হাওরাঞ্চলে ফসল আবাদের ক্ষেত্রে প্রকৃতির অলিখিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা প্রান্তিক কৃষকের নিয়তি। নানা প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রতি মৌসুমে বোরো ফসলের জোগান দিয়ে দেশের খাদ্যভান্ডারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষক।
জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা, প্রতিটি পর্যায়ে ঢল, বন্যা, খরা পেরিয়ে এসে ফড়িয়াবাজি আর বাজারে ধান-চালের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভুগতে হয় তাদের। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, যে যা-ই বলুক, বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হলেই কেবল চাষির জন্য এই ফসল সোনার ফসল হয়। নইলে এর চেয়ে বড় অভিশাপ নেই। এমনটাই বলছেন সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের বোরোচাষিরা।
সুনামগঞ্জের হাওরে এখন ধান কাটা আর ধান কেনাবেচা নিয়েই আলোচনা মুখে মুখে। উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে গতবারের মতো এবারও শঙ্কিত কৃষকরা। তারা মনে করছেন, সরকার প্রতিমণ ধানের মূল্য ১ হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও তারা হয়তো সেটি পাবেন না। রাজনীতিবিদ ও কৃষক সংগঠকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এবং সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনতে পারলেই কেবল ধানের ন্যায্যমূল্য পাবেন কৃষকরা। অর্থাৎ মিলার ও ফড়িয়ারা তখন বাধ্য হবে উপযুক্ত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান কিনতে। এ নিয়ে রোববার আয়োজিত এক সভায় একই কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষক সংগঠকরা জানান, জেলা ধান ক্রয় কমিটির সিদ্ধান্তের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করবে বাজারে ধানের মূল্য কত বাড়বে বা কমবে। এর মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে এবার জেলার কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবেন কি না।
ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পাশাপাশি খরচের জন্য ধান বিক্রিও করছেন কৃষকরা। এ ক্ষেত্রে বিপদগ্রস্ত কৃষকরা মিলার ও ফড়িয়াদের কাছে কম দামে আগাম ধান বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বন্যার পূর্বাভাসের বিষয়টি ভাবাচ্ছে কৃষকদের, বিক্রয় করছেন ধান। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন, সরকার ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। তখনই ধান বিক্রি করবেন তারা।
জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের রহিমাপুরের কৃষক মুকুল রায় জানান, ব্যাপারী (ধান কাটার শ্রমিক) মেলাতে পারেননি। দু’-এক দিনের মধ্যে চেষ্টা করবেন ধান কাটা। ভরতপুর থেকে শ্রমিক আনার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে চিন্তায় আছেন। ধান কাটা-মাড়াইয়ের পর শুকিয়ে দুই থেকে তিন টন ধান বিক্রি করবেন। ন্যায্যমূল্য না পেলে এসব খরচ উঠবে না। সরকারি গুদামে দিতে পারলে ভালো হতো তাদের জন্য।
তাহিরপুরের বড়দলের সামায়ুন আহমদ বলেন, বিগত সময়ে ৫০ থেকে ৬০ জনের কৃষি কার্ড একজন নিয়ে গেছে। এই প্রতারকরাই ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত। খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলেও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে বিদায় করে দিত। এসবে সহায়তা করতেন সরকারি লোকজন। এবার সুযোগ পেলে গুদামেই ধান দেবেন তারা।
কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল বাশার ঠাকুর খান বলেন, কৃষকরা এখন ৮০ কেজি ভেজা ধানের বস্তা ৭৫ কেজি হিসাব করে ৯০০ টাকা মণে খলাতেই বিক্রি করছেন। সরকার ধান কেনা শুরু করলে ধানের দাম বাড়বে। এ ক্ষেত্রে একজন কৃষকের কাছ থেকে এক বা দুই টন
করে ধান কিনতে হবে। এর বেশি ধান এক কৃষি কার্ডে নিলে প্রান্তিক কৃষকরা উপকৃত হবে না। লাভবান হবে মধ্যস্বত্বভোগীরা। কারণ প্রান্তিক কৃষকের কাছে এত ধান থাকে না।
হাওরের কৃষি ও কৃষক বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি চিত্ত রঞ্জন তালুকদার বলেন, সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের পরিবেশই থাকে ফড়িয়া-দালালদের পক্ষে। এটি বদলাতে হবে। হাওরে দাদনি (কম দামে অগ্রিম ধান কেনা) এবারও মহাজনরা কোটি কোটি টাকা ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ক্রয়কেন্দ্র দূরবর্তী স্থানে হওয়ায় অনেক কৃষক সেখানে যেতে চায় না। উপজেলা ধান ক্রয় কমিটি, ইউনিয়ন কৃষি সুপারভাইজারদের সহায়তা নিয়ে শুকনো ধান যাচাই-বাছাই করে ফড়িয়া বা মিলারদের মতো এলাকায় এলাকায় ট্রাক নিয়ে গিয়ে কিনতে পারে। এবারও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় কৃষি কার্ড নিয়ে যাচ্ছে ফড়িয়ারা। এটা বন্ধ করতে হবে সবার আগে।
জেলা জামায়েতের আমির তোফায়েল আহমদ খান বলেন, সবার প্রচেষ্টা থাকতে হবে কৃষকরা যাতে না ঠকে। কৃষক ঠকে যাওয়া মানে দেশ
ঠকে যাওয়া। উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া তাদের অধিকার। কৃষকের অধিকারের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। বিগত সময়ের মতো ফড়িয়াদের খপ্পরে যেন না পড়েন কৃষকরা। এ বিষয়ে সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।
গত বছর সরকার নির্ধারিত ধানের ক্রয়মূল্য ছিল ১ হাজার ২৮০ টাকা। এর আগের বছর ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। সে দামে ধান বিক্রি করতে পারলেও লাভবান হতেন কৃষক। তবে সে সময় প্রতিটি সরকারি গোডাউন ছিল ফড়িয়া আর রাজনীতিবিদদের এজেন্টদের নিয়ন্ত্রণে। যার কারণে কৃষকরা সেখানে ধানই দিতে পারেননি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, জেলার হাওর ও হাওরবহির্ভূত মিলিয়ে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত ৫০ হাজার ৪১৭ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে; যা মোট চাষাবাদের ২৪ শতাংশ। খাদ্য বিভাগ ২৪ এপ্রিল থেকে ধান কিনবে। তাদের ১০৮ জন কৃষি সুপারভাইজারকে কাজে লাগানো হবে, যাতে বেশি কৃষক সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে ধান দিতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ সরক র ক ষকর করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনায় ডেপুটি হাইকমিশনার শাবাব, দেশে ফেরার নির্দেশ
দ্য হেগে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (স্থানীয়) শাবাব বিন আহমেদকে দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাকে কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে ডেপুটি হাইকমিশনার হিসেবে বদলি করা হয়েছিল।
যোগদান করার আগেই তিনি কলকাতা মিশনে কোরবানি দেওয়ার প্রথা বন্ধের নির্দেশ দেন। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সমালোচনার মুখে তাকে কলকাতা মিশনে বদলির আদেশ বাতিল করে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে আসাদ আলম সিয়ামের নাম শোনা যাচ্ছে
দুই দিন পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ উদ্ধার
কোরবানি বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পর গণমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে শাবাব নিজের অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে জানান, হোস্ট কান্ট্রির (ভারত) আস্থা অর্জন করাটা আমাদের জন্য জরুরি। এই আস্থা অর্জনের জন্যই তিনি এ নির্দেশনা দিয়েছেন।
কলকাতা মিশনে কোরবানি করার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে কলকাতা মিশনে কোরবানি হয়ে আসছে। প্রতি বছরই পাঁচ থেকে সাতটি গরু এবং ছাগল কোরবানি করা হয়। এই কোরবানির গোশতের একটি বড় অংশ বিভিন্ন এতিমখানায় পাঠানো হয়। এছাড়া মিশনের চারপাশে বসবাসকারী মুসলিমদের মাঝেও কোরবানির গোশত বিতরণ করা হয়।
শাবাব বিন আহমেদ একজন কূটনীতিক হিসেবে নেদারল্যান্ডসে ১ বছর ৯ মাস কর্মরত ছিলেন। তার বাবা ১৯৭৩ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা এবং কট্টর আওয়ামী সমর্থক।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী