তাওহিদ হৃদয় ও তাঁর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এ যেন এক নাটক শুরু হয়েছে। আর প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে সেই নাটকের নতুন নতুন পর্ব!

গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্র হৃদয় এবার চার ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে আউট হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া দেখান মোহামেডানের এই অধিনায়ক। এরপর তাঁকে শুনানিতে ডাকা হলেও আসেননি। পরে ম্যাচ রেফারি আখতার আহমেদ লেভেল-১ অপরাধের জন্য হৃদয়কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন, সঙ্গে একটি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয় তাঁর।  

আগে থেকেই ৭ ডিমেরিট পয়েন্ট ছিল হৃদয়ের। এবার ১ যোগ হওয়ায় সেটি হয়েছে ৮। নিয়ম অনুযায়ী, ৮ ডিমেরিট পয়েন্ট মানে চার ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। সেই শাস্তিই পাচ্ছেন হৃদয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় পাচ্ছেন না মোহামেডান অধিনায়ক। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের আয়োজক ক্রিকেট কমিটি অব মেট্টোপলিসের (সিসিডিএম) কাছে একটি চিঠিও পৌঁছেছে। সিসিডিএমের একটি সূত্র প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নতুন করে নিষিদ্ধ হলেন তাওহিদ হৃদয়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তান কি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পথে?

গত সপ্তাহে কাশ্মীরের পেহেলগামের একটি মনোরম তৃণভূমিতে ২৬ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হলো। মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ঘাতকরা তাদের বেছে বেছে হত্যা করে। আমরা ঘটনার হৃদয়বিদারক সাক্ষ্য পড়েছি। কীভাবে কাছ থেকে পুরুষদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে– পরিবারের সদস্যদের সেই দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এতে প্রায় সবাই ছিল হিন্দু। এসব হত্যাকাণ্ড ছিল অযৌক্তিক। এ ছাড়া আমরা পড়েছি, কীভাবে কাশ্মীরি ট্যুরিস্ট গাইড ও শিশুদের বিনোদন রাইডের পনি অপারেটররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক ভারতীয় পর্যটককে উদ্ধার করেছিলেন।

এই হামলা কারা ঘটিয়েছে, তা মৃতদের পরিবারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়– সেটা পাকিস্তানি কিংবা স্থানীয় কাশ্মীরি হোক, অথবা উভয় সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের জীবন নিঃশেষ হয়ে গেছে। পাশাপাশি ভারত সরকারের চতুরতার সঙ্গে গড়ে তোলা স্বাভাবিকতার মুখোশও ধ্বংস হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটনের উত্থানের ফলে এই মুখোশ টিকেছিল। 

আমরা আগেও অনেকবার এখানে এসেছি। প্রায় চার দশক ধরে কাশ্মীর রক্তপাতের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝে মাঝে শান্ত থাকে। স্বাভাবিকতার জয়ধ্বনিপূর্ণ ঘোষণা এবং শান্তির সঙ্গে নীরবতার ইচ্ছাকৃত মিশ্রণের মধ্যে কেটেছে, যাতে এখানে আবারও ভ্রমণে যাওয়া যায়। ২০১৯ সালেও এখানে বিরাজমান স্বাভাবিক অবস্থা এবং সংঘাতের অবসানের কথা বলা হয়েছিল। 

কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ভেঙে যায় ফেব্রুয়ারিতে, যখন জইশ-ই-মোহাম্মদ নামে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী একটি আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িতে আক্রমণ করে। এতে ৪০ ভারতীয় সৈন্য হত্যা করা হয় এবং দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। ১৯৪৮ সাল থেকে তারা যে তিনটি যুদ্ধ করেছে, তাতে বহু দিক থেকে দেশ দুটি সর্বদা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে ছিল। নির্দিষ্ট সময় পরপর তারা যুদ্ধের চারপাশে ঘুরতে থাকে; তারপর ফিরে আসে এবং অস্ত্র ও বাগ্‌বিতণ্ডা চলে। 

এই বিপর্যয়কর বৈপরীত্যের মধ্য দিয়ে একটি প্রজন্ম এখন শেষের দিকে, যার বেশির ভাগ ক্ষতি কাশ্মীরিদের গুনতে হয়েছে। তাদের ৭০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে, প্রায় ১০ হাজার হয়েছে নিখোঁজ এবং ২ লাখের বেশি কাশ্মীরি পণ্ডিত (হিন্দু) বাস্তুচ্যুত। এর কারণ ১৯৮৯ সালে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বোমা বিস্ফোরণ বা পেহেলগামের মতো হামলায় ভারতীয় নাগরিকের নিহত হওয়ার ঘটনা। এটা বলা অযৌক্তিক– এ ধরনের সহিংসতা শূন্য থেকে উদ্ভূত। কারণ ব্যাপক সহিংসতার উৎস আমাদের ইতিহাস ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। যেমন ১৯৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে দেশভাগের এখনও জ্বলন্ত ক্ষত এবং কাশ্মীর নিয়ে বিরোধের অমীমাংসিত প্রকৃতি।

২০১৮ সাল থেকে ভারত দিল্লির নিযুক্ত করা গভর্নরের মাধ্যমে সরাসরি এ অঞ্চল শাসন করে আসছে। পরের বছর মোদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে। যদিও এখন একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী আছেন, তবু পদকে কার্যকরভাবে নামমাত্র করে তোলা হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্ত এতটাই বিকৃত হয়ে ওঠে, এই মাসের শুরুতে একটি উচ্চস্তরের নিরাপত্তা সভায় বর্তমান ক্ষমতাসীন এক কাশ্মীরিকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। অঞ্চলটির ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে ভারত কাশ্মীরের অভ্যন্তরে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে বিদ্যমান সীমান্তে প্রায় পাঁচ লাখ সৈন্য নিয়ে একটি বিশাল সামরিক বাহিনী বলবৎ রেখেছে। স্থানীয় বা পাকিস্তানি পৃষ্ঠপোষকতায় সশস্ত্র গোষ্ঠীদের জন্য এসব উর্বর ভূমি অবাক করার মতো কিছু নয়।

মির্জা ওয়াহিদ: ইংল্যান্ডভিত্তিক কাশ্মীরের লেখক; দ্য গার্ডিয়ান থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ