জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার এবং নির্বাচন নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছে রাজনৈতিক দলগুলো। সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে, টেকসই গণতন্ত্র এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এনসিপির চাওয়া গণপরিষদের সংবিধান সংস্কার। সংস্কার কমিশনগুলো বৈঠকে সংস্কারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার প্রয়োজনীয়। জাতিসংঘ এতে পাশে থাকবে।
সংস্কার কীভাবে, কতটুকু হবে, তা জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোকে একমত হয়ে করতে হবে।’ পর্তুগালের উদাহরণ দিয়ে তিনি আশাবাদ জানিয়েছেন, জনগণ এবং রাজনৈতিক দলগুলো মিলে এই পথ পাড়ি দিতে পারবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের আয়োজনে বৈশ্বিক সংস্থাটির মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে সাতটি দল অংশ নেয়। রাজনৈতিক নেতারাও বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে নিজ নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
বৈঠকে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ; জামায়াতের নায়েবে আমির ডা.
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও ছিলেন। বৈঠকে সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা এবং চলমান কার্যক্রম জাতিসংঘ মহাসচিবের বৈঠকে তুলে ধরা হয়। ছিলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী। সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন কমিশন সমন্বয়কারী তথা সরকারপ্রধানের বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও ছিলেন বৈঠকে।
মনির হায়দার সমকালকে জানিয়েছেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকা জরুরি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্ষম করতে হবে। নির্বাহী এবং বিচার বিভাগের সত্যিকারের পৃথক্করণ জরুরি।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটে। এই স্বৈরশাসক ভারতে পালিয়ে গেছেন। ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়া পর গণঅভ্যুত্থানে চালানো হত্যাযজ্ঞ জাতিসংঘকে তদন্তের আহ্বান জানায় ইউনূস সরকার। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান অনুযায়ী, অভ্যুত্থান দমনে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে শেখ হাসিনা সরকার। সহযোগীর ভূমিকায় ছিল আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো। শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল হোতা।
অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫টি কমিশন গঠন করেছে। ছয়টি কমিশনের দেওয়া সংস্কারের সুপারিশ নিয়ে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা শুরু করেছে। অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব দল সংস্কারকে সমর্থন করলেও পদ্ধতি এবং সময়সীমা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
দ্রুত নির্বাচন চাইল বিএনপি
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতিসংঘের উদ্যোগে গোলটেবিল আলোচনা আয়োজন করা হয়েছিল। এতে কমিশনপ্রধানরা ছিলেন। সংস্কারের যেসব বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে, তা জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানানো হয়েছে।’
বিএনপি কী বলেছে– প্রশ্নে দলটির মহাসচিব বলেছেন, ‘আমরা এতদিন যে কথা বলে আসছি, তাই বলেছি। সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। সংস্কারের কথা বিএনপিই আগে বলেছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক যেসব বিষয় আছে, সেসব সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন করা এবং সংসদের মাধ্যমে বাকি বিষয়গুলো করতে হবে। আর সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। সেই বিষয়গুলো বলে এসেছি।’
জাতিসংঘের মহাসচিব কিছু বলেছেন কিনা– প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা– প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। তারা যা চাচ্ছে, সব তাদের দিয়েছি। এরই মধ্যে একটি বৈঠক হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবকে কেন সময়সীমা দিতে যাব?’
বৈঠকে সংস্কার কমিশনগুলোর প্রধানরা নিজ নিজ কমিশনের সংস্কারের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতিসংঘ বলেছে, সংস্কার ও নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কী সংস্কার হবে, তা বাংলাদেশই ঠিক করবে। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সরকার আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা করছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পৃথিবীর মধ্যে নজির সৃষ্টি করবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন, টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্য চায় জামায়াত
ডা. তাহের বলেন, জামায়াত সংস্কারের কথা বলেছে জাতিসংঘ মহাসচিবকে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে বলেছি। টেকসই গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে কথা বলেছি। জাতিসংঘের মহাসচিব জামায়াতের অধিকাংশ বক্তব্য সমর্থন করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবেন। গুতেরেস সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ জানিয়েছেন।
গণপরিষদে সংবিধান সংস্কার চায় এনসিপি
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণহত্যার বিচার এবং রাষ্ট্র সংস্কার অভ্যুত্থানের অঙ্গীকার। অন্তর্বর্তী সরকারেরও এ বিষয়ে জনগণের আছে অঙ্গীকার রয়েছে। মৌলিক সংস্কারের ভিত্তি এই সরকারের সময়ে তৈরি করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে, যা হবে জুলাই সনদ। এতে সবাইকে সই করতে হবে।
নাহিদ বলেন, ‘এনসিপির অবস্থান হলো, গণপরিষদের মাধ্যমেই সংবিধান সংস্কার করতে হবে। সংসদের মাধ্যমে হলে সংস্কার টেকসই হবে না। দলীয় অবস্থান থেকে আমাদের কথা বলেছি। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিজেরাই সমঝোতায়, ঐকমত্যে আসে। গণতন্ত্রের যে মূল ধারণা, তা মাথায় রেখে যাতে একসঙ্গে কাজ করি। তিনি এ প্রত্যাশা করেছেন।’
নির্বাচন সম্পর্কে নাহিদ বলেন, ‘সংস্কারবিহীন নির্বাচন কাজে দেবে না। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এতে একমত। মতপার্থক্যগুলো হচ্ছে, কোন সংস্কার কখন হবে, নির্বাচনের আগে কতটুকু হবে, নির্বাচনের পরে কতটুকু হবে। জুলাই সনদের মাধ্যমে সংস্কার হলে মতপার্থক্য দূর হবে, ঐকমত্যে আসতে পারব।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জুলাই গণহত্যার বিচার নিশ্চিতে জাতিসংঘের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য নিয়ে গণসংহতির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।’
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সংস্থাটির সাহায্য প্রয়োজন। এখনও জাতিসংঘের তিনটি প্রতিষ্ঠানে শেখ হাসিনার আত্মীয়রা কাজ করছেন। এগুলো জানানো হয়েছে মহাসচিবকে।’
জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, ইউএনএইচসিআরের আবাসিক প্রতিনিধি সুম্বুল রিজভী, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন, ডব্লিউএফপির আবাসিক প্রতিনিধি ডমিনিকো স্কেলপেনি, ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, ডব্লিউএইচওর আবাসিক প্রতিনিধি বর্ধন জং রানা, ইউএনওপিএসের আবাসিক প্রতিনিধি সুধীর মুরালিধরন, আইওএমের মিশন প্রধান ল্যানস বনেউ প্রমুখ বৈঠকে ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ ন ত ল গণতন ত র সরক র র ঐকমত য দ বল ন বল ছ ন ইসল ম ফখর ল এনস প ব এনপ ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে সরকার অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।
গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি।
এর আগে গত রোববার বিকেলে মানবিক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো, তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মানবিক করিডোরের ব্যাপারে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই ইস্যুতে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে সরকার কী করছে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এর পর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা জাতির সামনে তুলে ধরবে।
বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যেখানে মিয়ানমারে একটি যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে; দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে; আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে– এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। এ অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনও বিষয়টি (রাখাইনে মানবিক করিডোর) পুরোপুরি জানি না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সরকার একতরফাভাবে দেশের জনগণ তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা শুনেছি, মানবিক কারণে তারা এই করিডোর দেবে। কিন্তু সেটা কীভাবে দেবে, তা জানি না। এটাও শুনেছি– কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো কী, জানি না। সরকারের উচিত বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো। আমরাও এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। এর পর আমরা দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে অবস্থান জানাব।
গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। তারা (সরকার) একক সিদ্ধান্তে মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ করে দিচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত, এটাই বাংলাদেশের অবস্থান: প্রেস সচিব
প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত– এটাই বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি বলেন, সংকটকালে অন্য দেশকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বরাবরই ভূমিকা রয়েছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের সহায়তা। আমাদের আশঙ্কা, রাখাইন থেকে আরও মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমারা সামাল দিতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল রাখতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হয়ে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মতি সরকার। যদিও রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যথাসময়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।
হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ
করিডোর দেওয়ার খবরে প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে– দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না।
জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পরামর্শ চরমোনাইয়ের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কুমিল্লা মহানগরের শূরা সম্মেলনে বলেছেন, বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।
স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে: সিপিবি
মানবিক করিডোরের খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিবি। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লঙ্ঘন করে এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে।
এটি জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল: বাসদ
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল।
জাতীয় ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি: গণসংহতি আন্দোলন
মানবিক করিডোর বিষয়ে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলেছে, আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের বরাত দিয়ে দলটি বিবৃতিতে জানায়, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে বিশদ আলাপ আলোচনা ও ঐকমত্য প্রয়োজন।