বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে না পেরে রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারাকে টেনেহিঁচড়ে কক্ষ থেকে বের করে তালা ঝুলিয়েছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতার অনুসারীরা। পরে তার চেয়ারটি ঝুলিয়ে রাখেন গাছের মাথায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দৃশ্য দেখা যায় স্কুলটির সামনে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মঞ্জু মনোয়ারা সমকালকে বলেন, ‘সভাপতি করার জন্য মাইনুল ইসলাম, বকুল ও মামুনুর রশীদ নামের তিনজনের নাম ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। পরে জেলা প্রশাসকের সুপারিশে শিক্ষা বোর্ড ৩ মার্চ মামুনুর রশীদকে সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দেয়। এরপর মাইনুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। বিদ্যালয় খোলার পর ৬ মে মিটিং ছিল। সেখানে মাইনুল ইসলামের লোকজন এসে আমার ওপর চড়াও হয়। মাইনুলের ভাই জমসেদ আলী ও বাবা আতর আলীসহ কয়েকজন আমাকে টেনেহিঁচড়ে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। এতে আমি বেশ আঘাতও পেয়েছি। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে আমার চেয়ার প্রথমে ডোবায় ফেলে দেয়। এরপর স্কুলের সামনের একটি গাছে ঝুলিয়ে রাখে।’ 
 
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ তালাবদ্ধ এবং তাঁর ব্যবহৃত চেয়ারটি বিদ্যালয়ের সামনের একটি গাছে ঝুলছে। স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ রানা জানিয়েছেন, পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুইটি পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে গত তিন দিন ধরে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চারটি তালা ঝুলছে।

জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বাগধানী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রহমান। তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পর চলতি বছরের ৩ মার্চ নতুন সভাপতি হন বিএনপির স্থানীয় নেতা মামুন অর রশিদ। তিনি নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের ঘনিষ্ঠজন।

অন্যদিকে, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাইনুল ইসলাম এই কমিটি মেনে নেননি। তিনি পৌর বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পরিচালনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছিল। ওই সভায় পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে সভা শুরুর আগেই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি, গালিগালাজ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তখন প্রধান শিক্ষককে কক্ষ থেকে বের করে চারটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ব্যবহৃত চেয়ার বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে তা গাছের মাথায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনার পর বুধবার প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ও পৌর যুবদলের সদস্য মো.

আতাউর, বাগসারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌর যুবদলের সদস্য মো. মকসেদ আলী, পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা এবং বাগধানী গ্রামের মাইনুলের ভাই জমসেদ ও বাবা আতর আলীর নাম রয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বাধা দিলে আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন এবং তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে কক্ষ থেকে বের করে দেন। এরপর কক্ষে তালা লাগিয়ে তাঁরা চলে যান এবং প্রধান শিক্ষক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেন।

প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, এটা বিএনপির নিজেদের দ্বন্দ্ব। বিদ্যালয়ের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। তালার কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফাইলসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মামুন অর রশিদ বলেন, মঙ্গলবার ছিল কমিটির সভা। আমরা যাওয়ার আগেই ওই ঘটনা ঘটে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি অফিস রুম তালাবদ্ধ।

সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা নজির বলেন, বাগধানীর স্কুলে বাগধানীর বাইরের লোককে সভাপতি বানানো ঠিক হয়নি। আমরা কোনো তালা মারিনি, কোনো ভাঙচুরও করিনি। 

পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম জানান, পরিচালনা কমিটির সভায় দুপক্ষের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটেছে। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ দ বন দ ব প র ব এনপ ব এনপ র স ব র কর মন য় র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে মাদ্রাসায় দফায় দফায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন

রাজশাহীতে একটি মাদ্রাসায় দফায় দফায় এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার একটি কক্ষে জুহায়ের তাজিম (১৬) নামে ওই কিশোর শিক্ষার্থীকে পর পর দুই দিন কয়েক দফায় বেধড়ক পেটানো হয়। এ ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এ নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।

জুহায়ের তাজিম রাজশাহী মহানগরের কয়েরদাঁড়া খ্রিস্টানপাড়া মোড় এলাকার মাইনজ ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের হিফজ মাদ্রাসা শাখার শিক্ষার্থী। মাদ্রাসার স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিম জেলার বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর সদরের মুগনি শাহের ছেলে।

আরো পড়ুন:

নবীনদের বরণ করে নিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপসহ অক্সফোর্ডে পিএইচডির সুযোগ জাবি ছাত্রীর

এ ঘটনায় তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মাদ্রাসার পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে এজাহার দায়ের করেছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘গত ১৩ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার ছেলেকে নির্মমভাবে শারীরিক নির্যাতন করেছেন। তিনি আমার ছেলের দুই হাত এবং দুই পায়ের উরু ও নিতম্বে বেত, পর্দার পাইপ ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এর ফলে আমার ছেলে মারাত্মকভাবে শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

‘‘এই ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইরিশ পারভীনকে জানানো হয়। তবে তিনি পদক্ষেপ নেননি। বরং তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান শুধু আমার ছেলেকেই নয়, মাদ্রাসার আরো অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত শারীরিক এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করে চলেছেন।’’ মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ইশতিয়াক, ইসমাইল এবং আবু সাঈদসহ অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্যাতিত শিক্ষার্থী তাজিমকে নির্যাতনের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘‘স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমান আমার বিরুদ্ধে একটি নোংরা অভিযোগ আনেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে শ্রেণিকক্ষ থেকে তিনি আমাকে ডেকে নেন। এরপর একটি ছোট নির্জন কক্ষে নিয়ে যান। বেত, পর্দার পাইপ এবং লাঠি দিয়ে আমাকে বেধড়ক পেটান। পরের দিনও তিনি আমাকে একইভাবে মারধর করেছেন। কক্ষটি মাদ্রাসার টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। এখানেই অন্য শিক্ষার্থীদেরও প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মসানসিকভাবে নির্যাতন করেন স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর।’’

তাজিমের মা জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘‘১৪ সেপ্টেম্বর আমরা বার বার ফোন দিলেও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ফোন ধরেনি। পরের দিন সন্ধ্যায় আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে গোপনে চলে আসে। এ সময় তাকে আসতে বাধা দেন পরিচালক আইরিস পারভীন এবং স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ। পরে একরকম জোর করে আমার ছেলে মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে আসে। ছেলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যথা। খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কম কথা বলছে। তাকে নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তার ওপর যারা নির্যাতন চালিয়েছেন, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় জোর দাবি জানাচ্ছি।’’

নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ রহমানকে ফোন দেওয়া হয়। না ধরলে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে নির্যাতনের ঘটনার বর্ণনা এবং থানার এজাহার দায়েরের বিষয়টি জানিয়ে মেসেজ দিলে তিনি সাড়া দেন। তিনি লেখেন, ‘‘অভিযোগ কবে, কে করেছে, একটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ।’’ এরপর তিনি আর কোনো উত্তর দেননি। ফোন দেওয়া হলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কারণে অভিযোগ সম্পর্কে তার পরিপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

কিশোর তাজিমকে নির্যাতনের বিষয়টি স্বীকার করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আইরিস পারভীন বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমার বাবা-মা অসুস্থ থাকার কারণে আমি বাসায় ছিলাম। এ সময় স্টুডেন্ট অ্যাম্বাসেডর ইমতিয়াজ শিক্ষার্থী তাজিমকে মারধর করেছেন। এর আগেও তিনি শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আমার কথা না মেনে আবারও নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। ইমতিয়াজকে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছি। আমি অনুততপ্ত এবং লজ্জিত। যেসব শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের পরিবারের কাছে আমি ক্ষমা চেয়েছি।’’

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/কেয়া/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সারা জীবনের লক্ষ্য হলো মৃত্যু’
  • ব্যালন ডি’অর জয়ে মেসির আর্জেন্টিনাকে ছুঁয়ে ফেলল ফ্রান্স
  • বিন্নি চালের পিঠার রেসিপি
  • বগুড়া আদালত চত্বর থেকে পালালেন জোড়া হত্যা মামলার আসামি
  • ফেনীতে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ট্রাকের ধাক্কা, চালকের সহকারী নিহত
  • ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ এখন রড-সিমেন্টের কারবারি
  • পাঁচ বছর পর সিপিএলে পঞ্চম শিরোপা জিতল নাইট রাইডার্স
  • পাবনায় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বেড়াবাসীর বিক্ষোভ
  • ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া
  • রাজশাহীতে মাদ্রাসায় দফায় দফায় শিক্ষার্থীকে নির্যাতন