চেহারা নিখুঁত করতে ১০০ বার অস্ত্রোপচার করিয়েছেন চীনা এই নারী
Published: 23rd, April 2025 GMT
প্রথমবার যখন অ্যাবি উর অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।
হরমোনজনিত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নেওয়ার পর অ্যাবির ওজন দুই মাসে ৪২ কেজি থেকে বেড়ে ৬২ কেজি হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় অ্যাবি তাঁর নাট্য ক্লাসের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার এই যে পরিবর্তন, সেটা তাঁর নাট্য শিক্ষকের চোখ এড়ায়নি।
তখনকার কথা মনে করে অ্যাবি বলেন, ‘আমার শিক্ষক বলেছিলেন, “তুমি তো আমাদের তারকা শিল্পী। কিন্তু এখন তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছ। হয় ছেড়ে দাও, নয়তো দ্রুত ওজন কমাও।”’
অ্যাবির মা তখন তৎপর হলেন। তাঁকে পেট ও পা থেকে চর্বি অপসারণের জন্য লাইপোসাকশন করাতে নিয়ে গেলেন।
অ্যাবি যখন হাসপাতালের গাউন পরে অস্ত্রোপচারের জন্য বিচলিতভাবে অপেক্ষা করছিলেন, তখন তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘মনে সাহস রাখো এবং ভেতরে যাও। বের হওয়ার পর তোমাকে দারুণ দেখাবে।’
অস্ত্রোপচারটি ছিল যন্ত্রণাদায়ক। অ্যাবিকে কেবল আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছিল এবং পুরো সময়টাতেই তাঁর জ্ঞান ছিল।
অ্যাবি বলেন, ‘আমার শরীর থেকে কতটা চর্বি বের করা হচ্ছে এবং আমি কতটা রক্ত হারাচ্ছি, তা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম।’
এখন অ্যাবির বয়স ৩৫ বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১০০টির বেশি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, যার খরচ পাঁচ লাখ ডলার।
অ্যাবি এখন বেইজিংয়ের একটি বিউটি ক্লিনিকের অংশীদার। চীনে প্লাস্টিক সার্জারির উত্থানের ক্ষেত্রে অবদান রাখা উল্লেখযোগ্য মানুষের একজন হয়ে উঠেছেন তিনি।
তবে এতগুলো অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তাঁর শরীরকে অনেক ধকল সইতে হয়েছে।
বেইজিংয়ে অ্যাবির বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, তিনি একটি আয়নার সামনে বসে মুখে কনসিলার লাগাচ্ছেন। সম্প্রতি মুখ পাতলা করার ইনজেকশন নেওয়ার কারণে তৈরি হওয়া দাগ ঢাকার চেষ্টা করছেন তিনি।
এ ইনজেকশনটি অ্যাবি প্রতি মাসে নেন যেন মুখ আরও টানটান ও কম মোটা দেখায়। এর আগে অতিরিক্ত হাড় কমাতে চোয়ালে তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
তবে এসব অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যাবির মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই। তিনি মনে করেন, সে সময় তাঁর মায়ের সিদ্ধান্তটিই সঠিক ছিল।
অ্যাবি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারগুলো কাজে দিয়েছে। আমি দিন দিন আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়ে উঠেছি। আমি মনে করি, আমার মা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।’
অ্যাবি উর নাকজুড়ে পুরু করে বাদামি প্লাস্টার লাগানো এবং মুখের বড় একটা অংশ ঢেকে রাখা। তাঁর চিবুক পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো আর মুখের কিছু অংশে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন।
ট্যাবু ভেঙে গত ২০ বছরে চীনে প্লাস্টিক সার্জারি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসার কারণে এমনটা হয়েছে।
প্রতিবছর চীনের দুই কোটি মানুষ কসমেটিক সার্জারির জন্য অর্থ খরচ করেন।
চীনে প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আগ্রহ সবচেয়ে বেশি তরুণীদের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা এ ধরনের অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন তাঁদের ৮০ শতাংশই নারী। তাঁদের গড় বয়স ২৫ বছর।
চীনা সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের গুরুত্ব বরাবরই ছিল, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সৌন্দর্য নির্ধারণের মানদণ্ডে পরিবর্তন আসছে।
বছরের পর বছর ধরে চীনে সৌন্দর্যের মানদণ্ডগুলো পশ্চিমা আদর্শ, অ্যানিমে কল্পনার সৌন্দর্য এবং কে-পপ তারকাদের অনুপ্রেরণার একটি মিশ্রণ ছিল। এই সৌন্দর্য ধারণার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল—ডাবল আইলিড, ছাঁটা ও খাঁজকাটা চোয়াল, চোখে পড়ার মতো নাক এবং নিখুঁত মুখাকৃতি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কষ্টকর প্রক্রিয়াগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অবাস্তব ও অতিরিক্ত নারীসুলভ এবং বয়স কম দেখানোর মতো সৌন্দর্যের ধারণার পেছনে ছোটা হচ্ছে।
এখন কানের পেছনে বটক্স ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে, যেন কান সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে এবং মুখ ছোট ও কোমল দেখায়।
নিচের চোখের পাতায় অস্ত্রোপচারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চোখ বড় ও উজ্জ্বল দেখাতে এমনটা করা হয়। এটা একধরনের নিষ্পাপ ও শিশুসুলভ চেহারা তৈরি করে।
তবে এ সৌন্দর্যের অনেকটাই তৈরি করা হয় পর্দায় প্রদর্শনের জন্য। ফিল্টার ও রিং লাইটের আলোয় এসব রূপান্তরকে নিখুঁত ও দৃষ্টিনন্দন বলে মনে হয়। তবে বাস্তব জীবনে এই মুখগুলোকে অদ্ভুত মনে হয়। এমন এক মুখ, যা মানুষের মতো নয়, আবার শিশুর মতোও নয়।
প্রথমবারের মতো অ্যাবি উর যখন অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দর য র র জন য তখন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত