ভাতা, পুনর্বাসন কার্যক্রম নিয়ে হতাশা
Published: 15th, March 2025 GMT
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে আহতদের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে গতি আসছে না। এদিকে আহতদের চিকিৎসা ও সহায়তার জন্য করা ক্যাটেগরি নিয়ে অসন্তুষ্ট অনেকেই। কারও কারও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন হলেও অর্থ সংকটে বিদেশ পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে।
আহতের অধিকাংশই ছিলেন উপার্জনক্ষম। তাদের কারও কারও পরিবারের অবস্থা এখন শোচনীয়। পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও মাসিক ভাতার কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ তারা। বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও চিকিৎসাধীন আড়াইশ আন্দোলনকারী। ছুটি দিলেও পুনর্বাসন তালিকা থেকে বাদ পড়ার শঙ্কায় হাসপাতাল ছেড়ে যাচ্ছেন না অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জনবলের স্বল্পতা ও তথ্য যাচাইয়ে বিলম্ব হওয়ার কারণে তালিকা প্রস্তুত ও পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করায় বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। তবে হাসপাতালে আহতদের বিশেষ বিবেচনায় স্মার্ট জাতীয় পত্র দেওয়া হয়েছে। এ মাসেই মিলবে জুলাই যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা। বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে হেলথ কার্ড। দ্রুত শুরু হবে পুনর্বাসন কার্যক্রম।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছরের মতো এবারও পালিত হচ্ছে বিশ্ব পঙ্গু দিবস। আজ শনিবার এই দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ক্ষতি প্রতিরোধ ও রূপান্তরিত জীবন’। তবে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে দিবসটি খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয় না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদের চূড়ান্ত তালিকা করতে গত নভেম্বরে সরকার ‘গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত বিশেষ সেল’ করে। গত ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে আন্দোলনে আহত, নিহত বা নিখোঁজ, বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু কিংবা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থেকে কোনোভাবে মারা গেছেন– এমন ব্যক্তিদের নাম তালিকাভুক্ত করার কথা বিশেষ সেলের।
গত ২১ ডিসেম্বর এ সেল ৮৬২ শহীদ ও ১১ হাজার ৫৫১ আহতের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন গড়ে ওঠে। গত ৪ মার্চ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের সহায়তায় মোট ৮৩ কোটি ৬৩ হাজার টাকা ৫ হাজার ৪২৯টি পরিবারের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা ৭০৫টি শহীদ পরিবারের মাঝে এবং ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ৪ হাজার ৭২৪ আহত ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ) গতকাল বলেন, ফাউন্ডেশনের জনবলের স্বল্পতা ও আবেদনকারী সবার তথ্য যাচাই করতে গিয়ে প্রকৃত ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আড়াইশ
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও ২৫০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন আরও ৩০ জন। বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন আটজন। দেশে চিকিৎসাধীনদের সবচেয়ে বেশি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) আছেন ১০৬ জন এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১২০ জন চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশের অবস্থা গুরুতর।
চিকিৎসাসেবায় শ্রেণিকরণে অসন্তুষ্ট
আহতদের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতে তিনটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের ‘এ’, মাঝারি আহতদের ‘বি’ ও কম ঝুঁকিপূর্ণদের ‘সি’ ভাগে ভাগ করে তাদের চিকিৎসা চলছে। এসব ক্যাটেগরি তৈরির প্রক্রিয়া ও সমতা নিয়ে অসন্তোষও রয়েছে আহতদের মধ্যে। আহতরা বলছেন, এই ক্যাটেগরি ত্রুটিপূর্ণ। গতকাল দুপুরে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় মো.
চিকিৎসাধীন আতিক হাসান বলেন, ‘আমি আহত হয়েছিলাম মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে। ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হই এবং সেদিনই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রায় চার মাস ধরে পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) অবস্থান করছি। এ পর্যন্ত কোনো তালিকায় আমার নাম আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাদের অবস্থা বেশি জটিল, তাদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তারা প্রশাসনের অবহেলা দেখছেন। অনেক সময় ভালোভাবে ফিজিওথেরাপি করা হয় না, প্রয়োজনীয় সেবাও দেওয়া হয় না।’
হাসপাতালটিতে আন্দোলনে আহত ৮৮৮ জনকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬৯৬ জন গুলিতে আহত। ২৯২ জন বিভিন্নভাবে আহত। ২২ জনের পা, কয়েকজনের হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। আটজনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, জুলাই আন্দোলনে আহত ১০৬ রোগী ভর্তি আছেন। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে জুলাই আন্দোলনের আহতদের জন্য বিশেষ কক্ষ রয়েছে। আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আহত অনেকের অবস্থা গুরুতর, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন।
ছুটি দিলেও হাসপাতাল ছাড়ছেন আহতরা
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ১২০ জন চিকিৎসাধীন। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩ জনের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ৫০৩ জনের চোখ নষ্ট হয়েছে। দুই চোখ নষ্ট হয়েছে ৪৫ জনের। আহতদের মধ্যে সুস্থ হওয়ায় গত মঙ্গলবার ৩২ জনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। তবে একজন ছাড়া কেউই হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক বলেন, আন্দোলনকারীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হেলথ কার্ড প্রস্তুত হচ্ছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এককালীন আর্থিক অনুদানের কথা রয়েছে। এই কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। আহতরা মনে করছেন, এখনই হাসপাতাল ছেড়ে গেলে এসব তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন।
সার্বিক বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিব সাইদুর রহমান বলেন, আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দিচ্ছে সরকার। অন্য কার্যক্রমও দ্রুত শুরু হবে। এ মাসের মধ্যে জুলাই যোদ্ধাদের মাসিক ভাতা চালু করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র র অবস থ আহতদ র আর থ ক র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।