পুলক মজুমদার ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মকর্তা পদে চাকরি করতেন। এরপর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পড়ে থাকেন প্রায় তিন বছর। একই সঙ্গে জন্ডিস ও থাইরয়েডের রোগে আক্রান্ত হন তিনি। সুস্থ হওয়ার পর ব্যাংকে আবার চাকরির সুযোগও হয়। কিন্তু চেয়েছিলেন এমন একটা কাজ করবেন, যেটা ঘরে বসে করতে পারবেন। এমন সময় শুরু হয় করোনা। ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন তখন পুলক। জানতে পারেন ফাইভআর মাকের্টপ্লেসের কথা, যেখানে কাজ জানলে কাজের অভাব হয় না। আর ঘরে বসে কাজের সুযোগও আছে। শেখার জন্য নেমে পড়লেন নিজে নিজেই ফ্রিল্যান্সিং পেশায়। ইউটিউব থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, জানতে থাকেন, শিখতে থাকেন। একসময় দক্ষও হলেন কাজের সুযোগও হলো। ব্যাংকের চাকরিটা পরে আর করা হলো না। পূর্ণকালীন ফ্রিল্যান্সার হয়ে এখন মাসে আয় করেন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা।

শুরুর গল্প

পুলক মজুমদার ২০০৭ সালে খুলনা তেরখাদা উপজেলার ইন্দুহাটি এনসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৯ খুলনা পাবলিক কলেজ এইচএইসি পাস করে ঢাকায় চলে আসেন ২০১০ সালে। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, বিষয়ে ২০১৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। বাবা দিলীপ মজুমদার পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মা সুমতি মজুমদার গৃহিণী। স্ত্রী চন্দনা বিশ্বাস, গৃহিণী। শ্রেয়া মজুমদার নামের সাত মাসের একটা মেয়েও আছে। থাকেন ঢাকার সাভারের পাথালিয়ায়।

পুলক মজুমদার বলেন, ‘২০১৭ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগদান করি। এক বছর পরে চাকরি ছেড়ে দিই অসুস্থতার কারণে। কেউ বলেনি আমি বেঁচে থাকব। সৃষ্টিকর্তার দয়ায় তিন বছর চিকিৎসার পরে সুস্থ হই। ভেবেছিলাম আবার ব্যাংকের চাকরিতেই ঢুকব। কিন্তু এর মধ্যে আসে কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মহামারি। করোনার মাঝখানে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটা শুনে এটা নিয়ে গবেষণা শুরু করলাম।’

২০২১ সালে জুন মাসে ফাইভাআরে নিজের আইডি তৈরি করেন পুলক মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আমার কাজের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেই বই লেখা, কোর্স লেখা, প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, বইয়ের বিজ্ঞাপন তৈরি করা, ভিডিও কোর্স তৈরি করা। একই সালের নভেম্বর মাস থেকে কাজ পাওয়া শুরু করলাম। এর পর থেকে আমার আয় বাড়তে থাকে। মাসে আমি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করি।’

ব্যক্তিগত যোগাযোগপুলক মজুমদার.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, তবে কখনো কোচিং বা প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেননি। বাবার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে তাঁর শিক্ষাভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এবার তিনি যাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সেখানে।

ঢাবি থেকে জাবি, সেখান থেকে অক্সফোর্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সামিয়া ইসলাম। কিন্তু তাঁর মনে ছিল অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাই এক বছর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের প্রথম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। স্নাতকোত্তরের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোফাইল। অক্সফোর্ড ছাড়াও ইয়েল, ওয়ারউইক ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডাক দিয়েছিল। তবে তত্ত্বীয় অর্থনীতিতে বিশেষ আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত অক্সফোর্ডকেই বেছে নেন।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

শুরু থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন সামিয়া ইসলাম। স্নাতকে ৩.৯২ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯১ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুব পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলাম না। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তাম। তবে ক্লাস কখনো মিস করিনি। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাই আমাকে ভালো ফল করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।’

একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত গবেষণা কার্যক্রমেও। ইন্টার্নশিপ করেছেন, ভাষাগত পরীক্ষা (আইএলটিএস এবং জিআরই) প্রস্তুতিও নিয়েছেন আগেভাগেই। সব মিলিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাঁকে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম

গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন সামিয়া ইসলাম। ইতিমধ্যে তাঁর একটি গবেষণাপত্র ও কনফারেন্স পেপার প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। এ ছাড়া সানেমে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সক্রিয় ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (জিইউডিএস) সহসাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, এসব কার্যক্রম ব্যক্তিগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরি করে।

আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা২২ ঘণ্টা আগে

পরিবারের প্রেরণা

শৈশব থেকেই কোচিং-প্রাইভেটের বদলে বাবার কাছে পড়াশোনা করেছেন সামিয়া ইসলাম। বাবাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মনে করেন। সামিয়া বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আসার ব্যাপারে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছেন। এতে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।’

নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তাও সামিয়ার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি। সামিয়া বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা কঠিন হতো।’

আরও পড়ুনবেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ক্ষমতা হারাল পরিচালনা পর্ষদ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তরুণদের জন্য শিক্ষা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সামিয়ার অভিজ্ঞতা একটি পথনির্দেশের মতো। তিনি মনে করেন, আগে ঠিক করতে হবে কোনো বিষয়ে পড়তে চান, তারপর সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক ফল ভালো হলে সুযোগ অনেক বেড়ে যায়, তবে গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত থাকা জরুরি। আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসওপি–স্টেটমেন্ট অব পারপোজ, যা মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আর ভাষাগত পরীক্ষাগুলো আগেভাগেই দিয়ে রাখা উচিত, নয়তো শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োতে সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বিশেষ পরামর্শ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

সামিয়া ইসলাম এখনো চূড়ান্তভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি অর্থনীতির জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিবারের সমর্থনে সামিয়ার এ অর্জন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানুষের নির্মমতার শিকার মহাবিপন্ন বনরুই
  • জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন