তামিম ও জালাল ইউনুসের বিরুদ্ধে হাথুরুসিংহেকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টার অভিযোগ সাকিবের
Published: 6th, June 2025 GMT
সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে তার পদ থেকে সরাতে ড্রেসিংরুমের ঘটনা বাইরে ফাঁস করার অভিযোগ এনেছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সাবেক বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন বিসিবির বিশেষ তদন্ত কমিটির কাছে। তবে তদন্ত কমিটি নিজেদের প্রতিবেদনে এমন কিছু উল্লেখ করেননি।
২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের থেকে বড় প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দশ দলের আয়োজনে বাংলাদেশ মাত্র দুই জয় নিয়ে অষ্টম স্থানে থেকে বিশ্বকাপ শেষ করে। বিশ্বকাপের ব্যর্থতা তদন্ত করতে তৎকালীন বোর্ড একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করে। যেখানে একটি ব্যক্তিগত অভিযোগও উঠে আসে, সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে স্পিনার নাসুম আহমেদকে চড় মেরেছিলেন।
যে কমিটি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ মোট ১৬ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। যেখানে ক্রিকেটার ছিলেন আটজন। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোস্তাফিজুর রহমান, লিটন দাস, হাসান মাহমুদ, নাসুম আহমেদ ও তানজিম হাসান সাকিবের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। বাইরে থেকে তামিম ইকবালকেও ডাকা হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
সাকিবের সঙ্গে বিসিবির সম্পর্ক ‘শেষ নয়’
সাকিবের দারুণ বোলিং, জিতে ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল লাহোর
এছাড়া প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন, ম্যানজোর রাবীদ ইমাম, স্ট্রেন্থ এন্ড কন্ডিশনিং কোচ নিক লি, ফিজিও বায়েজেদুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল। দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন ও মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকেও ডাকা হয়েছিল। সবশেষ ছিলেন জালাল ইউনুস।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এই সাক্ষাৎকারগুলো নিয়েছিল তদন্ত কমিটি। সাকিব নিজের সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে-নাসুমের চড় কাণ্ডের জন্য তামিম ও জালাল ইউনুসকে সরাসরি দোষ চাপিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে একটি পয়েন্টে আছে, ‘‘ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান এবং তামিম ইকবাল নাসুমকে 'চড় মারার' অভিযোগ সম্পর্কে জানতে ফোন করেছিলেন এবং প্রধান কোচের বিরুদ্ধে এটি মিডিয়াতে ফাঁস করেছিলেন যাতে তাকে বরখাস্ত করা যায়।’’
সাকিবের এমন অভিযোগ শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ হিসেবেই মূল্যায়ন হয়েছে। পরবর্তীতে এর কোনো সতত্যা তারা পায়নি। এজন্য তাদের প্রতিবেদনে এরকম কিছু উঠে আসেনি।
শুধু তা-ই নয়, সাকিব দলের টিম ডিরেক্টর এবং টিম বয়দের নিয়েও সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন। টিম ডিরেক্টরকে নিয়ে তার ব্যাখ্যা, ‘‘দলের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। দলের সাথে সম্পর্কিত যেকোনো বিষয় মিডিয়াতে যাওয়া ক্ষতিকর। টিম ডিরেক্টরের টিম মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন নেই।’’
টিম বয়দের নিয়ে সাকিব সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘টিম অ্যাসিস্ট্যান্ট/টিম বয় নিয়োগের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তারা গোপনীয় টিম তথ্য পাচার করতে পারে।’’
বিশেষ কমিটি বিশ্বকাপের সময় দলের পরিবেশকে "বিভক্ত এবং বিষাক্ত" বলে বর্ণনা করেছে এবং খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের মধ্যে আস্থা এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবিলম্বে পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক ব আল হ স ন ত ম ম ইকব ল জ ল ল ইউন স ব শ বক প হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।