প্রথমবার যখন অ্যাবি উর অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর।

হরমোনজনিত অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা নেওয়ার পর অ্যাবির ওজন দুই মাসে ৪২ কেজি থেকে বেড়ে ৬২ কেজি হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় অ্যাবি তাঁর নাট্য ক্লাসের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ার এই যে পরিবর্তন, সেটা তাঁর নাট্য শিক্ষকের চোখ এড়ায়নি।

তখনকার কথা মনে করে অ্যাবি বলেন, ‘আমার শিক্ষক বলেছিলেন, “তুমি তো আমাদের তারকা শিল্পী। কিন্তু এখন তুমি অনেক মোটা হয়ে গেছ। হয় ছেড়ে দাও, নয়তো দ্রুত ওজন কমাও।”’

অ্যাবির মা তখন তৎপর হলেন। তাঁকে পেট ও পা থেকে চর্বি অপসারণের জন্য লাইপোসাকশন করাতে নিয়ে গেলেন।

অ্যাবি যখন হাসপাতালের গাউন পরে অস্ত্রোপচারের জন্য বিচলিতভাবে অপেক্ষা করছিলেন, তখন তাঁর মা তাঁকে বলেছিলেন, ‘মনে সাহস রাখো এবং ভেতরে যাও। বের হওয়ার পর তোমাকে দারুণ দেখাবে।’

অস্ত্রোপচারটি ছিল যন্ত্রণাদায়ক। অ্যাবিকে কেবল আংশিক অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছিল এবং পুরো সময়টাতেই তাঁর জ্ঞান ছিল।

অ্যাবি বলেন, ‘আমার শরীর থেকে কতটা চর্বি বের করা হচ্ছে এবং আমি কতটা রক্ত ​​হারাচ্ছি, তা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম।’

এখন অ্যাবির বয়স ৩৫ বছর। এ সময়ের মধ্যে তিনি ১০০টির বেশি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন, যার খরচ পাঁচ লাখ ডলার।

অ্যাবি এখন বেইজিংয়ের একটি বিউটি ক্লিনিকের অংশীদার। চীনে প্লাস্টিক সার্জারির উত্থানের ক্ষেত্রে অবদান রাখা উল্লেখযোগ্য মানুষের একজন হয়ে উঠেছেন তিনি।

তবে এতগুলো অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তাঁর শরীরকে অনেক ধকল সইতে হয়েছে।

বেইজিংয়ে অ্যাবির বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, তিনি একটি আয়নার সামনে বসে মুখে কনসিলার লাগাচ্ছেন। সম্প্রতি মুখ পাতলা করার ইনজেকশন নেওয়ার কারণে তৈরি হওয়া দাগ ঢাকার চেষ্টা করছেন তিনি।

এ ইনজেকশনটি অ্যাবি প্রতি মাসে নেন যেন মুখ আরও টানটান ও কম মোটা দেখায়। এর আগে অতিরিক্ত হাড় কমাতে চোয়ালে তিনটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।

তবে এসব অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যাবির মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা নেই। তিনি মনে করেন, সে সময় তাঁর মায়ের সিদ্ধান্তটিই সঠিক ছিল।

অ্যাবি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারগুলো কাজে দিয়েছে। আমি দিন দিন আরও আত্মবিশ্বাসী ও সুখী হয়ে উঠেছি। আমি মনে করি, আমার মা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।’

অ্যাবি উর নাকজুড়ে পুরু করে বাদামি প্লাস্টার লাগানো এবং মুখের বড় একটা অংশ ঢেকে রাখা। তাঁর চিবুক পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজ মোড়ানো আর মুখের কিছু অংশে ক্ষত ও রক্তের চিহ্ন।

ট্যাবু ভেঙে গত ২০ বছরে চীনে প্লাস্টিক সার্জারি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল আসার কারণে এমনটা হয়েছে।

প্রতিবছর চীনের দুই কোটি মানুষ কসমেটিক সার্জারির জন্য অর্থ খরচ করেন।

চীনে প্লাস্টিক সার্জারির প্রতি আগ্রহ সবচেয়ে বেশি তরুণীদের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁরা এ ধরনের অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন তাঁদের ৮০ শতাংশই নারী। তাঁদের গড় বয়স ২৫ বছর।

চীনা সংস্কৃতিতে সৌন্দর্যের গুরুত্ব বরাবরই ছিল, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে সৌন্দর্য নির্ধারণের মানদণ্ডে পরিবর্তন আসছে।

বছরের পর বছর ধরে চীনে সৌন্দর্যের মানদণ্ডগুলো পশ্চিমা আদর্শ, অ্যানিমে কল্পনার সৌন্দর্য এবং কে-পপ তারকাদের অনুপ্রেরণার একটি মিশ্রণ ছিল। এই সৌন্দর্য ধারণার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল—ডাবল আইলিড, ছাঁটা ও খাঁজকাটা চোয়াল, চোখে পড়ার মতো নাক এবং নিখুঁত মুখাকৃতি।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে কষ্টকর প্রক্রিয়াগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অবাস্তব ও অতিরিক্ত নারীসুলভ এবং বয়স কম দেখানোর মতো সৌন্দর্যের ধারণার পেছনে ছোটা হচ্ছে।

এখন কানের পেছনে বটক্স ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে, যেন কান সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে পড়ে এবং মুখ ছোট ও কোমল দেখায়।

নিচের চোখের পাতায় অস্ত্রোপচারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চোখ বড় ও উজ্জ্বল দেখাতে এমনটা করা হয়। এটা একধরনের নিষ্পাপ ও শিশুসুলভ চেহারা তৈরি করে।

তবে এ সৌন্দর্যের অনেকটাই তৈরি করা হয় পর্দায় প্রদর্শনের জন্য। ফিল্টার ও রিং লাইটের আলোয় এসব রূপান্তরকে নিখুঁত ও দৃষ্টিনন্দন বলে মনে হয়। তবে বাস্তব জীবনে এই মুখগুলোকে অদ্ভুত মনে হয়। এমন এক মুখ, যা মানুষের মতো নয়, আবার শিশুর মতোও নয়।

প্রথমবারের মতো অ্যাবি উর যখন অস্ত্রোপচার হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দর য র র জন য তখন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ইরান থেকে তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে ৬টি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যাদের মধ্যে ভারতের ৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা এসব প্রতিষ্ঠান ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। এতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যেসব ভারতীয় কোম্পানির ওপর মার্কিন সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেগুলো হচ্ছে, অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।

আরো পড়ুন:

পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের

ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

 

নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ করা হবে এবং মার্কিন নাগরিক ও কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। এদের অধীন যেসব সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ৫০ শতাংশ বা তার বেশি মালিকানা রয়েছে, তারাও নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।

ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ইরানের ‘ছায়া নৌবহর’ ও বিশ্বব্যাপী মধ্যস্বত্বভোগীদের দমন করা, যারা ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরান থেকে এই ধরনের পণ্য কেনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো তেহরানকে অতিরিক্ত তহবিল সংগ্রহের সুযোগ করে দিচ্ছে। আর এই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী, হামাসসহ অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর সহায়তায় এবং যুদ্ধপরিস্থিতি উসকে দিতে। মার্কিন সরকারের মতে, ইরান সরকারের এই নীতিমালার কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং এতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ভারতীয় কোম্পানি ছাড়াও তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ