‘প্রথমে যখন জানলাম, আমরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের সঙ্গে কাতার যাব, তখন খুব আনন্দ হয়েছিল। পরিবারের সবাই খুশি ছিল। এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।’ ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার সাবলীলভাবে বললেন কথাগুলো। ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপা আঞ্চলিক ভাষায় গড় গড় করে বলে গেলেন অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা। 

লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসিদের ড্রেসিংরুম ও ওয়ার্মআপ জোন দেখে বিমোহিত তারা। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ভেন্যুতে প্রবেশ করার রোমাঞ্চের আনন্দস্রোত শাহেদাকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল পারসিয়ান গালফ সাগরে। 

যে মঞ্চে বসে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ দেখেছিল কাতারের রাজপরিবার, সেখানে যেতে পারা; রাজাসনে বসে ছবি তোলার অনন্য অভিজ্ঞতা আফেদা খন্দকারদের। সাধারণ কাতারিদের যেখানে প্রবেশাধিকার নেই, সেখানে বাংলাদেশের চার নারী খেলোয়াড়কে রাজাসনে বসে ছবি তোলার সুযোগ করে দেওয়া সত্যিই বিরল অভিজ্ঞতা। 

‘আর্থনা সামিট-২০২৫’ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-সানির আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। রাষ্ট্রীয় এ সফরে তিনি দেশের চারজন নারী ক্রীড়াবিদকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। ফুটবলার শাহেদা আক্তার রিপা, আফেদা খন্দকার আর ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা ও সুমাইয়া আক্তার ব্যতিক্রমী এই সফরে গিয়েছিলেন কাতার ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে। 

বিশেষ এ সফরে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করতে গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। যেখানে শারমিন সুলতানা বলেন, ‘কাতারের রিহ্যাব সেন্টার বিশ্বমানের। আমাদের বলা হলো নেইমাররাও ওখানে ইনজুরি পুনর্বাসন করেন। আমরা বলেছি এখানে রিহ্যাব সেন্টার তৈরি করতে।’

সুমাইয়া আক্তার চেয়েছেন কাতারের মেয়েরাও ক্রিকেট খেলুক, ‘কাতারে ক্রিকেটের চর্চা নেই। একবার শুরু হয়েছিল, কিন্তু বল শক্ত হওয়ায় তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমরা অনুরোধ করেছি ক্রিকেট চালু করতে।’ 

বাংলাদেশের চার নারী খেলোয়াড়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রয়োজন। তারা নিজেদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও শেখ হিন্দের কাছে। নারী ক্রীড়াবিদদের আবাসন এবং ইনডোর সুবিধা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি কাতার ফাউন্ডেশন থেকে দেওয়া হয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টার উপসচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘বন্ধুত্বের স্মারকস্বরূপ কিছু সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কাতার ফাউন্ডেশন। এটি মাত্র শুরু, ভবিষ্যতে এ উদ্যোগ বড় পরিসরেও হতে পারে।’ 

স্পোর্টসের বাইরেও খেলোয়াড়দের বেশি মুগ্ধ করেছে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হওয়ায় প্রাপ্ত সম্মানে। ফুটবলার আফেদার মতে, ‘স্যার বলে ছিলেন আমি বক্তব্য দিতে যাচ্ছি, তোমরা আসো। গিয়ে দেখি স্যারের বক্তব্য শুরু হয়ে গেছে, অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে তা শুনছে। অথচ আমাদের বসানো হয়েছে ভিআইপি আসনে। এটা বড় প্রাপ্তি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ