ব্যস্ত সড়কের এক পাশে রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি ‘ফুড কার্ট’, বাংলায় যাঁকে বলা যায় ‘চলমান খাবারের দোকান’। সেই দোকান থেকে ভেসে আসছে লুচি ভাজার শব্দ আর হালিমের সুগন্ধ। একটু চোখ রাখতেই দেখা গেল, দোকান ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ চাচ্ছেন হালিম, কেউ ছিটা পিঠা, আবার কেউ লুচিসহ আলুর দম। সম্প্রতি নগরের জিইসি মোড় এলাকার বিপণিকেন্দ্র সানমারের সামনে গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য।

ফুড কার্টটির নাম রাখা হয়েছে ‘টম অ্যান্ড জেরি কিচেন’। দোকানটি দুই ভাই–বোনের। তাঁরা হলেন লাকি আক্তার ও মোহাম্মদ তানভীর। লাকি আক্তার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রামের একটি কলেজে বাংলা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। আর তানভীর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন সম্প্রতি। নিজেদের ছোট্ট দোকানটি ঘিরে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত স্টলটিতে সময় দেন দুজন।

কথা বলে জানা গেল, তিন ভাই তিন বোনের মধ্যেই লাকি ও তানভীর সবার ছোট। বাবা নেই, মা গৃহিণী। সংসারের আয় সীমিত, কিন্তু স্বপ্নের পরিধি নয়। তাই দুজনেই ঠিক করেছিলেন, বসে থাকলে চলবে না। নিজেদের কিছু করতে হবে। সেই ইচ্ছা থেকেই গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। তাঁদের ফুড কার্ট থেকে বিক্রি হচ্ছে চিকেন মসলা, মুগডাল, ফিরনি, চিকেন হালিম, আলুর দম, লুচি, কোয়েল পাখির ডিম ও ছিটা পিঠা।

সরেজমিনে লাকি আক্তারের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ছিটা পিঠার খামি বানাতে ব্যস্ত। কাজ করতে করতেই প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের পরিবারের স্বল্প আয়। তাই দীর্ঘদিন ধরেই স্বাবলম্বী হওয়ার তাগাদা ছিল। আগে টিউশন করতেন। এই টিউশনের টাকা আর পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করা টাকার সমন্বয়ে ফুট কার্ট দিয়েছেন।’

স্বপ্নের শুরুটা লুকিয়ে

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিজ বাসাতেই রান্নাবান্না শিখেছিলেন লাকি আক্তার। প্রায়ই তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে খাবারের ব্যবসা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেন। সহপাঠীরাও উৎসাহ দিতেন। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক সহপাঠীর সঙ্গেও ফুড কার্ট দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সেটিও সফল হয়নি। পরে একদিন ছোট ভাই তানভীরের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ভাই আগ্রহ দেখালে ধারদেনা করে বানিয়ে নেন ছোট্ট ফুড কার্ট। পরে ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে দেন ব্যবসাও।

তানভীর বলেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালে নিরুৎসাহিত করতে পারেন—এই ভয়ে তাঁরা শুরুতে পরিবারকে জানাননি। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও থেকে পরিবারের অন্য সদস্যরা জেনেছেন। তবে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন দেখে পরিবারের সদস্যরা নিরুৎসাহিত করছেন না।

লাকি আক্তার যোগ করেন, ‘না জানিয়েই শুরু করেছিলাম। টম অ্যান্ড জেরির মতো আমরা সারাক্ষণ ঝগড়া করি, আবার মিলে যাই। এ জন্য ভাইয়ের পরামর্শে দোকানের নামও টম অ্যান্ড জেরি রেখেছি। প্রথম দিকে পুঁজির অভাব ছিল। কিছু জমানো টাকা আর পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে শুরু করেছি। বাজার করা, রান্নার প্রস্তুতি, দোকান সাজানো—সবকিছুই নিজেরা করছি।’

লাকি প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে মনমতো চাকরি পাননি। কিন্তু এই ছোট্ট ব্যবসা থেকে এত ভালো সাড়া পাবেন ভাবেননি। মানুষজন উৎসাহ দিচ্ছেন। এই ছোট্ট দোকান বড় হবে, হয়তো একদিন নিজেদের রেস্তোরাঁও হবে। এটিই তাঁদের স্বপ্ন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র কর ছ ল ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

আরপিওর বিধানের বৈধতার রায় রিভিউর জন্য হলফনামার অনুমতি

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধানের বৈধতা দিয়ে ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের জন্য হলফনামার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন দুজন আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব আজ সোমবার হলফনামা করার অনুমতি দিয়েছেন।

আবেদনকারী সাত ব্যক্তি হলেন ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন, মেজর (অব.) এস এম হারুনুর রশীদ, কাজী জাহেদুল ইসলাম, আইনজীবী এস এম আজমল হোসেন, মেজর (অব.) নিয়াজ আহমেদ জাবের, মেজর (অব.) মো. জিয়াউল আহসান ও সালাহ উদ্দিন।

আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ মামলায় আবেদনকারীরা পক্ষ ছিলেন না। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন দায়েরের জন্য হলফনামা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন তাঁরা। চেম্বার আদালত হলফনামা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছেন। আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে শিগগিরই রিভিউ আবেদন করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২(৩ক)(ক) বিধান অনুযায়ী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যুক্ত করে দিতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতিপূর্বে জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে ওই তালিকা প্রদানের প্রয়োজন হবে না।

আইনজীবীর তথ্য অনুসারে, ঢাকার একটি আসন থেকে ২০০৭ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র নেন। পরে নির্বাচনের ওই তারিখ পিছিয়ে যায়। অন্যদিকে ২০০৮ সালে আরপিও দফা ১২(৩ক)–তে সংশোধনী আনা হয়। এই বিধান সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদ ও আরপিওর ১২(১) ধারার পরিপন্থী উল্লেখ করে মাহবুব আহমেদ চৌধুরী ২০১০ সালে হাইকোর্ট রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ (খারিজ) করে রায় দেন। দফা (৩ক) সংবিধান পরিপন্থী নয় বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন রিট আবেদনকারী। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় দেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসংবলিত স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা মনোনয়নের সঙ্গে যুক্ত করাসংক্রান্ত আরপিওর ১২(৩ক)–তে বেআইনি কিছু পাননি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে দুই আইনজীবীসহ সাত ব্যক্তি আবেদন করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী ওমর ফারুক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে ভোটারের গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে। ভোটার কোন প্রার্থীকে ভোট দেবেন বা দেবেন না, এটি একান্তই তাঁর চিন্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার। সিক্রেট ব্যালটে হামলা হলে ভোট বাতিলও হয়। সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। রাজনৈতিক দল হলে ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন লাগবে না, অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে গেলে লাগবে অর্থাৎ একই মনোনয়নপত্র ঘিরে দ্বৈত বিধান। ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকার ওই বিধানের মাধ্যমে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা সংবিধান সমর্থন করে না এবং ভোটারের গোপনীয়তারও লঙ্ঘন—এসব যুক্তি তুলে ধরে আবেদনটি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ