বিশ্বখ্যাত ফুটবলার লিওনেল মেসির খেলা দেখেছেন? আপনি হয়তো দেখে থাকবেন, মেসি ধীরে খেলা শুরু করেন। ৯০ মিনিটের ফুটবল খেলায় সাধারণত বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বেশিরভাগ খেলোয়ার তাদের নৈপূণ্য দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর মেসি খেলা শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক মিনিট তেমন কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখান না। তাকে মাঝমাঠে ধীরপায়ে হাঁটতে দেখা যায় রক্ষণভাগের একেবারে কাছাকাছি অবস্থান নেন তিনি। এমনকি সতীর্থদের থেকেও দূরে থাকেন। মেসিকে খেলার শুরুতে প্রথমে হাঁটতে দেখা যায়, এরপর জগিংয়ের মতো করে দৌড়ান। এই সময়ের মধ্যে তিনি তার করণীয় ঠিক করে ফেলেন। এরপরে মাঠে শুরু হয় মেসি জাদু। সুতরাং আপনি যে স্বপ্ন পূরণে নেমেছেন ওই স্বপ্নের পথে বাঁধা কি কি, সেগুলো কতটুকু শক্তিশালী সেগুলো বুঝে নিজের গতি ঠিক করে নিন। বিশ্লেষণের জন্য শুরুটা ধীরে হওয়াই ভালো।
লিওনেল মেসি
স্বপ্নটি লিখে রাখুন: আপনি যে স্বপ্ন পূরণ করতে চান, সেটা লিখে রাখতে পারেন। এতে স্বপ্নটি সুনির্দিষ্টভাবে আপনার মনে জায়গা করে নেবে। এরপর বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য করণীয় ঠিক করুন। ডোমিনিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড.
আরো পড়ুন:
বন্ধু মানসিক চাপে থাকলে যা করতে পারেন
এক কড়াইয়ে রুটি সেঁকা ও তরকারি রান্নার ভিডিও ভাইরাল
নেতিবাচকতা এড়িয়ে চলুন: আপনি যদি মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করতে চান, তাহলে কি এমন কারো কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন যে কখনও চূড়ায় ওঠার চেষ্টাও করেনি?— নিশ্চয় না। স্বপ্ন পূরণে যারা সঠিক পরামর্শ দিতে পারবে না তাদের মতামত এড়িযে যান। এ ছাড়া যারা শুধু আপনার স্বপ্নকে ধ্বংস করতে চায় তাদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইবেন না।
সফল ব্যক্তিদের জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা নিতে পারেন: রোল মডেল খুঁজে বের করুন। সফল হওয়ার এটি একটি শক্তিশালী উপায়। তিনি হতে পারেন জীবিত বা মৃত, বিখ্যাত বা অজানা। ভাল মানুষদের জীবনের প্রতি গভীর মনোযোগ দিন।
নিজের স্বপ্নকে গুরুত্ব দিন: আপনি যে স্বপ্নকে বড় ভাবছেন, সেই স্বপ্ন অন্যদের কাছে বড় নাও হতে পারে। ওই বিষয় নিয়ে অনুশোচনা করবেন না। আপনি আপনার সফলতাগুলোর দিকে ফিরে তাকান। সেগুলো থেকে অনুপ্রেরণা নিন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
চলার পথ নিখুঁত হবে না: যত পরিকল্পনা করেই পথ চলা শুরু করুন না কেন, আপনার চলার পথ নিখুঁত হবে না। একটু একটু করে এগিয়ে যান। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল পদক্ষেপ নেওয়া। স্বপ্নকে স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করুন, এমন একটি জীবন কল্পনা করুন যা আপনি ভালোবাসেন।
সূত্র: মেরি ফোরলিও এবং আইডিয়াজ ডট টেড
ঢাকা/লিপি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া দুই তরুণকে সাগরপথে থাইল্যান্ডে পাচারের চেষ্টা
অমিত হাসান ও মানিক মিয়া। দুই তরুণের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ সদরে। মুন্সিগঞ্জেই তাঁদের পরিচয় হয় কক্সবাজারের এক বাসিন্দার সঙ্গে। তাঁরই আমন্ত্রণে দুজন কক্সবাজারে বেড়াতে যান। সেখানে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে টেকনাফে বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে অমিত ও মানিককে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন কক্সবাজারের ওই বাসিন্দা। এরপর পাচারকারীরা সাগরপথে থাইল্যান্ডে পাচারের জন্য দুজনকে টেকনাফের গহিন পাহাড়ের ভেতরের একটি আস্তানায় আটকে রাখেন। ২০ দিন পর র্যাব ও বিজিবির যৌথ অভিযানে তাঁরা উদ্ধার হয়েছেন।
টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়ার গহিন পাহাড় থেকে গতকাল রোববার উদ্ধার করা হয় অমিত হাসান ও মানিক মিয়াকে। কেবল এই দুজন নয়, পাহাড়ের ওই আস্তানা থেকে নারী-শিশুসহ আরও ৮২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সাগরপথে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাচারের জন্য আস্তানাটিতে জড়ো করা হয়েছিল বলে জানান র্যাব-বিজিবির কর্মকর্তারা। অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মানব পাচারকারীদের আস্তানা থেকে ৮৪ জনকে উদ্ধারের বিষয়ে আজ সোমবার দুপুরে টেকনাফ ২ বিজিবির সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান ও র্যাব-১৫–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসান অভিযানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
বিজিবি-র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, উদ্ধার হওয়া ৮৪ জনের মধ্যে অমিত হাসান ও মানিক মিয়াকে জোর করে পাচারকারীদের ওই আস্তানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়। অন্যদের আস্তানাটিতে নিয়ে আসা হয় নানা প্রলোভনে। এর মধ্যে অনেককে মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ডে উন্নত জীবনযাপন ও চাকরির প্রলোভন দেখানো হয়েছে। কয়েকজন নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসা হয়। উদ্ধার করা ৮৪ জনের ৬৬ জনই রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা।
বিজিবি কার্যালয়ে অমিত হাসান ও মানিক মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। দুজন বলেন, মো. নূর নামের কক্সবাজারের এক বাসিন্দা কিছুদিন তাঁদের এলাকায় ছিলেন। নূরের আমন্ত্রণে ২ সেপ্টেম্বর দুজন কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। ওই দিন কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার মরিচ্যা এলাকায় নূরের বাড়িতে যান তাঁরা। এরপর তাঁদের টেকনাফে বেড়াতে নেওয়ার কথা বলে একটি অটোরিকশায় তুলে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন নূর।
অমিত হাসান ও মানিক মিয়া বলেন, সাগরপথে থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পাহাড়ের আস্তানাটিতে তাঁদের আটকে রাখেন পাচারকারীরা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলেই মারধর করা হতো।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই আস্তানায় অভিযান শুরুর পর পাচারকারীরা যৌথ বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে তিনটি গুলি ছোড়েন। এ সময় কিছু ভুক্তভোগীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে পালাতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে পুরো পাহাড়টি ঘিরে ফেলে কৌশলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়। তিনি আরও বলেন, প্রায় ১২ ঘণ্টা ধরে এই অভিযান চালানো হয়। এ সময় তিনজনকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
অভিযানে আটক তিনজন হলেন টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের কচ্ছপিয়া এলাকার সালামত উল্লাহর ছেলে আবদুল্লাহ (২১); রাজরছড়ার আবুল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০), একই এলাকার মো. ফিরোজের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২০)। তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, একটি একনলা বন্দুক, একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি দেশি রামদা, একটি চাকু ও তিনটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে।
মুঠোফোনে বিয়ের পর সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাঅভিযানে উদ্ধার হওয়া এক তরুণীর সঙ্গে কথা হয় টেকনাফ ২ বিজিবির সদর দপ্তরে। মেহেদি দিয়ে নকশা আঁকা তাঁর হাতে। তিনি জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ায় থাকা এক রোহিঙ্গা তরুণের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর বিয়ে হয়েছে। এরপর ‘স্বামী’ তাঁকে সাগরপথে মালয়েশিয়া চলে যাওয়ার জন্য কিছু লোকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তাঁকে গহিন পাহাড়ের আস্তানাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তরুণী আরও বলেন, সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর কাছে কোনো টাকা দাবি করা হয়নি। মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর তাঁর স্বামীর কিছু টাকা দেওয়ার কথা ছিল।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে এ পর্যন্ত টেকনাফে ৬৫ মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে ১৬১ জনকে। শীত মৌসুমে মানব পাচারের ঘটনা বেশি ঘটে।