প্রতিদিন গড়ে ৩০ শিশু হত্যা করছে ইসরায়েলি বাহিনী
Published: 27th, March 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল প্রতি ৪৫ মিনিটে এক শিশুকে হত্যা করছে। সে অনুযায়ী যুদ্ধের ৫৩৫ দিনে গড়ে প্রতিদিন তারা ৩০ শিশুকে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় যে অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৭ হাজার ৪০০ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। আরও অনেক শিশু ভবনের ইট-পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের বিরুদ্ধে বিরল বিক্ষোভ হয়েছে।
বুধবার আলজাজিরা জানায়, বেঁচে থাকা গাজার শিশুরা একাধিক যুদ্ধের কারণে ট্রমার মধ্যে রয়েছে। তারা ইসরায়েলের তৈরি করা অবরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে, যা তাদের শৈশবের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৭২০ শিশু তাদের প্রথম জন্মদিন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশু রয়েছে ৩ হাজার ২৬৬ জন। ছয় থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৩২টি।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় বুধবার এক দিনে আরও ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও ১২৪ জন। এতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ১৮৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৮ জন। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ৮৩০ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৮৭ জন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সাম্প্রতিক হামলায় গাজায় নতুন করে ১ লাখ ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গাজায় নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর কেবল এক দিনেই ১৮০ শিশু নিহত হয়। অনেকের মরদেহ ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির কারণে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসকদের চোখের সামনেই মারা যাচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আহতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮ হাজার ব্লাড ইউনিটের প্রয়োজন। খাবার ও পানি শূন্যতার কারণে স্থানীয়রা রক্ত দিতে পারছেন না।
এদিকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় বিরল বিক্ষোভ হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিরা হামাসের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে এ বিক্ষোভ করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ার সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অনেকে যুদ্ধ
বন্ধের দাবি জানান; অনেকে হামাসের বিরোধিতায় স্লোগান দেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন নির্মাণ শ্রমিক আহমেদ আল মাসরি বলেন, ‘যতক্ষণ না এ রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে এবং হামাস দৃশ্যান্তর হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা চালিয়ে যেতে চাই।’ ৩২ বছরের ইব্রাহিম বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বেইত লাহিয়ায় খাবার কিনতে এসেছিলেন। এর পরই বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি বলেন, এ মিছিল হামাসকে যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা ছাড়ার বার্তা দিচ্ছে।
বুধবার বিবিসি জানায়, বিক্ষোভের বিষয়ে হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে এক বিবৃতিতে তারা নতুন করে যুদ্ধ শুরুর জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেছেন। হামাসের সমর্থক এ বিক্ষোভের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তারা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ তাদের অনেক শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। সিনওয়ারকে গাজায় হত্যা করে ইসরায়েল। আর হানিয়াকে হত্যা করা হয় ইরানের রাজধানী তেহরানে। হানিয়া ছিলেন সংগঠনটির রাজনৈতিক শাখার প্রধান। যুদ্ধ চলাকালে যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেক হামাস যোদ্ধাও আছেন।
এদিকে গাজায় আগ্রাসনের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বুধবার সেখানে তারা ফিলিস্তিনিদের ২৪টি গ্রিনহাউস (ফসল উৎপাদনের জন্য তৈরি) গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক কয়েদি। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির শর্তে তাদের মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য শ শ হত য ইসর য় ল র ত হয় ছ ন র র পর
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।