পদ্মা ও পার্শ্ববর্তী যমুনা নদীতে পানি বাড়ায় প্রায় প্রতিদিনই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে মহাবিপন্ন বাগাড়। মাছটির শিকার, পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও রাজবাড়ীতে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি অব্যাহত আছে। চলতি সপ্তাহে দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে অন্তত ১০টি বাগাড় প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে।

মৎস্যজীবী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বাড়ায় প্রতিদিনই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বড় বড় মাছ। রুই, কাতলা, পাঙাশ ও ইলিশের পাশাপাশি মহাবিপন্ন বাগাড়ও ধরা পড়ছে। স্থানীয় জেলে ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর অঞ্চলের জেলেরা নদীতে জাল ফেলে এসব মাছ শিকার করছেন।

আরও পড়ুনরাজবাড়ীতে আবার মহাবিপন্ন বাগাড় বিক্রি, ২৭ কেজির মাছের দাম ৪৩ হাজার টাকা১৯ ঘণ্টা আগে

আজ শুক্রবার ভোরে কুশাহাটা এলাকায় পদ্মা ও যমুনা নদীর মোহনায় জাল ফেলে একটি বাগাড় ধরেন পাবনার জেলেরা। বিক্রির জন্য সকালে সেটি নিয়ে যান দৌলতদিয়া বাজারের হালিমের আড়তে। প্রায় ২৭ কেজি ওজনের বাগাড়টি বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে সেটি কিনে নেন স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ। ১ হাজার ৪৮০ টাকা কেজি দরে মোট ৪০ হাজার টাকায় কেনা হয় মাছটি। পরে আফজাল হোসেন নামের সিরাজগঞ্জের এক কাপড় ব্যবসায়ীর কাছে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে মোট ৪৩ হাজার ২০০ টাকায় বাগাড়টি বিক্রি করেন।

শাহজাহান শেখ জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাহিদ নামের আরেক জেলের কাছ থেকে ২৭ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড় ৪০ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে ৪৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ৪ থেকে ৫ দিন আগে প্রায় ১৮ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড় কিনেছিলেন। ৩০ জুন দৌলতদিয়া বাজারে মাঝারি আকারের ৩টি এবং ২৮ জুন প্রায় ৫০ কেজি ওজনের আরেকটি বাগাড় বিক্রি করা হয়।

আরও পড়ুননৌ পুলিশ ফাঁড়ির পাশেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন বাগাড়, আইনের প্রয়োগ নেই৩০ জুন ২০২৫

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাগাড় শিকার, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

দৌলতদিয়া ঘাট মাছ বাজারের পাশেই দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ি। ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক ত্রিনাথ সাহার কাছে জানতে চাইলে বলেন, বাগাড় শিকার ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বন বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। দুই দিন ধরে মাইকিং করে জেলে এবং ব্যবসায়ীদের সতর্কও করা হয়।

আরও পড়ুনপদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ৫০ কেজির মহাবিপন্ন বাগাড়, ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি২৮ জুন ২০২৫

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.

নাহিদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিকভাবে জেলে ও ব্যবসায়ীদের বারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, শিগগিরই উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে জেলে এবং ব্যবসায়ীদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক শ য ব যবস য় দ লতদ য় র আর ক ওজন র

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ