃতীয়ত, নারীদের ডিজিটাল দক্ষতা ও প্রযুক্তি শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। চতুর্থত, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা গেলে নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়বে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ টেকসই উন্নয়নের চাবিকাঠি। শিক্ষা ছাড়া কোনো সমাজই এগোতে পারে না, আর নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ মানেই একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বিনিয়োগ। বাংলাদেশে নারী শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও প্রযুক্তিগত শিক্ষা, কারিগরি দক্ষতা ও উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ এখনও সীমিত। বিশেষ করে স্টেম (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথমেটিকস) শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ কম। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রথমত, মেয়েদের জন্য স্টেম ও কারিগরি শিক্ষায় প্রবেশ সহজ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। তৃতীয়ত, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে হবে। চতুর্থত, পরিবার ও সমাজে মেয়েদের উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যা বাস্তবায়ন করা গেলে নারীদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বাড়বে, যা দেশের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
নারীর ক্ষমতায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা। বাংলাদেশেও এ ধরনের সহিংসতা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আইন থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের অভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনের কঠোর প্রয়োগ, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীদের আত্মরক্ষা ও আইনগত প্রশিক্ষণ এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি। আইন প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব, যেখানে তারা নির্ভয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন।
নারীদের কর্মসংস্থান বাড়লেও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে তারা এখনও পিছিয়ে। বিশ্বব্যাপী মাত্র ১০ শতাংশ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নারী, আর বাংলাদেশে সরাসরি নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যের সংখ্যা কম। নারীদের নেতৃত্বে এগিয়ে আনতে পদোন্নতির সুযোগ নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ বাড়ানো এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা জরুরি।
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়; এটি আমাদের সবার দায়িত্ব। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবর্তন শুরু করতে হবে পরিবার থেকে– সন্তান লালন-পালনে লিঙ্গবৈষম্য দূর করা, কর্মস্থলে সমান সুযোগ তৈরি করা এবং নিয়োগ, পদোন্নতি ও নেতৃত্বে নারীদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। গণমাধ্যম ও সামাজিক প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা একদিনে অর্জনযোগ্য নয়; এটি একটি চলমান আন্দোলন। নারী দিবস আমাদের আহ্বান জানায়– এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে সক্রিয় হলে লিঙ্গ মসমতা আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নেবে। নারীরা এগোলে সমাজ এগোয়; সমাজ এগোলে দেশও এগিয়ে যায়।
মো. রমজান আলী: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার ফর এডুকেশন, ইউনেস্কো
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর ল ঙ গ সমত পদক ষ প আম দ র র জন য রহণ ক গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
স্বপ্নে হলো দেখা
কারও স্বপ্নে আপনি প্রবেশ করেছেন বা অন্য কেউ আপনার স্বপ্নে এসেছেন, তাও তখন, যখন আপনি স্বপ্নে নিজের ইচ্ছায় পরিচালিত হচ্ছেন– এমনটা কি কখনও ভেবেছেন? বিজ্ঞানীদের দাবি– একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এমনটিই করেছেন তারা, যেখানে দু’জন মানুষের মধ্যে স্বপ্নের ভেতরে যোগাযোগ সম্ভব হয়েছে। এমনটি সত্যি হয়ে থাকলে এটিই হবে প্রথমবারের মতো ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখার সময় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ– যা এখনও বিজ্ঞানের কাছে এক রহস্য।
ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক নিউরোটেক কোম্পানি রেমস্পেস, যারা মূলত লুসিড ড্রিমিং (স্বপ্নের মধ্যে সচেতন থাকা) ও ঘুমের বিকাশ নিয়ে কাজ করে। তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে দু’বার দু’জন ব্যক্তিকে লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করিয়ে একটি সাধারণ বার্তা আদান-প্রদান করাতে পেরেছে।
কল্পকাহিনির মতো এক স্বপ্নপরীক্ষা
রেমস্পেসের গবেষকরা দাবি করেন, তারা এমন এক প্রযুক্তি তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে দু’জন ব্যক্তি লুসিড ড্রিম অবস্থায় একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। স্বপ্ন এখনও মানবতার জন্য এক বিশাল রহস্য। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন উজ্জ্বল ভাবনা, দৃশ্য, অনুভূতি ও কল্পনা গঠিত হয়। আমরা প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখি, যদিও ঘুম ভাঙার পর তা মনে থাকে না। বিজ্ঞানীরা বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে মস্তিষ্ক আমাদের অনুভূতি ও চিন্তা প্রক্রিয়া করে, স্মৃতি দর্শন করে এবং বাস্তব জীবনে এর প্রস্তুতি নেয়।
স্বপ্নের মাধ্যমে যোগাযোগ
রেমস্পেসের দাবি, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন, তখন রেমস্পেসের তৈরি বিশেষ যন্ত্র ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে দূর থেকে তাদের মস্তিষ্কের তরঙ্গ, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস রেকর্ড করে। যখন তাদের সার্ভার শনাক্ত করে যে, একজন অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করেছে, তখন তারা একটি র্যানডম শব্দ তৈরি করে সেটি কানে দেওয়া ইয়ারবাডের মাধ্যমে তাকে শুনিয়ে দেয়। কোম্পানি শব্দটি প্রকাশ করেনি– এটি শুধু ওই ব্যক্তি জানতেন এবং স্বপ্নে পুনরায় উচ্চারণ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর সেই প্রতিক্রিয়া সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয়। আট মিনিট পরে, দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারী লুসিড ড্রিমে প্রবেশ করলে, সার্ভার থেকে তাঁকে সেই রেকর্ডকৃত বার্তা পাঠানো হয়, যা তিনি ঘুম থেকে উঠে বলেন এভাবেই স্বপ্নে প্রথমবারের মতো একটি ‘যোগাযোগ’ সম্পন্ন হয়। রেমস্পেস জানায়, ‘আমরা একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক অর্জন করেছি, এতে লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে মানবযোগাযোগ ও সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।’
লুসিড ড্রিম কী?
লুসিড ড্রিম তখন হয়, যখন কোনো ব্যক্তি স্বপ্ন দেখার সময় সচেতন থাকেন যে, তিনি স্বপ্ন দেখছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানায়, এটি সাধারণত ঘুমের ‘র্যাপিড আই মুভমেন্ট’ ধাপে ঘটে, যেখানে সবচেয়ে প্রাণবন্ত স্বপ্ন দেখা যায়। এ অবস্থায় মানুষ নিজের ইচ্ছেমতো স্বপ্নে কাজ করতে পারেন, পরিকল্পিতভাবে কিছু করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেন, ‘যে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– যে তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা কতটা নির্ভরযোগ্য। অর্থাৎ, এই গবেষণা অন্য কেউ অন্য কোনো জায়গায় করলে একই ফল দেবে কিনা। ঘুমের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টা নিশ্চিত হতে আরও গবেষণার দরকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, মোটা দাগে ঘুমের দুইটা ভাগ আছে– এক. ননরেম ঘুম, যখন আমাদের চোখের মণি নড়ে না; দুই. রেম ঘুম, এ পর্বে আমাদের চোখের মণি নড়াচড়া করে। এ সময়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নও দুই রকমের। লুসিড ড্রিম; যে স্বপ্নগুলো একদম বাস্তবের মতো জলজ্যান্ত। এমন এক স্বপ্ন যা দেখার পর ঘুম থেকে উঠে মনে হবে আসলেই এমনটি ঘটেছে, এটি বাস্তব। আরেকটি স্বপ্ন হলো নন লুসিড ড্রিম। এ স্বপ্নগুলো অবাস্তব। ঘুম ভাঙার পর বেশির ভাগ সময়েই আমরা স্বপ্নের কথা মনে করতে পারি না। লুসিড ড্রিমের ক্ষেত্রে আমরা তা মনে রাখতে পারি।’
প্রথম পরীক্ষার সাফল্যের পর, রেমস্পেসের সিইও মাইকেল রাদুগা (৪০) দাবি করেন, গত ৮ অক্টোবর আরও দু’জনের সঙ্গে একই ধরনের যোগাযোগ সম্ভব হয়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আগে স্বপ্নে যোগাযোগ ছিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, আগামী দিনে এটা এতটাই স্বাভাবিক হয়ে যাবে যে, আমাদের জীবনে এটি ছাড়া কল্পনাই করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা আরইএম ঘুম এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়, লুসিড ড্রিম আগামী দিনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পর বড় শিল্প হতে যাচ্ছে।’
যদিও রেমস্পেস এখনও জানায়নি তাদের প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে, তবে তারা সম্প্রতি ফেসবুকে জানিয়েছে, ‘লুসিড ড্রিমে যোগাযোগ’ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত হয়েছে এবং তা একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে পর্যালোচনার জন্য জমা দেওয়া হয়েছে– প্রকাশ হতে সময় লাগবে দুই থেকে ছয় মাস। তবে এখনও এই প্রযুক্তির কোনো বাহ্যিক বৈজ্ঞানিক পর্যালোচনা হয়নি এবং অন্য কেউ এ পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করতে পারেননি।
রাদুগা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম আমেরিকান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে বলেছেন, তাঁর প্রত্যাশা– এ ধরনের প্রযুক্তি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের মতো সাধারণ হয়ে যাবে। ‘মানুষ নিজেদের জীবন এসব ছাড়া কল্পনা করতে পারবে না, কারণ এটি তাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল, আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলবে। এটি মানুষের জীবনমান এমনভাবে বাড়িয়ে দেবে যে, তারা এটি ছাড়া নিজেদের কল্পনাই করতে পারবে না। আমাদের শুধু এগুলো উন্নত করতে হবে– এটি শুধু সময়ের ব্যাপার।’
২০০৭ সালে রাশিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় রেমস্পেস এবং ছয় মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়, এখন লুসিড ড্রিমিংয়ে অভিজ্ঞ বা আগ্রহী নতুন অংশগ্রহণকারীদের খুঁজছে।
স্বপ্ন-যোগাযোগের ভবিষ্যৎ
ঘুমের মধ্যে মানুষের যোগাযোগ একসময়ে নিছক কল্পবিজ্ঞান মনে হতো। এখন বিজ্ঞান এটিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। কল্পনা করুন– হাতের ফোনে মেসেজ না পাঠিয়ে, সরাসরি কারও স্বপ্নে ঢুকে তাঁর সঙ্গে ঘুমের মধ্যে সময় কাটানো, কথা বলা যাচ্ছে।
এই ভাবনা যেন স্বপ্নের মতো। ইতোমধ্যে কিছু কোম্পানি মানুষের চেতনা একটি বিকল্প পরিবেশে স্থানান্তরের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। একবার তা সফল হলে, সম্ভাবনার কোনো শেষ থাকবে না– মানবসভ্যতার বিবর্তন নতুন ধাপে প্রবেশ করবে।
লুসিড ড্রিমের মাধ্যমে নানারকম প্রয়োগ সম্ভব– শরীরগত সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে দক্ষতা অর্জন পর্যন্ত। আগের এক গবেষণায় রেমস্পেস দেখিয়েছে, মুখের পেশিতে সূক্ষ্ম সাড়া থেকে স্বপ্নে উচ্চারিত শব্দ শনাক্ত করা সম্ভব। এখান থেকেই ‘রেমিও’ নামে এক স্বপ্ন-ভাষার জন্ম, যা সেন্সরের মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়।
লুসিড ড্রিমে যে র্যানডম শব্দ শোনানো হয় অংশগ্রহণকারীদের, সেখানে ‘রেমিও’ স্বপ্ন-ভাষা ব্যবহার করা হয়। রেমস্পেস জানায়, এই সাফল্য এসেছে পাঁচ বছরের গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের পর। গবেষকরা প্রথম পরীক্ষার পর থেকে প্রতিটি পর্যায়ে প্রযুক্তি আরও উন্নত করেছেন। এবার তাদের লক্ষ্য আরও বড়– লুসিড ড্রিমে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ। যদিও এটি অনেক জটিল, গবেষকদের আশা, আগামী কয়েক মাসেই তারা সফল হবেন।
শেষ কথা
যেখানে স্বপ্নে যোগাযোগ এতদিন ছিল সায়েন্স ফিকশন সিনেমা বা উপন্যাসের বিষয়; এই পরীক্ষা সেটিকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। যদি অন্যান্য বিজ্ঞানী ও প্রতিষ্ঠান একে যাচাই করে, তবে এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ধরনই বদলে দিতে পারে– যেখানে ঘুমের মাঝেও আমরা অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারব। এখনই অতি উত্তেজিত না হয়ে সতর্ক আশাবাদী হওয়াই ভালো– প্রযুক্তিটির সাফল্য এখনও গবেষণাগারে পর্যালোচনার অপেক্ষায়; তাতেও একে পুরোপুরি বাস্তব করতে দশককাল লেগে যেতে পারে। v