অনলাইনে কোরবানির পশুর ‘লাইভ ওয়েটে’ দাম কম, দোকানে কেন বেশি
Published: 6th, June 2025 GMT
অনলাইনে কোরবানির পশু কেনাবেচায় যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদের কাছে ‘লাইভ ওয়েট’ শব্দটা বেশ পরিচিত। এর অর্থ হলো পশুকে জীবন্ত ধরে সেটার কেজিপ্রতি ওজন বিবেচনা করা। অনলাইনে কোরবানির পশুর বিজ্ঞাপনে পশুর ছবির সঙ্গে ওজন, গায়ের রং, মোট দাম, ওজন অনুযায়ী কেজিপ্রতি মাংসের দাম ইত্যাদি তথ্য যুক্ত করে দেওয়া হয়। তাতে দেখা যায়, লাইভ ওয়েটে প্রতি কেজি মাংসের যে দাম পড়ে, বাজারে বা দোকানে তার চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি হয়।
এবারের পবিত্র ঈদুল আজহার আগে ফেসবুক আর নিজস্ব ওয়েবসাইটে বিভিন্ন অ্যাগ্রো ফার্ম কিংবা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কোরবানির পশুর যেসব বিজ্ঞাপন দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, লাইভ ওয়েটের হিসাবে গরুর মাংসের কেজি মানভেদে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, মাংসের দামের এই তারতম্য কেন?
সহজ করে উত্তর দিলেন গাইবান্ধার দীপ্ত অ্যাগ্রোর কর্ণধার নকীব মাহফুজ। তিনি লাইভ ওয়েটে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৩৯০ টাকা দরে প্রচার চালাচ্ছেন। নকীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি জীবন্ত গরু যখন ওজন দেওয়া হয়, তখন মাংস ছাড়াও গরুর পুরো অংশকেই ধরা হয়। কিন্তু একটি গরুর ৬০ শতাংশের মতো মাংস থাকে, বাকি ৪০ শতাংশ বাদ যায় বা অন্যান্য অংশ থাকে। সেই হিসাবে, কোরবানির পশুর দাম বাজারের মতোই হয়।’
নকীব মাহফুজ আরও বলেন, গ্রাহকেরা হয়তো শুরুতে দামের এই তারতম্য বুঝতে পারেন না। তাঁরা গ্রাহকদের সেটা বুঝিয়ে দেন।
আরও পড়ুন‘ডিজিটাল হাট’ থেকে সরে গেল সরকার, অনলাইনে পশু কেনাবেচায় ব্যক্তি উদ্যোগ৭ ঘণ্টা আগেপ্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য এবং মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরুর মোট ওজনের ৫৫ শতাংশের মতো মাংস ও হাড়। বাকি ৪৫ শতাংশ কলিজা, চামড়া, ভুঁড়ি, রক্ত, মাথা, পা ইত্যাদির ওজন। বাজারে যে দাম ধরা হয়, সেটা ওই ৫৫ শতাংশের। কিন্তু লাইভ ওয়েটে দাম নির্ধারণে আস্ত একটি গরুকে ধরা হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ৪০০ কেজির একটি গরু থেকে ২১০ থেকে ২২০ কেজি মাংস হয়। সে ক্ষেত্রে কোরবানির পশুর লাইভ ওয়েটের প্রচারে কেজিপ্রতি দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, প্রথমে অনেকে লাইভ ওয়েট প্রচার করে গরু বিক্রি করেছিলেন। এই প্রবণতা এখন কমে এসেছে। কয়েকজন খামারি জানান, লাইভ ওয়েটে বিক্রি করা হলেও গরুর ওজন ও দাম উল্লেখ করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঢাকায় কোরবানির পশুর হাটে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রি বেশি০৪ জুন ২০২৫মাংস ব্যবসায়ী ও খামারিরা জানান, জীবন্ত অবস্থায় ৫০০ টাকা কেজি দরে ১০০ কেজি ওজনের একটি গরুর মোট দাম দাঁড়ায় ৫০ হাজার টাকা। গরুটি থেকে মাংস ও হাড় পাওয়া যাবে ৫৫ কেজির মতো। দাম পড়বে প্রায় ৪৪ হাজার টাকার মতো (কলিজা, পা, মাথা ইত্যাদির দাম বাদ দিয়ে)। এর ফলে জীবন্ত অবস্থায় ৫০০ টাকা কেজিতে কেনা গরুর মাংসের প্রকৃত দাম পড়ছে ৮০০ টাকার মতো।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গরুর ওজন মাপা হয় ডিজিটাল স্কেলে। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে কেজির হিসাব যদি ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাতে ক্রেতাদের আর ঠকার আশঙ্কা থাকে না।
আরও পড়ুন১৭ মণের কালো মানিক, অনলাইনে ছবি দেখে খামারে ভিড় করছেন লোকজন০৩ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ বন ত
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।
বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।
বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট
সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন
বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।
এজন্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।
আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’
এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।
তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।
আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।
মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন