বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিএল) আবারও জাপানের বিশ্বখ্যাত হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল আনবে। এখন থেকে এবিএল এককভাবে সরবরাহ সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) হোন্ডা কোম্পানির মোটরসাইকেল এনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থাগুলোতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করবে।

এ ব্যাপারে এটলাস বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) মধ্যে গত বুধবার একটি চুক্তি হয়েছে। ঢাকায় বিএসইসির সম্মেলনকক্ষে এ চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান এম এ কামাল বিল্লাহ; অর্থ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, বাণিজ্যিক, উৎপাদন ও প্রকৌশল পরিচালক; সচিব এবং এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

আজিবর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সুসুমু মরিসাওয়া, প্রধান বিপণন কর্মকর্তা শাহ মুহাম্মদ আশেকুর রহমান, বিক্রয় ও বিপণন মহাব্যবস্থাপক হিরোনরি কিজিমা এবং জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক আহমেদ নাফিস আল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম এ কামাল বিল্লাহ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এবিএল বিশ্ববিখ্যাত জাপানি ব্র্যান্ড হোন্ডার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করেছিল। মাঝে স্বল্প বিরতির পরে আবারও হোন্ডাকে এবিএলের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছি। এ জন্য আমরা আনন্দিত। এই চুক্তির ফলে দেশের সব সরকারি দপ্তর/সংস্থা, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) অধীন সব পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সরকারি তহবিলে পরিচালিত এনজিওগুলো এবিএলের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে (ডিপিএম) হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নিতে পারবে। এর ফলে দেশীয় শিল্পের যেমন বিকাশ ঘটবে তেমনি বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে।’

বিএইচএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সুসুমু মরিসাওয়া বলেন, হোন্ডা যুক্তিসংগত মূল্যে সর্বোচ্চ মানের পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সমাজে গতিশীলতার আনন্দ ও স্বাধীনতা ছড়িয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ চুক্তির ফলে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

এবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান বলেন, এ চুক্তির ফলে হোন্ডা ব্র্যান্ডের সব মডেলের মোটরসাইকেল ডিপিএম প্রক্রিয়ায় এককভাবে এটলাস বাংলাদেশ সরবরাহ করবে। সব সরকারি দপ্তর ও সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী শতভাগ হোন্ডা ব্রান্ডের মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হবে। এতে এবিএল ও বিএইচএল উভয় প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসইস সরবর হ পর চ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তে ভারতের ইলেকট্রনিকস, জেনেরিক ওষুধ, গয়না ও অটো পার্টসসহ একাধিক খাত ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ এবং দেশটি সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বিষহ প্রকৃতির বাণিজ্য–প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার যে চেষ্টা ভারত করে আসছিল, এই ঘোষণা তার জন্য বড় ধাক্কা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরের পর থেকেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ ভূরাজনৈতিক কারণে তা এক রকম ভেস্তে গেল। প্রতিযোগীদের মধ্যে ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ ও জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি শুল্কহার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ২০২৪ সালে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৯২০ কোটি ডলারের।

তবে শুল্কের মূল প্রভাব নির্ভর করবে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ভারতের অবস্থানের সাপেক্ষে। কোন খাতে কত শুল্ক বসানো হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে নিচের খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—

রত্ন ও গয়নাশিল্প

ভারতীয় রত্ন ও গয়না রপ্তানিকারক পর্ষদ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক এই খাতের জন্য ‘গভীর উদ্বেগজনক’। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হবে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই খাত থেকে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি হয়। কিন্তু নতুন এই শুল্ক পুরো মূল্যশৃঙ্খলে—শ্রমিক থেকে বড় বড় উৎপাদক পর্যন্ত—ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।

ওষুধশিল্প

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে ভারত। এর বার্ষিক মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার। সান ফার্মা, ড. রেড্ডিজ, সিপলার মতো শীর্ষ ওষুধ কোম্পানিগুলোর আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে মার্কিন বাজার থেকে।

তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রতিটি ১০টি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে চারটিতেই ভারতীয় কোম্পানির ওষুধের পরামর্শ ছিল। সে বছর ভারতীয় ওষুধের কল্যাণে মার্কিন স্বাস্থ্য খাতের সাশ্রয় হয়েছিল ২২০ বিলিয়ন বা ২২ হাজার কোটি ডলার। ২০১২-২২ পর্যন্ত এই সাশ্রয়ের পরিমাণ ছিল মোট ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।

টেক্সটাইল ও পোশাক খাত

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান যেমন গ্যাপ, ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক, হোম ফ্যাব্রিক ও জুতা সরবরাহ করে ভারত। এই খাতের দাবি ছিল— ভিয়েতনাম বা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ওপর শুল্ক কম থাকুক।

কিন্তু কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মতে, এখন এই খাতকে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে হবে। ভারতের উৎপাদকেরা শুল্কে কোনো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবেন না। ভার্ডমান টেক্সটাইলস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মার্কিন বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে কার্যাদেশ কমছে। ওয়েলস্পান, ইন্ডো কাউন্ট, অরবিন্দ ফ্যাশনসের মতো কোম্পানিগুলোর অবস্থাও দুর্বল হবে।

ইলেকট্রনিকস

অ্যাপল কিছু আইফোন ভারতে তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে; এটা মূলত চীনের শুল্ক এড়ানোর কৌশল। কিন্তু এখন ভারতের ওপর যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকলে, তবে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষকদের মতে, ভারত থেকে আইফোন আমদানিতে যদি ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে অ্যাপলকে তার পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।

পরিশোধন ও জ্বালানি খাত

রিলায়েন্স, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে ভারত মোট অপরিশোধিত তেলের ৩৭ শতাংশের বেশি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে তারা এই তেল কিনছে। ফলে পরিশোধনাগারগুলো মুনাফা ধরে রাখতে পারছে। কিন্তু রাশিয়ার তেল আর পাওয়া না গেলে বা তা নিষিদ্ধ হলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। তাতে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলোর মুনাফা কমবে।

ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চলছে। আগামী অক্টোবরে তাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার আগ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হ‌বিগ‌ঞ্জের শাহজীবাজার কেন্দ্রে আগুন, ১৫ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ আসবে
  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • বিএসইসির কমিশনার হিসেবে সাইফুদ্দিনের যোগদান
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
  • সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
  • সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা