ছোট্ট ফুড কার্ট ঘিরে স্বপ্নপূরণের আশা ভাই-বোনের
Published: 29th, March 2025 GMT
ব্যস্ত সড়কের এক পাশে রাখা হয়েছে ছোট্ট একটি ‘ফুড কার্ট’, বাংলায় যাঁকে বলা যায় ‘চলমান খাবারের দোকান’। সেই দোকান থেকে ভেসে আসছে লুচি ভাজার শব্দ আর হালিমের সুগন্ধ। একটু চোখ রাখতেই দেখা গেল, দোকান ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ চাচ্ছেন হালিম, কেউ ছিটা পিঠা, আবার কেউ লুচিসহ আলুর দম। সম্প্রতি নগরের জিইসি মোড় এলাকার বিপণিকেন্দ্র সানমারের সামনে গিয়ে দেখা গেল এই দৃশ্য।
ফুড কার্টটির নাম রাখা হয়েছে ‘টম অ্যান্ড জেরি কিচেন’। দোকানটি দুই ভাই–বোনের। তাঁরা হলেন লাকি আক্তার ও মোহাম্মদ তানভীর। লাকি আক্তার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন চট্টগ্রামের একটি কলেজে বাংলা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। আর তানভীর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন সম্প্রতি। নিজেদের ছোট্ট দোকানটি ঘিরে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত স্টলটিতে সময় দেন দুজন।
কথা বলে জানা গেল, তিন ভাই তিন বোনের মধ্যেই লাকি ও তানভীর সবার ছোট। বাবা নেই, মা গৃহিণী। সংসারের আয় সীমিত, কিন্তু স্বপ্নের পরিধি নয়। তাই দুজনেই ঠিক করেছিলেন, বসে থাকলে চলবে না। নিজেদের কিছু করতে হবে। সেই ইচ্ছা থেকেই গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করেন খাবারের ব্যবসা। তাঁদের ফুড কার্ট থেকে বিক্রি হচ্ছে চিকেন মসলা, মুগডাল, ফিরনি, চিকেন হালিম, আলুর দম, লুচি, কোয়েল পাখির ডিম ও ছিটা পিঠা।
সরেজমিনে লাকি আক্তারের সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ছিটা পিঠার খামি বানাতে ব্যস্ত। কাজ করতে করতেই প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের পরিবারের স্বল্প আয়। তাই দীর্ঘদিন ধরেই স্বাবলম্বী হওয়ার তাগাদা ছিল। আগে টিউশন করতেন। এই টিউশনের টাকা আর পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করা টাকার সমন্বয়ে ফুট কার্ট দিয়েছেন।’
স্বপ্নের শুরুটা লুকিয়েপরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নিজ বাসাতেই রান্নাবান্না শিখেছিলেন লাকি আক্তার। প্রায়ই তিনি সহপাঠীদের সঙ্গে খাবারের ব্যবসা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতেন। সহপাঠীরাও উৎসাহ দিতেন। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক সহপাঠীর সঙ্গেও ফুড কার্ট দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে সেটিও সফল হয়নি। পরে একদিন ছোট ভাই তানভীরের সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ভাই আগ্রহ দেখালে ধারদেনা করে বানিয়ে নেন ছোট্ট ফুড কার্ট। পরে ২৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে দেন ব্যবসাও।
তানভীর বলেন, পরিবারের অন্য সদস্যদের জানালে নিরুৎসাহিত করতে পারেন—এই ভয়ে তাঁরা শুরুতে পরিবারকে জানাননি। সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও থেকে পরিবারের অন্য সদস্যরা জেনেছেন। তবে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন দেখে পরিবারের সদস্যরা নিরুৎসাহিত করছেন না।
লাকি আক্তার যোগ করেন, ‘না জানিয়েই শুরু করেছিলাম। টম অ্যান্ড জেরির মতো আমরা সারাক্ষণ ঝগড়া করি, আবার মিলে যাই। এ জন্য ভাইয়ের পরামর্শে দোকানের নামও টম অ্যান্ড জেরি রেখেছি। প্রথম দিকে পুঁজির অভাব ছিল। কিছু জমানো টাকা আর পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে শুরু করেছি। বাজার করা, রান্নার প্রস্তুতি, দোকান সাজানো—সবকিছুই নিজেরা করছি।’
লাকি প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির চেষ্টা করেছিলেন। তবে মনমতো চাকরি পাননি। কিন্তু এই ছোট্ট ব্যবসা থেকে এত ভালো সাড়া পাবেন ভাবেননি। মানুষজন উৎসাহ দিচ্ছেন। এই ছোট্ট দোকান বড় হবে, হয়তো একদিন নিজেদের রেস্তোরাঁও হবে। এটিই তাঁদের স্বপ্ন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র কর ছ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এনআরবিসি ব্যাংকের টাউন হল মিটিং অনুষ্ঠিত
এনআরবিসি ব্যাংকের কুমিল্লা জোনে টাউন হল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ফেনীর একটি হোটেল অনুষ্ঠিত টাউন হল মিটিংয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. তৌহিদুল আলম খান, ডিএমডি ও সিএফও হারুনুর রশীদ, কুমিল্লা জোনাল হেড কাজী মোহাম্মদ জিয়াউল করীমসহ শাখা-উপশাখাগুলোর সব স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
সাউথইস্ট ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ
ঋণ খেলাপি মামলা করায় ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধরের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চেয়ারম্যান মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, “কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর ও ফেনীর সমন্বয়ে গঠিত কুমিল্লা জোনের বিদ্যমান শ্রেণিকৃত ঋণ ৫ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির অনুসরণ, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।অন্যদিকে ঋণশৃঙ্খলা অনুসরণের মাধ্যমে গুণগত মানসম্পন্ন সম্পদ বাড়াতে হবে। ঋণ আদায় বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইনগত পদ্ধতির প্রয়োগ করতে হবে। এতে কর্পোরেট সুশাসন ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত হবে এবং সাথে সাথে ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য সূচকে অগ্রগতি হবে।”
তিনি আরো বলেন, “সুদবিহীন ও স্বল্প সুদের আমানতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে তহবিল ব্যয় কমিয়ে আনা এবং সিএমএসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে।”
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. তৌহিদুল আলম খান বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত আমাদের ব্যাংকের বিপুলসংখ্যক শাখা-উপশাখা রয়েছে। কুমিল্লায় বড় শিল্পের পাশাপাশি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) রয়েছে। এছাড়া মৎস্য চাষ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটছে কুমিল্লায়।এই অঞ্চলের শাখা ও উপশাখাগুলোর মাধ্যমে এসব খাতের উন্নয়নে সার্বিক সেবা কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসীদের তাদের প্রয়োজন বিবেচনা করে ব্যাংকিং সেবা বিস্তার ঘটাতে হবে।”-বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা/এসবি