২৯ মে শেষ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে এবার বেশ কয়েকটি ম্যাচে ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। রেফারির সিদ্ধান্ত মানতে না পারা অনেক ফুটবলার মাঠে বাজে আচরণ করেছেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানান অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত বুধবার রাতে সভা করে বাফুফে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। 

তাদের দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো শুক্রবার বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তাতে দেখা গেছে, বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলার সাদ উদ্দিন, সোহেল রানা এবং সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে বসুন্ধরা কিংস, আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে।

গত ১২ এপ্রিলে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডানের মধ্যকার ম্যাচে মোহামেডানের সমর্থকরা স্মোক ফ্লেয়ার জ্বালানোর কারণে দলটিকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই ম্যাচেই কিংসের সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে তাদেরও জরিমানা গুনতে হচ্ছে ১ লাখ টাকা। 

ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে গত ২৬ এপ্রিল আবাহনী ও মোহামেডানের ম্যাচে সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খলতায় মোহামেডানকে আরও ১ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা গুনতে হবে। গত ২ মে কুমিল্লায় মোহামেডান ও বাংলাদেশ পুলিশ এফসির মধ্যকার খেলায় অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের কারণে পুলিশের দানিলো অগাস্তো ও মান্নাফ রাব্বিকে এবং মোহামেডানের ইমানুয়েল সানডে ও মো.

সুজনকে সতর্ক করেছে কমিটি। 

ওই ম্যাচে মোহামেডান সমর্থক আওলাদ হোসেন (ইমাম) অবৈধভাবে মাঠে ঢুকে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ধাক্কা দেন এবং মারতে তেড়ে যান। আওলাদকে পরবর্তী এক বছরের জন্য বাফুফে কর্তৃক আয়োজিত যে কোনো প্রতিযোগিতায় স্টেডিয়ামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি মোহামেডানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি।

২ মে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত স্বাগতিক বসুন্ধরা ও আবাহনীর ম্যাচে হয়েছিল গন্ডগোল। সে ম্যাচে বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সি অশোভন অঙ্গভঙ্গি করায় তাঁকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্ণ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সকল খেলা থেকে নিষিদ্ধ বা বিরত থাকতে হবে। 

ডিফেন্ডার সাদ উদ্দিন ম্যাচ কমিশনারকে ধাক্কা দেওয়াসহ অন্যান্য কারণে কারণ দর্শাও নোটিশ পেয়েছেন। তিনিও পূর্ণ সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত সব ম্যাচ থেকে নিষিদ্ধ থাকবেন। একই দলের মিডফিল্ডার সোহেল রানা ও আবাহনীর শাহীন আহমেদ দুই ম্যাচ সাসপেন্ড হয়েছেন। কিংসের ম্যানেজার ওয়াসিমুজ্জামানকে রেফারির অনুমতি না নিয়ে মাঠে ঢোকার কারণে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার

নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসটি পালিত হয় প্রতিবছর ২৬ জুন। এই দিন আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেসব ব্যক্তিকে, যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার। বাংলাদেশের সংবিধান, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এবং জাতিসংঘ নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক শাস্তির অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে কনভেনশনের আলোকে কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি ও ভুক্তভোগী ব্যক্তির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জোরাল দাবি আমরা সব সময় জানিয়ে আসছি। 

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরে সাতুরিয়া গ্রামের স্কুলছাত্র মো. লিমন হোসেনকে র‌্যাবের একটি দল গুলি করেছিল। পরে তাঁর বাম পা কেটে ফেলতে হয়। এমনকি ঘটনার পর পরিবারকে কোনো তথ্য না দিয়ে লিমনকে বেআইনিভাবে আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মিথ্যা মামলা করা হয়, যা আদালতে খারিজ হয়ে যায়। একই বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, র‌্যাব সদরদপ্তর ও ঝালকাঠির র‌্যাব কার্যালয় থেকে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি করা হলেও আজ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি। ভুক্তভোগী লিমন এখনও ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য লড়াই করে যাচ্ছেন।
২০১৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকার পল্লবীতে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জনি ও তাঁর ভাই রকিকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের ফলে জনির মৃত্যু ঘটে। থানায় মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানালে জনির ভাই মো. ইমতিয়াজ হোসেন রকি ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩’-এর অধীনে আদালতে মামলা করেন। ছয় বছর ধরে বিচার চলার পর ২০২০ সালে এ আইনের অধীনে দেশের প্রথম রায় ঘোষিত হয়। তিন পুলিশ সদস্যকে যাবজ্জীবন ও দুই পুলিশ সোর্সকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল উচ্চ আদালতে বিচারাধীন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে এ ধরনের নির্যাতন বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ৩১ (আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার), ৩২ (জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার-রক্ষণ), ৩৩ (গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) এবং ৩৫ (বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ) অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে প্রণীত ‘নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন’-এর লঙ্ঘন। এ ছাড়াও বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচারকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা-সংবলিত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যুগান্তকারী রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাস্তবে এ আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। 
এই ঘাটতি প্রমাণ করে– নির্যাতন প্রতিরোধে শুধু জাতীয় আইন ও বিচার ব্যবস্থাই যথেষ্ট নয়। অভ্যন্তরীণ প্রতিকার ব্যবস্থা দুর্বল বা অকার্যকর হয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও জবাবদিহি কাঠামো অপরিহার্য হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশ ১৯৯৮ সালে ‘নির্যাতনের এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক, শাস্তির অবমাননাকর আচরণের বিরুদ্ধে কনভেনশন’ অনুস্বাক্ষর করলেও এখনও অনুচ্ছেদ ২১ (রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অভিযোগ প্রক্রিয়া), ২২ (ব্যক্তিগত অভিযোগের অধিকার) ও ২২-এর জন্য আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা দেয়নি এবং অনুচ্ছেদ ২০ (নির্যাতন বিষয়ে কমিটির গোপন তদন্ত) পালনে এখনও রাজি বা সক্রিয় হয়নি। একই সঙ্গে ‘নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐচ্ছিক প্রটোকল’ এখনও অনুমোদন না করায় বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন জাতীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গঠিত হয়নি, যার মাধ্যমে আটকস্থলে নিয়মিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হতো। এটা অনুমোদন করলে কার্যকর ও প্রতিরোধমূলক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যবেক্ষণ কাঠামো গড়ে উঠত, যা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো ঘটনাগুলো প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। জাতিসংঘ সনদটির উল্লিখিত অনুচ্ছেদগুলোতে আলাদাভাবে সম্মতিমূলক ঘোষণা এবং ঐচ্ছিক প্রটোকল অনুমোদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং জনগণের জন্য ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে সংঘটিত সব নির্যাতনের সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত এবং ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই হবে। এ ধরনের নির্যাতন প্রতিরোধে বিদ্যমান আইন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারসহ নির্যাতন, অন্যান্য নিষ্ঠুর-অমানবিক শাস্তি এবং অবমাননাকর আচরণ প্রতিরোধে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সনদে অনুস্বাক্ষর ও অনুমোদনের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে সুপ্রতিষ্ঠিত কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব। এতে দেশের জনগণকে এমন নির্যাতন থেকে সুরক্ষা প্রদান এবং ইতোপূর্বে সংঘটিত নির্যাতন ও নির্যাতনে মৃত্যুর যথাযথ জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

আয়েশা আক্তার, মোহাম্মদ রাকিনুল হাকিম আলভী, ফাহাদ বিন সিদ্দিক: যথাক্রমে আইন বিশেষজ্ঞ, পরামর্শক ও জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট-ব্লাস্ট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচার
  • শিশুর কান্না ট্যানট্রাম নাকি মেল্টডাউন? দুটির পার্থক্য জেনে রাখা এত জরুরি কেন
  • টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন ও বিশৃঙ্খলা করায় ৫ পর্যটককে কারাদণ্ড