রাজশাহীতে এবার আমের দাম কম, সময়ের আগেই মিলছে ল্যাংড়া
Published: 1st, June 2025 GMT
রাজশাহীতে এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। বাজার চার থেকে পাঁচ জাতের আমে ভরে গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার দাম মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত কমেছে।
আমচাষি, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার রাজশাহীতে আমের উৎপাদন বেশি। আমের যে পরিমাণ মুকুল এসেছিল, বেশির ভাগই থেকেছে। ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়নি। সামনে কোরবানির ঈদ পড়াতে বাজারে আমের দাম কিছুটা কমেছে।
এদিকে রাজশাহী জেলার ম্যাংগো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশির ভাগ আম ভাঙা হচ্ছে। হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি শুক্রবার থেকে নামানোর কথা থাকলেও ৮–১০ দিন আগেই পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে ল্যাংড়া আম পাওয়া যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের অন্তত ১০ দিন আগে থেকে।
রাজশাহীতে এবার ঘোষিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গুটি আম ১৫ মে থেকে বাজারজাত করা যাবে। ২২ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানিপসন্দ ও লক্ষ্মণভোগ, ৩০ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি, ১০ জুন থেকে ব্যানানা ম্যাংগো ও ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আম্রপালি ও ফজলি, ৫ জুলাই থেকে বারি আম-৪, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১৫ জুলাই থেকে গৌড়মতি সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছরই পাকা সাপেক্ষ পাড়া যাবে। এবার রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
রাজশাহী বিভাগের আম উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে পরিচিত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ। তিনটি জেলাতেই আমের বড় হাট রয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে আমের সবচেয়ে বড় হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।
গতকাল দুপুরের পর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই হাটে অবস্থান করে দেখা গেছে কর্মচাঞ্চল্য। আমের দর–কষাকষি, কুরিয়ারে আম পাঠানোর জন্য প্যাকেজিং, আমের ওজন মাপাসহ নানা কাজে ব্যবসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ব্যস্ত। গ্রামের আমচাষিরাও ভ্যানে বাজারে আম নিয়ে এসেছেন। টাটকা এসব আম কিনে নিতে অনলাইনে আম বিক্রেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরাও ভিড় করছেন।
রাজশাহীর দুর্গাপুরের চাষি আমিনুল ইসলাম হিমসাগর আম নিয়ে বানেশ্বর বাজারে এসেছেন। তিনি মণপ্রতি দাম চাচ্ছেন ১ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু ক্রেতারা দাম বলছেন দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত। আমিনুল বলেন, এ বছর তাঁর গাছে আম বেশি এসেছে। গত বছর খুব কম আম ছিল। গত বছর হিমসাগরের বাজার শুরুই হয়েছিল ২ হাজার ৬০০ টাকা মণে। এবার মণপ্রতি দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ পর্যন্ত দাম।
মো.
মো. সেলিম নামের এক ব্যক্তি পাঁচ ক্যারেট আম কিনলেন। হিমসাগর আম তিনি ক্যারেটপ্রতি কিনলেন ৮০০ টাকায়। প্রতি ক্যারেটে ২২ থেকে ২৩ কেজি পর্যন্ত আম। সেলিম বলেন, আত্মীয়দের বাড়িতে আম পাঠাবেন। বাজারে এসে টাটকা কাচা আম কিনলেন। দাম কম এবার। তবে কুরিয়ার খরচ একটু বেশি।
বাজারে বেশ কয়েক জায়গায় ল্যাংড়া আম দেখা গেছে। এই আম বাজারে আসার কথা ১০ জুন। তবে কয়েকটি ক্যারেটে দেখা গেল, কিছু আম গাছেই পেকেছে। কিছু আমে রং ধরেছে। সোহেল রানা নামের এক আড়তদার বলেন, দুর্গাপুরে তিনি একটি বাগান কিনেছেন। সেখানে কয়েকটি গাছে ল্যাংড়া আম পাকা ধরেছে। এই কারণে আম পাড়তে হয়েছে। একইভাবে হিমসাগরও কিছু গাছে আগেই পেকেছে।
হাটে একাধিক জায়গায় ল্যাংড়া আম দেখা গেছে। প্রতিমণ দাম হাঁকা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এই বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম পাওয়া যাচ্ছে গোপাল ভোগ আমের। এই আম মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বাজারে গুটি, লক্ষ্মণভোগসহ বেশকিছু বৈশাখী আম দেখা গেছে। এই আমগুলো মানভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে।
অনলাইনে আম বিক্রি করেন ‘সরদার মার্ট’–এর প্রতিষ্ঠাতা সুরুজ সরদার। তাঁকে পাওয়া গেল বানেশ্বর বাজারে। তিনি এবার ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে গোপালভোগ ও হিমসাগর আম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, এবার আম তুলনামূলক বেশি। এ কারণে কিছুটা দাম কমেছে। তবে কুরিয়ার খরচ কিছু ক্ষেত্রে বেড়ে যাওয়াতে তাদের একটু বেশি দামেই আম বিক্রি করতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোছা. সাবিনা বেগম বলেন, এবার রাজশাহীতে ৯৮ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছগুলোতে আসা আমের বেশির ভাগই টিকেছে। উৎপাদনও তাই বেড়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।
বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।
বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট
সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন
বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।
এজন্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।
আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’
এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।
তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।
আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।
মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন