রাজশাহীর তানোরে নিখোঁজের ২০ দিন পর এক যুবকের বস্তাবন্দী গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শনিবার সকালে উপজেলার হাবিবনগর এলাকায় শিব নদে কচুরিপানার ভেতর থেকে বস্তাবন্দী লাশ পাওয়া যায়। পরনে থাকা লুঙ্গি ও গেঞ্জি দেখে তাঁর লাশ শনাক্ত করেছে পরিবার। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত যুবকের নাম চিত্তরঞ্জন পাল (২৬)। হাবিবনগর পালপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম মনোরঞ্জন পাল। একমাত্র ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন তিনি তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। প্রেমঘটিত কারণে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ছয়জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন একই গ্রামের স্বপন চন্দ্র পাল (৫৮), তাঁর স্ত্রী ছবি রানী (৫০) ও কাজলী রানী পাল (৩০)। মামলার অন্য তিন আসামি স্বপনের ছেলে সুবোদ পাল (৩০), মেয়ে কামনা পাল (২৩) ও জেলার মোহনপুর উপজেলার পেয়ারপুর গ্রামের মো.

রাজু (৪৫)। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার কাজলী রানী পাল আসামি কামনা পালের চাচাতো ভাবি।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে কলেজছাত্রী কামনা পালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। উভয় পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হলে মনোরঞ্জন তাঁর ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে স্বপন চন্দ্র পালের বাড়িতে যান। তাঁরা বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন। কামনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে চিত্তরঞ্জনকে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক চলতেই থাকে। কামনা নিয়মিত চিঠিও লিখতেন। গত ২৬ এপ্রিল রাতের খাবার খেয়ে মনোরঞ্জনের পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত চারটার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে মনোরঞ্জনের ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় তিনি দেখেন, চিত্তরঞ্জনের ঘরের দরজা খোলা, ভেতরে কেউ নেই। তার পর থেকে চিত্তরঞ্জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল থেকে কামনা ও তাঁর ভাই সুবোদকেও এলাকায় দেখা যায়নি। চিত্তরঞ্জন ছেলের ব্যাপারে স্বপন চন্দ্র পালের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। স্বপন তাঁকে এলোমেলো জবাব দেন এবং ধমক দেন। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে মনোরঞ্জন তানোর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, মামলার আসামিরা চিত্তরঞ্জনকে কৌশলে তাঁদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তায় ভরে শিব নদে ফেলে দেন। আজ সকালে শিব নদে বস্তাবন্দী গলিত এই লাশ পাওয়া যায়। পরনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি দেখে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন মনোরঞ্জন।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন বলেন, প্রেমঘটিত কারণে চিত্তরঞ্জনকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে নদে ফেলে দেওয়া হয়। উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আগামীকাল রোববার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। মামলার অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

আখখেতে পোকায় ধরা লাশ

এদিকে জেলার পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর থানাধীন ভড়ুয়াপাড়া এলাকার একটি আখখেত থেকে একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মরদেহে পোকা ধরে গেছে। মরদেহটির পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, খবর পেয়ে সন্ধ্যায় মরদেহটি দেখতে যান। মরদেহের এমন অবস্থা, যা চেনার উপায় নেই। মরদেহের শরীরে পোকা ধরে গেছে। শনাক্ত করতে সিআইডি ও পিবিআই ঘটনাস্থলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, তাঁরা মরদেহটি উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠাবেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মরদ হ স বপন

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হচ্ছে না

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রস্তাবিত জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের খসড়ায় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। ফলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের (এমএনএ বা এমপিএ) বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকছে।

সংশোধিত খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে জামুকার ৯৪তম সভায় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাসহ বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত কার্যপত্র অনুমোদন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। 

আইন সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারই নন, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা হলেন– প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

গত ২১ মার্চ সমকালে এ নিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। জানা গেছে, গত ৬ মে খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তবে উপদেষ্টা পরিষদ ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ সংজ্ঞা সংশোধন করে ফের উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়। এর আলোকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সচিব ইসরাত চৌধুরী গতকাল সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বহাল থাকবেন। এ ছাড়া খসড়ার অন্যান্য বিষয় ঠিকই আছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদে খসড়াটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপিত হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বর্তমানে ৩৬টি শ্রেণি রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া কার্যকর হলে বিসিএস ধারণাগত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিশ্বজনমত গঠনকারী প্রবাসী সংগঠক, মুজিবনগর, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় বদলে যাবে। এর বাইরে বেসামরিক গেজেটে থাকা প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকেও কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সংকট দেখা দেবে। খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে প্রকাশের পর বেসামরিক গেজেটের তালিকা থেকে রণাঙ্গনে অংশ না নেওয়া অন্য শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই করবে মন্ত্রণালয়।

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত খসড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থ যাহারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন, এই রূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল্‌স (ইপিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং আনসার সদস্য, তাহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন।’

খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পরিবর্তিত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘‘‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’’ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিত্তরঞ্জনকে হত্যার ঘটনায় মামলা, প্রেমিকার বাবা-মা ও ভাবি গ্রেপ্তার
  • শাহরিয়ার হত্যায় গ্রেপ্তার তিনজন ৬ দিনের রিমান্ডে
  • তানোরে যুবকের বস্তাবন্দী হাড়গোড় উদ্ধার
  • খাঁচায় বন্দী মেছো বিড়াল
  • সাভারে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা, আহত ৮
  • কলেজশিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের দায়ে ৩ জনের যাবজ্জীবন
  • শাহরিয়ার হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস–পরীক্ষা হচ্ছে না, ছাত্রদলের বিক্ষোভ
  • ভালুকার সাবেক এমপি কাজিম উদ্দিন ধনু ঢাকায় গ্রেপ্তার
  • শেখ মুজিবসহ ৪ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হচ্ছে না