কন্টেইনার জট নিরসনে অখালাসকৃত পণ্য দ্রুত নিলামে বিশেষ আদেশ জারি
Published: 15th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য জট নিরসন ও খালাস প্রক্রিয়া সহজিকরণে ‘দ্রুত নিলাম, বিলিবন্দেজ ও ধ্বংস কার্যক্রম সংক্রান্ত বিশেষ আদেশ, ২০২৫’ জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গতকাল বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আদেশ জারি করা হয়।
সংস্থাটি জানিয়েছে, দ্রুত পণ্য খালাস, শ্রম, অর্থ ও কর্মঘণ্টা সাশ্রয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় রোধ, নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরসন, ভৌত অবকাঠামো, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কন্টেইনার জট হ্রাসসহ বন্দরের সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এ আদেশের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘২০১৩ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অখালাসকৃত কন্টেইনার জট বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছে। দীর্ঘদিনের পুরানো কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্য বিস্ফোরণ ঝুঁকিসহ বন্দরের সামগ্রিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করেছে। এসব ঝুঁকি নিরসনে বিদ্যমান প্রমিত নিলাম প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ এড়ানো সম্ভব হয় না। শর্তযুক্ত বা নিয়ন্ত্রিত পণ্য খালাসে জটিলতা, অনিষ্পন্ন মামলা, নিলামের দরদাতা কর্তৃক পণ্য খালাস না করা, লজিস্টিকসের অভাবসহ নানাবিধ কারণে কর্তৃপক্ষ স্বল্পতম সময়ে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিলাম ও নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যের (যানবাহন ব্যতীত) বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা ও ধ্বংস কার্যক্রম প্রক্রিয়া সহজিকরণে নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা সম্বলিত বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।’
নিষ্পত্তিযোগ্য পণ্যসমূহের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ ব্যতীত প্রথম নিলামে (বিশেষ ক্ষেত্র ব্যতীত) প্রাপ্ত সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রয় করা যাবে;
আমদানি নীতি বা রপ্তানি নীতি অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে, নিয়ন্ত্রিত বা নিষিদ্ধ অথবা পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হওয়ার কারণে বা অন্য কোনো কারণে নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় অথবা সম্ভব হয় নাই তা ধ্বংস বা নিষ্ক্রিয়করণের লক্ষ্যে নিলাম ব্যতীত বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট বিনামূল্যে হস্তান্তর করা যাবে;
দুইটি নিলামের মাধ্যমেও কোনো পণ্য বিক্রয় করা সম্ভব না হলে অথবা দরপত্র পাওয়া না গেলে তৃতীয় নিলাম ব্যতিরেকে ব্যাপক প্রচার প্রচারণাপূর্বক পণ্য গ্রহণে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের নিকট সর্বোচ্চ প্রস্তাব মূল্যে বিক্রয় এবং
পরীক্ষণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ব্যবহার উপযোগিতা রয়েছে মর্মে প্রত্যয়নকৃত মেয়াদোত্তীর্ণ বিপজ্জনক পণ্য বা কেমিক্যাল জাতীয় পণ্যসমূহ প্রকৃত ব্যবহারকারী বা বিশেষায়িত সংস্থা বা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট সর্বোচ্চ অফার মূল্যে বিক্রয়ের বিধান রাখা হয়েছে।
নিলাম প্রক্রিয়া সহজিকরণে জারিকৃত এ আদেশ বাস্তবায়িত হলে বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা কন্টেইনার জট কমবে এবং বন্দরের কার্যক্রম নির্বিঘ্ন, সহজ, সময় সাশ্রয়ী, আমদানি-রপ্তানিকারকদের খরচ কমাসহ সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এতে বন্দরের সুবিধাভোগীরা সুফল ভোগ করবে বলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আশা করছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনব আর ম প রক র য় ব যত ত ন রসন
এছাড়াও পড়ুন:
জিম্মিদের উৎসর্গ করে হলেও যুদ্ধে জিততে চান নেতানিয়াহু, বিভক্তি বাড়ছে ইসরায়েলে
গাজা উপত্যকায় হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, নাকি সেখানে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তথাকথিত ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চলবে, এ প্রশ্নে দিন দিন বিভক্ত হয়ে পড়ছেন ইসরায়েলের জনগণ। তবে দেশটির সরকার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় পূর্ণ বিজয় চাইছে। সে ক্ষেত্রে সরকার দ্বিতীয় বিকল্পটিই বেছে নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ক্রমাগত চাপ বাড়ছে। প্রথমে এই বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ঠেকাতে না পারায় চাপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। এরপর দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা যুদ্ধের অবসান না ঘটাতে পারা বা যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা কেমন হবে, তার রূপরেখা তুলে ধরতে না পারার চাপে আছেন তিনি।
গত মার্চে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একতরফাভাবে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাতিল করেন। চুক্তি অব্যাহত থাকলে গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। যুদ্ধবিরতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তটি যেন ইসরায়েলি সমাজের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরও প্রকট করে তুলেছে। কারণ, সরকারবিরোধীরা বুঝে গেছেন, গাজা থেকে জিম্মিদের জীবিত ফেরার সম্ভাবনা দিন দিন ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একাধিক ইউনিট থেকে সরকারের উদ্দেশে একের পর এক খোলাচিঠি লেখা হয়েছে। এগুলোতে সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
ইসরায়েলের সাধারণ জনগণের মধ্যেও অসন্তোষ দেখা গেছে। মে মাসের শুরুর দিকে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক তেল আবিবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। গাজায় সামরিক অভিযান জোরদার করতে ৬০ হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা (আপৎকালের জন্য মজুত সেনা) মোতায়েনে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
সমালোচকদের মতে, যুদ্ধ চলমান থাকায় নেতানিয়াহু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা বিতর্ক ও দুর্নীতির অভিযোগ থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি জোট সরকারের কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর সমর্থনও ধরে রাখতে পারছেন। এই দলগুলো স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হওয়ার আগপর্যন্ত তারা যুদ্ধের সমাপ্তি মেনে নেবে না। ‘পূর্ণাঙ্গ বিজয়’ অর্জিত না হলে তারা জোট থেকে সরে যাবে ও নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটাবে।২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যে ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বড় অংশই নারী ও শিশু।
গত এপ্রিলের মাঝামাঝি ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেন। চিঠিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে কোনো জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুর জন্য নয়; বরং নেতানিয়াহুর ‘ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ’ রক্ষার জন্যই এ যুদ্ধ চালানো হচ্ছে।
এই চিঠির পর ইসরায়েলের নৌবাহিনী, সামরিক বাহিনীর অন্যান্য অভিজাত ইউনিট, এমনকি ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদস্যরাও নিজেদের অসন্তোষ প্রকাশ করতে শুরু করেন।
নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু