বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমাহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। চেম্বার চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ আলী আল নুয়াইমি রাস আল খাইমাহতে ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন সম্ভাবনা তুলে ধরে আমিরাতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ট্রেড ফেয়ার ও ব্যবসায়ী সম্মেলনে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের অনুরোধ জানান।

সোমবার দুবাই ও উত্তর আমিরাত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মো.

রাশেদুজ্জামান রাস আল খাইমাহ চেম্বারের চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ আলী আল নুয়াইমির সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারের লক্ষ্যে সাক্ষাৎ করেন। এসময় চেম্বার চেয়ারম্যান আমিরাতের উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশ ও রাস-আল-খাইমাহর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মাঝে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তার চেম্বারের সহযোগিতার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেন।

সাক্ষাতকালে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল রাশেদুজ্জামান বাংলাদেশের সিরামিক শিল্প, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পাটশিল্প, কৃষিজাত পণ্য ও হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমিরাতি ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানান। পাশাপাশি চেয়ারম্যান নুয়াইমিকে তার নেতৃত্বে রাস আল খাইমাহ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এর আগে কনসাল জেনারেল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের গৃহীত বিনিয়োগবান্ধব নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। রাস আল খাইমাহর ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশের সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগের লক্ষ্যে চেয়ারম্যান নুয়াইমির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাস আল খাইমাহ চেম্বার ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে আরএকে চেম্বারের এ্যাক্টিং ডিরেক্টর জেনারেল ড. আহমেদ রাশেদ আলশেমেইতি, সিনিয়র ইকোনোমিষ্ট আসেম বানি ফারেস, বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর আশীষ কুমার সরকার ও প্রথম সচিব (প্রেস) মো. আরিফুর রহমান সহ চেম্বারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় আম র ত

এছাড়াও পড়ুন:

এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের

এশিয়া মহাদেশ এখন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম কেন্দ্র। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগেরই অবস্থান এ অঞ্চলে। ফলে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোও বর্তমানে এশিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বেশ সচেতন ও তৎপর। তারা সময়-সময় এশিয়ার ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে।

বিভিন্ন শ্রেণিতে ব্যবসায়ীদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত ফোর্বস ম্যাগাজিন। তার মধ্যে সর্বশেষ একটি হচ্ছে, এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী। চলতি নভেম্বর মাসে ফোর্বস ম্যাগাজিন এশিয়ার ২০ শক্তিশালী নারী ব্যবসায়ীকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রথম স্থানে আছেন ফিলিপাইনের মাইবেল ভি. আরাগন-গোবিও। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান পেয়েছেন যথাক্রমে মালয়েশিয়ার সারিনা চিয়াহ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার চুং ইউ-ক্যাং।

এরমধ্যে সর্বোচ্চ তিন জন করে রয়েছেন ভারত ও হংকংয়ের। ফিলিপাইন, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও চীনের দুজন করে আছেন। এ ছাড়া শীর্ষ বিশে একজন করে রয়েছেন মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের।

এই তালিকায় এশিয়ার ডজনখানেক দেশের নারী ব্যবসায়ী স্থান পেয়েছেন। ডেটা সেন্টার, সেমিকন্ডাক্টর ও বিরল খনিজের মতো খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করছেন তাঁরা। কেউ কেউ পারিবারিক ব্যবসার ঐতিহ্য নতুনভাবে ঢেলে সাজিয়েছেন—সম্পদ, আতিথেয়তা, খুচরা ও ক্রীড়া সরঞ্জামের মতো খাতের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

অর্ধেকের বেশি নারী পেশাদার ব্যবস্থাপক—ব্যাংকিং, ভোক্তা পণ্য ও পরিবহন খাতে তাঁদের সফলতা প্রমাণিত। তাঁদের মধ্যে তিনজন প্রথম প্রজন্মের উদ্যোক্তা। একজন ইতিমধ্যেই দুটি লাভজনক ইউনিকর্নের প্রতিষ্ঠাতা। দেখে নেওয়া যাক, এই ২০ নারীর মধ্যে শীর্ষ ৫ জন কারা এবং তাঁরা কী করছেন।

১. মাইবেল ভি. আরাগন-গোবিও, বয়স: ৫২, দেশ: ফিলিপাইন

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রবিনসন্স ল্যান্ড নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ও সিইও হিসেবে তারা মাইবেল ভি. আরাগন-গোবিওকে নিয়োগ দেয়। রবিনসন্স ল্যান্ড জে জি সামিটের সম্পত্তি ব্যবসা। এটি ফিলিপাইনের অন্যতম বৃহৎ সংস্থা। ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেওয়া প্রথম নারী তিনি।

আরাগন-গোবিও ১৯৯৩ সালে রবিনসন্স ল্যান্ডে প্রশাসনিক সহকারী হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি কোম্পানির লজিস্টিকস ব্যবসা এবং আবাসিক ও অফিস প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন।

মে মাসে তিনি কোম্পানির ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা পেশ করেন—পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবসা ২২০ কোটি ডলারে সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যমাত্রা। আরও যেসব পরিকল্পনা তিনি করেছেন, সেগুলো হলো ২০৩০ সালের মধ্যে নিট আয় দ্বিগুণ করা, বিপণিবিতানের সংখ্যা ৫৫ থেকে ৬৯-এ বৃদ্ধি করা ও অফিসের পরিসর ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। সেই সঙ্গে হোটেলকক্ষ ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ করা, লজিস্টিকস সক্ষমতা দ্বিগুণ করা ইত্যাদি।

২. সারিনা চিয়াহ, বয়স ৫০, মালয়েশিয়া

জানুয়ারি মাসে সারিনা চিয়াহ সানওয়ের নির্বাহী উপ–চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। এটি তাঁর বাবার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান। এই পদে আসার আগে কোম্পানির আবাসন থেকে স্বাস্থ্যসেবা খাতে ৩০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। তিনি কোম্পানির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক সম্প্রসারণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে কোম্পানিটি ইতিহাসের বৃহত্তম অধিগ্রহণ করেছে। ৫৭ কোটি ৩০ লাখ ডলারে এমসিএল ল্যান্ড নামে এক কোম্পানি অধিগ্রহণ করেছে তারা।

৩. চুং ইউ-ক্যাং, বয়স: ৫৩, দেশ: দক্ষিণ কোরিয়া

চুং ইউ-ক্যাং গত বছর দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট স্টোর চেইন শিনসেগে ইনকরপোরেশনের চেয়ারম্যান হন। তাঁর লক্ষ্য, কোম্পানির উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার ফিরিয়ে আনা। এটি তাঁর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি আমদানি করা সৌন্দর্য পণ্য থেকে সরে এসে স্থানীয় পণ্যে জোর দিচ্ছেন। এমনকি সিউল শহরের উচ্চবিত্তের এলাকায়ও স্থানীয় ব্র্যান্ডের সৌন্দর্য পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র খুলেছেন। এ রকম নানা উদ্যোগের কারণে ব্যবসায় গতি আসছে।

৪. লানি দার্মাওয়ান, বয়স-৬৩, দেশ: ইন্দোনেশিয়া

চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে ব্যাংক সিআইএমবির দায়িত্ব নিয়েছেন লানি দার্মাওয়ান। এটি ইন্দোনেশিয়ার সপ্তম বৃহত্তম ব্যাংক। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকটি ধারাবাহিকভাবে চারবার রেকর্ড নিট মুনাফা অর্জন করেছে। তিনি ব্যাংকের ঋণ পোর্টফোলিও পুনর্বিন্যস্ত করেছেন। সেই সঙ্গে ক্ষুদ্র ও মধ্যম ব্যবসা এবং উচ্চ মার্জিনের রিটেইল ঋণের অংশ ৪৫ শতাংশে উন্নীত করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে ব্যাংকের শেয়ারের দাম ৭৫ বেড়েছে। যদিও বাজারের গড় বৃদ্ধির হার ২৭ শতাংশ। দার্মাওয়ান ইন্দোনেশিয়ায় সিআইএমবি গ্রুপের প্রথম নারীপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

৫. এমিলি হং, বয়স: ৬৮, দেশ: তাইওয়ান

৬৬ বছর বয়সী এমিলি হং তাইপেভিত্তিক উইওয়াইনের চেয়ার ও প্রধান কৌশল কর্মকর্তা। এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সার্ভার সেবা দেওয়ায় এই কোম্পানি অগ্রণী। এ ক্ষেত্রে কোম্পানির উত্থানের মূল স্থপতি তিনি। এমিলি ২০১২ সালে উইস্ট্রনের সাবসিডিয়ারি হিসেবে উইওয়াইন প্রতিষ্ঠা করেন। লক্ষ্য ছিল, প্রযুক্তির জগতে ক্লাউড অবকাঠামোর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো। এ প্রক্রিয়ায় ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে কোম্পানির রাজস্ব ১৬৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। কর–পরবর্তী মুনাফা বৃদ্ধি পায় ১৩৩ শতাংশ। শেয়ারের মূল্য ৬১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বাজার মূলধনও অনেকটা বেড়েছে এই কোম্পানির।

এ তালিকায় আরও আছেন থাইল্যান্ডের ৬০ বছর বয়সী ক্যাটিয়া ইন্দরবিজয়া, ভারতের ৪২ বছর বয়সী রুচি কালরা, তাইওয়ানের ৭৪ বছর বয়সী মার্গারেট কাও, সিঙ্গাপুরের ৬১ বছর বয়সী জেমি খো, ভারতের ৩৬ বছর বয়সী মাসি কিরলোসকার টাটা, হংকংয়ের ৪৮ বছর বয়সী কুওক হুই কুওয়ং, অস্ট্রেলিয়ার ৬৩ বছর বয়সী আমানদা লাকাজে, ভারতের ৫৩ বছর বয়সী প্রিয়া নায়ার, হংকংয়ের ৫৪ বছর বয়সী ম্যাগি এনজি, সিঙ্গাপুরের ৫০ বছর বয়সী পিএনজি চিন ই, চীনের ৫৭ বছর বয়সী জেইন সান, হংকংয়ের ৬০ বছর বয়সী জেনি ইয়ুং, জাপানের ৩৮ বছর বয়সী অ্যালিসা ইয়োনইয়ামা, চীনের ৬৫ বছর বয়সী জৌ চাওনান, ফিলিপাইনের মারিয়ানা জোবেল দে আয়ালা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ