অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক
Published: 9th, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় পূর্ব শত্রুতার জেরে উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার (৯ জুন) রাতে দুধনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় পথরোধ করে দেশীয় অস্ত্রদিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তার মাথা ও শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হামলার বিষয়টি জানাজানি হলে ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন সরকার বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
১৫-২০ টাকায় খাসি, ৮০-১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি হতো
শৈশবের ঈদ মানেই ছিল আনন্দ। পুরো গ্রামের মানুষ মিলে আনন্দ করতাম। ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কিনে কোরবানি করা হতো ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে। সে সময়ের ৮০ থেকে ১০০ টাকার গরু বর্তমানে দেড় থেকে দুই লাখে টাকায় বিক্রি হয়। গরু কোরবানি শেষে বিকেলে বাউল-ভাটিয়ালিগানের আয়োজন হতো।
জীবনের ৮০ বছর পার করে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের ঈদগুলোর কথা মনে পড়ে। এখন থাকি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার টিঅ্যান্ডটি রোডের বাড়িতে। আছেন স্ত্রী, সন্তান ও নাতিরা। বাবা আবদুল লতিফ ধোবাউড়ার কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে স্নাতকোত্তর পাস করে ১৯৭৪ সালে ঈশ্বরগঞ্জ কলেজে প্রভাষক হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দিই। ২০০৮ সালে অবসরে গেছি।
ষাটের দশকের কথা। তখন আমার স্কুলশিক্ষক বাবা ৩২ টাকা ৫০ পয়সা বেতন পেতেন। কোরবানির ঈদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় খাসি কেনা হতো। সচ্ছল ৭ থেকে ৮ পরিবার মিলে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় গরু কোরবানি দেওয়া হতো। ঈদের দিন ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ঈদগাহে নামাজে যেতাম। বড়দের সালাম করলে সিকি, আধুলি সালামি পেতাম। আমাদের ছেলেবেলায় মা-চাচিরা ঈদের জন্য হাতে সেমাই বানাতেন দুই দিন আগে থেকেই। কিন্তু এখন বাজার থেকে কিনে আনা সেমাই ঝটপট রান্না হয়। হাতে তৈরি সেমাইয়ের মধ্যে যে আবেগ জড়িয়ে থাকত, তা এখনকার প্রজন্ম উপলব্ধি করতে পারবে না। সকাল সকাল কোরবানি হতো। মাংস কাটার পর প্রতিবেশীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাংস দিয়ে আসতাম। কৃষিনির্ভর গ্রামীণ জীবন থাকলেও সচ্ছল পরিবারগুলো কোরবানি দিত।
আরও পড়ুনতখন কোরবানি ছিল একান্ত ঘরোয়া, আজ কোথাও কোথাও তা প্রতিযোগিতার৩ ঘণ্টা আগেআমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল ভারতের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত গ্রামে। ঈদের দিন বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতাম। এলাকায় বাউল, ভাটিয়ালি ও ভাইওয়াগানের আসর বসত। তখন টিভি ও এখনকার মতো মুঠোফোন ছিল না। বিনোদন ছিল লোকজ গান। ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমা চলত ময়মনসিংহ শহরের অলকা সিনেমা হলে। যখন হাইস্কুলে পড়ি, ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ শহরে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে আসতাম। তখন খুবই আনন্দ হতো।
আমাদের শৈশব-কৈশোরে আত্মীয়স্বজনের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনগুলো খুব মজবুত ছিল। আমরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। কিন্তু এখন ঈদ ফিকে মনে হয়। সব আছে, কিন্তু আনন্দ নেই। আগে লোকদেখানো ছিল না, এখন মনে হয় সব লোকদেখানো।
যে আমি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কয়েকজন মিলে গরু কেনা দেখেছি, সে আমার পরিবার এবার ৯০ হাজার টাকায় গরু কিনেছি। গত কয়েক বছরের তুলনায় দাম অনেক কম। সামাজিক বন্ধন যদি বাড়ত, উৎসবে মানুষের আনন্দ আরও বাড়ত।
(অনুলিখন: মোস্তাফিজুর রহমান, ময়মনসিংহ)
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক