আবু নাসের চৌধুরী। ফেনী জেনারেল হাসপাতাল শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মী। লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন। কিন্তু আট মাস বেতন পাননি বলে চিকিৎসা করাতে পারেননি। কী নির্মম বাস্তবতা! সমস্যাপূর্ণ শিশুদের চিকিৎসা করাতে যিনি এতদিন সহযোগিতা করেছেন, সেই আবু নাসের মারা গেলেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে। 
সারাদেশের ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মীরা আট মাস বেতন পাচ্ছেন না। অথচ শিশু বিকাশ কেন্দ্রে এসে আপনি শিশু ডাক্তার, ডেভেলপমেন্ট থেরাপিস্ট এবং 
শিশু মনোবিজ্ঞানীর সেবা পেতে পারেন। 
এক জায়গায় তিন ধরনের সেবা। অল্প খরচে অভিভাবকরা শিশুর শারীরিক, মানসিক ও বিকাশজনিত ত্রুটির চিকিৎসা করাতে পারছেন। 
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের চিকিৎসাও এখান থেকে দেওয়া হয়। অটিজম, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, অতি চঞ্চলতা, খিঁচুনি, মৃগী রোগ ইত্যাদি। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে এসে এমন কিছু সমস্যা শনাক্ত হচ্ছে, যা হয়তো আর কিছু দিন দেরি হলে সারিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব বা খুব কঠিন হয়ে যেত।    

এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র রয়েছে। তিন-চারটি বাদে বাকি সব ঢাকার বাইরে। সব কেন্দ্রই সরকারি জেলা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে স্বাস্থ্য খাতে যে কয়েকটি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কার্যক্রম অন্যতম। নিঃসন্দেহে এটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। 
উন্নত বিশ্বে প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই এ ধরনের সেবা পাওয়া যায়। কারণ তারা জানে, শিশুরাই তাদের বড় সম্পদ। সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠন করতে হলে শিশুদের বিকাশের দিকে মনোযোগ দিতে হবে সবার আগে। তাই তারা আজ থেকে প্রায় এক শতাব্দী আগে এ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে। 

দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে সরকারি পর্যায়ে এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে অনেক পরে। আরও যা কষ্টকর, এ কার্যক্রম নিয়ে স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের অবহেলা দৃশ্যমান। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা তারা কতটুকু অনুভব করেন, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। 
শিশুর সংখ্যা বেশি হলে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা বাড়বে। ২০২৩ সালের ইউনিসেফের একটি রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও প্রতিবন্ধী শিশুর সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। এটি আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অশনিসংকেত। 
কোনো কারণে এগুলো যদি বন্ধ হয়ে যায়, শিশুদের বিকাশজনিত সমস্যা প্রকট হবে, অটিজম চিকিৎসা বিঘ্নিত হবে। সর্বোপরি প্রতিবন্ধী ও মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিশুর সংখ্যা বাড়বে। শুরুতে চিকিৎসা করাতে পারলে যে শিশুরা জনসম্পদে পরিণত হতে পারত, সেখানে তারা পরিণত হবে রাষ্ট্রের জন্য বোঝায়। নিঃসন্দেহে তা রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে পেছনের দিকে টানবে। 
তাই যত দ্রুত সম্ভব পদক্ষেপ নিতে হবে। আশা করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিনির্ধারকরা এদিকে বিশেষ মনোযোগ দেবেন। সরকারের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিশু বিকাশ কেন্দ্রের কর্মীরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করেন। সেখানে তারা কোনো প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য, সহিংসতা কিংবা রাস্তা অবরোধ করেননি। প্রতিবাদের ব্যানারে বড় করে লেখা ছিল– শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন। প্রশ্ন হচ্ছে,  বৈষম্যবিরোধী এই সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ দাবির প্রতি সহানুভূতি দেখাবে কি? 

nশ্যামল আতিক: প্যারেন্টিং বিষয়ক লেখক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে ‍শিবচর থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।

দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।

মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না সাত কলেজের শিক্ষকেরা
  • দুর্গাপূজায় অরাজকতা রোধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান মহিলা পরিষদের
  • বন কর্মকর্তার ১৭ বিয়ে: আদালতে মামলা, তদন্তে পিবিআই
  • শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
  • সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান পরিবর্তনের দাবিতে ৫টি পরিবেশবাদী সংগঠনের মানববন্ধন
  • ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও তাঁর মাকে হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন