লেনদেন কর বাদ দেওয়া প্রয়োজন: এমসিসিআই
Published: 3rd, June 2025 GMT
লাভ হোক, লোকসান হোক—কোম্পানির লেনদেনের ওপর কর বা টার্নওভার কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করায় এবং কার্যকরী করহার কমানোর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় হতাশা প্রকাশ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, ঢাকা (এমসিসিআই)। তারা বলেছে, প্রতিষ্ঠানের টার্নওভারের ওপর ন্যূনতম কর (মিনিমাম ট্যাক্স) করনীতির পরিপন্থী। তাই এটি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। ব্যবসায়ে লাভ হলেই শুধু করযোগ্য আয়ের ওপর কর প্রযোজ্য হবে।
আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে প্রভাবশালী এই চেম্বার। আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো লিখিত বাজেট প্রতিক্রিয়া মেট্রো চেম্বার ৫৪তম জাতীয় বাজেট উত্থাপনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদকে অভিনন্দন জানিয়েছে। চেম্বারটি মনে করে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, মন্থর বিনিয়োগ, ঋণের উচ্চ সুদহার, বিশ্বব্যাপী চলমান যুদ্ধাবস্থা—এমন সময়ে বাজেট প্রণয়ন অর্থ উপদেষ্টার জন্য একটি দুঃসাহসিক কাজ ছিল।
বর্তমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে এমসিসিআই চিন্তিত। তারা বলেছে, বিনিয়োগ গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থান কমে গেছে। বাড়ছে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। বিনিয়োগ পরিবেশের অবনতি অর্থনীতির সংকটকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এমসিসিআই বলেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে করব্যবস্থার চলমান সংস্কারের শর্তাবলির কারণে চূড়ান্ত বাজেটে ঘাটতি বাড়তে পারে। আইএমএফের ঋণের শর্ত অনুযায়ী কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে গিয়ে করদাতাদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সরকারি প্রকল্পের অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছে এমসিসিআই।
প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ব্যাংক থেকে সরকার এই বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে, যে চাপ শেষ পর্যন্ত বহন করতে হয় ভোক্তা বা জনগণকে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে যথাযথ সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এমসিসিআই বলেছে, ব্যাংক খাতের পুনর্গঠনের জন্য বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন।
এমসিসিআই মনে করে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে গরিবমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপর বেশি নজর দেওয়া উচিত। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো উচিত। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ১৯ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা কম।
এমসিসিআই বলেছে, অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থা ও অবকাঠামো, জ্বালানির অসম বণ্টন এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রধান অন্তরায়। এ ছাড়া দুর্বল রাজস্ব আদায়ব্যবস্থা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ আমদানি প্রবণতা ও বর্তমান বৈশ্বিক বিপর্যয় অবস্থা বিবেচনা করে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশে বর্তমানে ১ কোটি ১৪ লাখ ইটিআইএনধারীর মধ্যে ৪৫ লাখ আয়কর রিটার্ন জমা দেন। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য কর রিটার্ন জমা দেন। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণের ৮৪ শতাংশ শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকেই আসে। এ সম্পর্কে এমসিসিআই আরও বলেছে, সুষ্ঠু কর ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক কর নীতিমালার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণের আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রান্তিক করদাতাদের ন্যূনতম কর ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হলে প্রান্তিক করদাতাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে।
এমসিসিআই বলেছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ করবর্ষের জন্য ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো গেলে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী উপকৃত হতো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করদ ত দ র ব যবস থ র জন য সরক র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রকল্পের তিন মাসের খরচ বিবেচনা করে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রকল্পের বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর পর্যালোচনা করে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ দেবে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
আগামী রোববার থেকে বিদেশি সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে আছে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে ইআরডি।
চলতি অর্থবছরে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। প্রথম তিন মাসে মাত্র ৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
এবারের এডিপিতে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা দেশীয় উৎস থেকে এবং ৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা দেবে। বাকি ৮৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশি সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মাত্র ৫ হাজার ৭৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, যা বিদেশি সহায়তার মাত্র ৬ শতাংশের মতো। এর মানে হলো, অর্থবছরের চার ভাগের এক ভাগ সময় পেরিয়ে গেলেও বিদেশি সহায়তা খরচে হতাশাজনক চিত্র মিলছে।
ইতিমধ্যে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কীভাবে হবে, তা নিয়ে ইআরডি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে পাঁচ দফা নির্দেশনা পাঠিয়েছে। এই নির্দেশনাগুলো হলো—এক. প্রকল্পের আর্থিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ক্রমপুঞ্জিভূত খরচ ইত্যাদির সঙ্গে অবশিষ্ট প্রাপ্যতার সামঞ্জস্য রেখে বরাদ্দ চাহিদা দিতে হবে। দুই. প্রকল্পের ব্যয়ের বিদেশি ঋণ, অনুদান ইত্যাদি আলাদা করে পাঠাতে হবে। চার. অনুমোদন ছাড়া সংশোধিত এডিপিতে কোনো প্রকল্প নেওয়া যাবে না। চার. ২০২৬-২৭ ও ২০২৭-২৮ অর্থবছরের প্রক্ষেপণ প্রেরণের সময় বিশেষ সতর্কতা ও যৌক্তিকতা অবলম্বন করতে হবে। চার. কোনো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলে বা প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হলে সরকারি আদেশের কপি পাঠাতে হবে।