স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের ইতিবাচক উদ্যোগে সাত দিনের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে ক্লাসে কবে ফিরবে তা আরও পরে জানাবে বলে জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। 

মঙ্গলবার বিকেলে শিক্ষার্থীরা জানায়, তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাসহ সরকারের ঊর্ধ্বতনদের নেওয়া উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হবে, আপাতত আন্দোলনের নতুন কোনো কর্মসূচি নেই। ক্লাসে ফেরার বিষয়টি পরে জানানো হবে।

গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও লাগাতার ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনে নামেন সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরদিন বুধবার সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, বৃহস্পতিবার শহরের আলফাত স্কয়ারে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, স্বাস্থ্যসেবা সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার শান্তিগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন ও জনসংযোগ, রোববার সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হলে জনদুর্ভোগ দেখা দেয়। পরে ওইদিন লাঠিচার্জ করে সড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আন্দোলনের সপ্তম দিনে সোমবারও সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে অংশ নেন- কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক-কর্মচারীরা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জিয়াউর রহমানও ওইদিন তাদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন। 

পরে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনের লেকচার গ্যালারিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার প্রতিনিধি হয়ে আসা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জিয়াউর রহমান, স্বাস্থ্য বিভাগের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ডা.

আনিসুর রহমান, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মাহবুবুর রহমান, সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিনসহ সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুস্তাক আহমদ ভুইয়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরাসহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, সরকারের ঊর্ধ্বতনদের আশ্বাসকে ইতিবাচকভাবে দেখছি আমরা। যেটি মঙ্গলবার করা হলো, সেটি আরও আগে করা যেত। আমাদের দাবিগুলোর মধ্যে যেগুলো এখন করা যায়, সেগুলো ৩-৪ দিনের মধ্যে করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কনসালটেন্টও দ্রুত নিয়োগ হবে বলে জানিয়েছেন তারা। 

তিনি বলেন, আমরা এসব আশ্বাস পর্যবেক্ষণ করব। আপাতত আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে না। কাল বুধবার থেকে ওয়ার্ডগুলো ঠিক করা, রুটিন তৈরি করা, ভিজিলেন্স টিম করাসহ অন্যান্য সবকিছু গুছিয়ে আনা হলে ক্লাসে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তাক আহমদ ভুইয়া বললেন, মঙ্গলবার মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসে দুটি ভাড়া করা বাস এসেছে। এগুলো শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য আনা নেওয়া করবে। তিনজন কনসালটেন্টকে এখানে সংযুক্ত করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সাতদিনের মধ্যে তারা যোগদান করবেন। 

তিনি জানান, গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জনবল নিয়োগ হলে ডিসেম্বরের মধ্যে হাসপাতাল চালু হবে। এছাড়া হাসপাতালের নির্মাণ অগ্রগতি দেখভাল করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে রিপোর্ট দেবার জন্য ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে ভিজিলেন্স টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 
জানা যায়, ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস কোর্সে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে ২০২১ সালের মে মাসে শান্তিগঞ্জের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (অস্থায়ী ক্যাম্পাসে) বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ সুনামগঞ্জের (যা গেল পাঁচ আগস্টের পর হয়েছে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ, সুনামগঞ্জ) যাত্রা শুরু হয়। এটি দেশের ৪৭তম সরকারি মেডিকেল কলেজ।

মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, প্রতি সপ্তাহে ১২টি ক্লিনিক্যাল ক্লাস হবার কথা ছিল তাদের। সেখানে দুই বছরে দশটি ক্লাস হয়েছে। এভাবে তাদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে রাজপথে নেমেছেন।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক মেডিকেল অফিসার জানান, ওখানে মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু হওয়ায় শান্তিগঞ্জের মানুষও স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ওখানকার ওয়ার্ড চালু করা যায় নি। মেডিকেলের শ্রেণিকক্ষসহ অফিস ওখানে হওয়ায় ডাক্তারদের বসার স্থান ছিল না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ব স থ য উপদ ষ ট স ন মগঞ জ স র রহম ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় অবৈধ মাটি ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক মাইনুদ্দিন রুবেলের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। হামলার চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঢেউ’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, গণমাধ্যমকর্মী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা, জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন, প্রেসক্লাবের কার্যকরী সদস্য শাহাজাহান সাজু, খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক নিহার রঞ্জন সরকার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনাইটেড কলেজের উদ্যোক্তা হারুন অর রশিদ ও শাহীন মৃধা, প্রথম আলোর বন্ধুসভার জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায় ও সাধারণ সম্পাদক শাহাজান মিয়া এবং ঢেউয়ের সদস্য শাহাদাত হোসেন।

বক্তারা বলেন, যাঁরা সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত, তাঁদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই। বাংলাদেশ সংবিধান প্রত্যেক নাগরিকের মতপ্রকাশের অধিকার দিয়েছে। একজন সাংবাদিক হিসেবে মাইনুদ্দিন রুবেল সেই অধিকার প্রয়োগ করেছেন। সাংবাদিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত রাখা যাবে না। হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।

মাইনুদ্দিন রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি। তাঁর বাড়ি বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের ভিটি দাউদপুর গ্রামে। তিনি ২০ বছর ধরে জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইলে বসবাস করছেন।

গত শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে আটটার দিকে বিজয়নগরের মির্জাপুর এলাকায় উপজেলা পরিষদের সামনে তাঁর ওপর হামলা হয়। এতে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা কাইয়ুম মিয়া এবং বহিষ্কৃত যুবদল নেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান ওরফে লিটন মুন্সীসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন রুবেল।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মোখলেছুর ও কাইয়ুম দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে মাটি ব্যবসা করছেন। পুকুর ও কৃষিজমির মাটি কেটে তা ট্রাক্টরে করে অন্যত্র বিক্রি করছেন তাঁরা। স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে।

এ বিষয়ে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্দোষ দাবি প্রতিপক্ষের, হয়নি মামলা
  • তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্যেই সংস্কার রয়েছে, অচিরেই নির্বাচন দিন : সোহাগ
  • বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
  • ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে তিতুমীরে মানববন্ধন
  • ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জিডির প্রতিবাদে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ
  • উত্তরায় বাসে হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে মানববন্ধন
  • সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকের ওপর হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন
  • জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদের ভাইকে কোপানোর ঘটনায় মামলা, প্রতিবাদ কর্মসূচি
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়: নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কর্মসূচি, ছাত্রদলের সভাপতি-সম্পাদককে নোটিশ