ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল প্রতি ৪৫ মিনিটে এক শিশুকে হত্যা করছে। সে অনুযায়ী যুদ্ধের ৫৩৫ দিনে গড়ে প্রতিদিন তারা ৩০ শিশুকে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর গাজায় যে অর্ধলাখের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৭ হাজার ৪০০ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬০০ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। আরও অনেক শিশু ভবনের ইট-পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে, যাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও হামাসের বিরুদ্ধে বিরল বিক্ষোভ হয়েছে।

বুধবার আলজাজিরা জানায়, বেঁচে থাকা গাজার শিশুরা একাধিক যুদ্ধের কারণে ট্রমার মধ্যে রয়েছে। তারা ইসরায়েলের তৈরি করা অবরুদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে, যা তাদের শৈশবের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৭২০ শিশু তাদের প্রথম জন্মদিন পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। দুই থেকে পাঁচ বছরের শিশু রয়েছে ৩ হাজার ২৬৬ জন। ছয় থেকে ১০ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৩২টি। 

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানায়, ইসরায়েলের বিমান হামলায় বুধবার এক দিনে আরও ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও ১২৪ জন। এতে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ১৮৩ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৩ হাজার ৮২৮ জন। ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর ৮৩০ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৮৭ জন। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বলছে, সাম্প্রতিক হামলায় গাজায় নতুন করে ১ লাখ ৪২ হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গাজায় নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর কেবল এক দিনেই ১৮০ শিশু নিহত হয়। অনেকের মরদেহ ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতির কারণে অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসকদের চোখের সামনেই মারা যাচ্ছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আহতদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৮ হাজার ব্লাড ইউনিটের প্রয়োজন। খাবার ও পানি শূন্যতার কারণে স্থানীয়রা রক্ত দিতে পারছেন না।

এদিকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় বিরল বিক্ষোভ হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, মঙ্গলবার ফিলিস্তিনিরা হামাসের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে এ বিক্ষোভ করেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বেইত লাহিয়ার সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। এ সময় অনেকে যুদ্ধ 
বন্ধের দাবি জানান; অনেকে হামাসের বিরোধিতায় স্লোগান দেন। 

বিক্ষোভকারীদের একজন নির্মাণ শ্রমিক আহমেদ আল মাসরি বলেন, ‘যতক্ষণ না এ রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে এবং হামাস দৃশ্যান্তর হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা চালিয়ে যেতে চাই।’ ৩২ বছরের ইব্রাহিম বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বেইত লাহিয়ায় খাবার কিনতে এসেছিলেন। এর পরই বিক্ষোভে যোগ দেন। তিনি বলেন, এ মিছিল হামাসকে যুদ্ধ বন্ধ ও গাজা ছাড়ার বার্তা দিচ্ছে।

বুধবার বিবিসি জানায়, বিক্ষোভের বিষয়ে হামাসের কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে এক বিবৃতিতে তারা নতুন করে যুদ্ধ শুরুর জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দোষারোপ করেছেন। হামাসের সমর্থক এ বিক্ষোভের গুরুত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ করে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর থেকে তারা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ সময়ে ইসমাইল হানিয়া, ইয়াহিয়া সিনওয়ারসহ তাদের অনেক শীর্ষ নেতা নিহত হয়েছেন। সিনওয়ারকে গাজায় হত্যা করে ইসরায়েল। আর হানিয়াকে হত্যা করা হয় ইরানের রাজধানী তেহরানে। হানিয়া ছিলেন সংগঠনটির রাজনৈতিক শাখার প্রধান। যুদ্ধ চলাকালে যেসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেক হামাস যোদ্ধাও আছেন।

এদিকে গাজায় আগ্রাসনের পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামলা-নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। বুধবার সেখানে তারা ফিলিস্তিনিদের ২৪টি গ্রিনহাউস (ফসল উৎপাদনের জন্য তৈরি) গুঁড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক কয়েদি। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির শর্তে তাদের মুক্তি দিয়েছিল ইসরায়েল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য শ শ হত য ইসর য় ল র ত হয় ছ ন র র পর

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী