২৪ কিলোমিটারের দুঃখ দুই উপজেলাবাসীর
Published: 28th, April 2025 GMT
মাত্র ২৪ কিলোমিটার সড়কের অভাবে সারা বছর নৌপথে চলাচল করতে হয় রাঙামাটির বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার বাসিন্দাদের। স্বাধীনতার কয়েক দশকেও জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে না ওঠায় আর্থসামাজিক নানা দিক থেকে পিছিয়ে দুই উপজেলাবাসী।
জানা গেছে, বর্তমানে লংগদুবাসীকে নৌপথে জেলা সদরে পৌঁছতে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। অন্যদিকে বাঘাইছড়ি থেকে জেলা সদরে আসতে ৫ ঘণ্টা সময় লাগে। দুই উপজেলা থেকে সড়কপথে খাগড়াছড়ি হয়ে ঘুরে আসতে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। নানিয়ারচরের বড়পুল থেকে লংগদু উপজেলার মধ্যে মাত্র ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মিত হলে দুই ঘণ্টাতেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবেন বাঘাইছড়ি ও লংগদুর বাসিন্দারা। এ ছাড়া জেলা সদর থেকে পর্যটন স্পট সাজেক ভ্যালির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বর্তমানে জেলা সদর থেকে সাজেক ভ্যালিতে খাগড়াছড়ি হয়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। সড়কটি হলে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টাই সাজেক ভ্যালিতে যেতে পারবেন পর্যটকরা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, জেলার ১০ উপজেলার সঙ্গে আট উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি। ফলে এ দুই উপজেলাবাসীকে নৌপথে নানা ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমের সময় কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে গেলে এ দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে যায়।
এ ছাড়া পণ্য পরিবহনেও কয়েক গুণ বেশি ভাড়াও গুনতে হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, নানিয়ারচর-লংগদু সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৩৭ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে বগাছড়ি থেকে নানিয়ারচর পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৮২ কিলোমিটার বিটুমিনাস সড়ক রয়েছে। অবশিষ্ট ২৩ দশমিক ৭০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হলে জেলা সদরের সঙ্গে নানিয়ারচর ও লংগদু উপজেলার মধ্য নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সম্ভব হবে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ইসিবি) ২০২০ সালে চেঙ্গী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যর চিত্রশিল্পী চুনীলাল দেওয়ান সেতু নির্মাণের ফলে নানিয়ারচরের সঙ্গে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগে নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। তা সম্প্রসারিত না হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসী নানিয়ারচরের চুনীলাল দেওয়ান সেতুর সুফল সরাসরি ভোগ করতে পারছেন না।
নানিয়ারচরের সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা জয়সাগর চাকমা, খোকন চাকমাসহ অনেকে জানান, ওই সড়কটি নির্মিত না হওয়ার কারণে যাতায়াতসহ উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিয়ে যেতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও গুরুতর রোগীর যাতায়াতে
খুবই অসুবিধা হচ্ছে। সড়কটি নির্মিত হলে নানিয়ারচর, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলাবাসী যাতায়াতের সুযোগ কৃষকরা বিভিন্ন উৎপাদিত
পণ্য সহজেই জেলা সদরসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যেতে পারবেন।
সাবেক্ষ্যং ইউপির চেয়ারম্যান সুপন চাকমা বলেন, নদীপথ ও অনুন্নত সড়কপথে পণ্য পরিবহনের কারণে কৃষিপণ্য পরিবহনে অত্যধিক খরচ হওয়ায় কৃষক তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। এ ছাড়া যাতায়াতের ক্ষেত্রে মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মিনহাজ মুরশীদ বলেন, নানিয়ারচরের বড়পুল থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ হলে কৃষিপণ্য বিপণন ও পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্যও কাজে আসবে। পর্যটকরাও সাজেক থেকে স্বল্প সময় ও খরচে কক্সবাজার যেতে পারবেন।
রাঙামাটি সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে এ সড়কটি নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে সড়কটি সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ ২৪ ক ল ম ট র ন ন য় রচর র সড়ক য গ য গ উপজ ল ব স দ ই উপজ ল ব ঘ ইছড় উপজ ল র র জন য প রব ন র সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
বেহাল সড়ক
মুন্সিগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সংযোগ স্থাপনকারী প্রধান সড়কটি হলো মুক্তারপুর তেলের পাম্প থেকে মানিকপুর পর্যন্ত সড়ক। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বর্তমানে চরম বেহাল। যান চলাচল প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
কিছুদিন আগে ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটির সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই সড়কটি আগের চেয়ে আরও খারাপ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়সারাভাবে কাজ করেছে, ব্যবহার করেছে নিম্নমানের উপকরণ। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটি ভেঙে গিয়ে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে।
একটি জেলা শহরের প্রবেশপথের এমন করুণ অবস্থা সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি যানবাহন। ফলে বাধ্য হয়ে ভাঙা সড়ক দিয়েই মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
সড়কটির এমন করুণ অবস্থার পেছনে মূলত দুর্নীতিই দায়ী। কোথায় পানি জমে, কোথায় ঢালু রাখা প্রয়োজন—এসব মৌলিক বিষয়ও পরিকল্পনায় উপেক্ষিত ছিল। প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর জবাবদিহির অভাব ও নজরদারির ঘাটতির কারণেই আজ এ দুরবস্থা।
সড়কের খারাপ অবস্থার জন্য এবং এর পেছনের অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জ শহরের সাধারণ মানুষ এখন রাস্তায় নেমেছেন। তাঁরা প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে দ্রুত সংস্কার ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
মো. রাসেল ভূঁইয়া
খলিফাবাড়ী, সিপাহীপাড়া, মুন্সিগঞ্জ