কুমিল্লা নগর থেকে লাকসামে অবস্থিত উপমহাদেশের একমাত্র নারী নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রায় ১৫২ বছর আগে তিনি কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলা এলাকায় নিজ নামে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ওই বিদ্যালয়ের ২৪০ শিক্ষার্থী আজ সোমবার লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে নবাববাড়ি পরিদর্শনে যায়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন প্রধান শিক্ষকসহ সাত শিক্ষক।

সকাল ৯টায় কুমিল্লা নগর থেকে বাসযোগে যাত্রা করে দলটি। বেলা দুইটা পর্যন্ত তারা নবাব ফয়জুন্নেছার স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন এ বাড়ি ঘুরে দেখে এবং তাঁর কবরস্থানে শ্রদ্ধা জানায়। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা।

বাড়ি পরিদর্শনের সময় শিক্ষার্থীরা নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরীর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানায়। এ ছাড়া নবাববাড়িতে প্রবেশের একটি ঐতিহাসিক পথ বন্ধ করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জমি দখল করে নবাববাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব পাশের ফটকের সামনে প্রাচীর নির্মাণ করছেন, ফলে ঐতিহাসিক চলাচলের পথটি বন্ধ হয়ে গেছে।

১৮৩৪ সালে লাকসামের পশ্চিমগাঁওয়ে জন্ম নেওয়া নবাব ফয়জুন্নেছা ছিলেন প্রজাহিতৈষী জমিদার, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। ১৮৭৩ সালে, বেগম রোকেয়ার জন্মের ৭ বছর আগে, তিনি কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলায় মেয়েদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং নিজ বাড়ির পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ২০০৪ সালে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

এসএসসি পরীক্ষার্থী আদিবা বিনতে আজাদ বলে, নবাববাড়ি ঘুরে দেখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। নবাব ফয়জুন্নেছার জীবনী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে, তাই সেটি দ্রুত পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আরেক শিক্ষার্থী আফরা ইসলাম বলে, সহপাঠীদের সঙ্গে দিনটি দারুণ কেটেছে। প্রতিষ্ঠাতার কবর জিয়ারত করে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে ভালো লেগেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, ‘আজকের প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার বাড়ি ঘুরে দেখে মুগ্ধ হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে, বেগম রোকেয়ার আগেই নবাব ফয়জুন্নেছা নারী শিক্ষার সূচনা করেছিলেন। তাঁর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি।’

রাশেদা আক্তার আরও বলেন, ‘নবাববাড়ির যে ঐতিহাসিক ফটক দিয়ে ফয়জুন্নেছা হাতি ও ঘোড়া নিয়ে চলাচল করতেন, সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি দেখে খুবই খারাপ লেগেছে। আমরা দ্রুত পথটি উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফয়জুন্নেছার নামে কুমিল্লা বা লাকসামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠারও দাবি জানিয়েছে।

জাতীয় জাদুঘরের আওতায় থাকা নবাববাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ ও দর্শনার্থীদের তত্ত্বাবধানে দায়িত্ব পালন করেন মো.

আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখানে আসায় নবাববাড়ি প্রাঙ্গণ দিনভর মুখর ছিল।

কুমিল্লার ইতিহাস–গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, নবাব ফয়জুন্নেছার স্মৃতিবিজড়িত দৃষ্টিনন্দন এই বাড়ি অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। তাঁর জীবনী পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফয়জ ন ন ছ র প ঠ যবইয় র জ বন ক ত কর

এছাড়াও পড়ুন:

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত এসএসসি প্রোগ্রামের মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান শাখায় ২০২৬-২০২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ভর্তির যোগ্যতা জেএসসি পাস হতে হবে। জেএসসি ছাড়াদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

ভর্তির দরকারি তারিখ—

১. অনলাইনে ভর্তি এবং আবেদনের তারিখ শেষ তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৬।

২. অষ্টম শ্রেণি বা সমমানের সনদবিহীন ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভর্তি পরীক্ষা : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৬।

৩. ওরিয়েন্টেশন ও টিউটোরিয়াল ক্লাস শুরু : ১৫ মে ২০২৬।

ভর্তির যোগ্যতা—

১. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণ হতে হবে। (ভর্তির তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

২. সরাসরি অনলাইন ভর্তির জন্য: osapsnew.bou.ac.bd

ভর্তির যোগ্যতা(জেএসসি ছাড়া) —

১. যেসব শিক্ষার্থীর জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের সনদপত্র নেই তারাও ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন, এ ক্ষেত্রে বয়স হতে হবে ন্যূনতম ১৪ বছর (৩১/১২/২০২৫ তারিখে)।

২. এসব আবেদনকারীকে যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য বাউবি কর্তৃক নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

৩. এ জন্য ভর্তির প্রাথমিক আবেদন ফরম ফি বাবদ ৩০০ টাকা দিতে হবে।

৪. ভর্তি পরীক্ষার বিষয়, মানবণ্টন, তারিখ ও পরীক্ষা কেন্দ্র এবং প্রক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য বাউবি’র ওয়েবসাইট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্র এবং স্টাডি সেন্টার থেকে পাওয়া যাবে। (অনলাইনে আবেদনের তারিখ ০২/১১/২০২৫ থেকে ৩১/০১/২০২৬)।

প্রয়োজনীয় কাগজ যা লাগবে—

১. দুই কপি ছবি।

২. জেএসসি বা জেডিসি বা অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় পাস বা উত্তীর্ণের সনদ।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি।

ভর্তি ও অন্যান্য ফি—

অনলাইন আবেদন ফি: ১০০ টাকা,

রেজিস্ট্রেশন ফি : ১০০ টাকা,

কোর্স ফি (প্রতি কোর্স ৫২৫ টাকা): ৩৬৭৫ টাকা,

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আবশ্যিক) ব্যবহারিক ফি: ১০০ টাকা,

একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি:৫ টাকা,

ডিজিটাল আইডি কার্ড ফি: ২০০ টাকা,

পরীক্ষা ফি (প্রতি কোর্স ৫০ টাকা) : ৩৫০ টাকা,

প্রথম বর্ষ নম্বরপত্র ফি : ৭০ টাকা,

মোট আবেদন ফি: ৪৬৯৬ টাকা।

বিজ্ঞান শাখার জন্য দুটি ব্যবহারিক কোর্সের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. অষ্টম শ্রেণি বা সমমান পাসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর নাম, পিতা ও মাতার নাম এবং জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদত্ত সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী একই রকম হতে হবে।

২. জেএসসি বা জেডিসি পাসের ক্ষেত্রে জেএসসি বা জেডিসি সনদ অনুযায়ী হতে হবে। ২০২০ সাল কিংবা তার পরবর্তীতে অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অষ্টম শ্রেণি পাশ সনদে বা প্রমাণকে বোর্ড কর্তৃক ইস্যুকৃত রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ থাকতে হবে। সনদবিহীনদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী হতে হবে।

৩. তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীরা কোর্স ফির শতকরা ৬০ ভাগ ছাড় পাবেন।

# বিস্তারিত তথ্যের জন্য ওয়েবসাইট

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রাম, জেএসসি ছাড়াও ভর্তি