টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোটে ‘হয়রানি’, পর্যটকদের সতর্ক থাকার আহ্বান প্রশাসনের
Published: 10th, June 2025 GMT
টাঙ্গুয়ার হাওরে হাউসবোটে যেসব সেবা ও সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়, সেগুলো না থাকাসহ পর্যটকদের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যটকদের সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে এ–সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, পর্যটকবাহী হাউসবোটে সেবা গ্রহণে বিভিন্ন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। হাউসবোটগুলো বিভিন্ন পর্যটন স্পটের বুকিং গ্রহণ করে; কিন্তু যাত্রীদের প্রতিশ্রুত সেবা দেয় না এবং যান্ত্রিক ত্রুটির নাম করে নির্ধারিত পর্যটন স্পটে নিয়ে যায় না। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে চুক্তি লঙ্ঘন করছেন মর্মে প্রতারণার তথ্যও রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লাস ট্রাভেল পরিচালিত ‘হাওরডিঙ্গি’ হাউসবোট পর্যটকদের বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুত সেবা দেয়নি বলে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হাওরডিঙ্গি সময়মতো যাত্রা শুরু এবং নির্ধারিত আনুষঙ্গিক সেবা যেমন বিদ্যুৎ, আবাসন, স্যানিটেশন সেবা দেয়নি। এমনকি যান্ত্রিক ত্রুটির নামে যাত্রীদের নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রেখেই হাউসবোট কর্তৃপক্ষ অন্যত্র চলে যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে হাওরডিঙ্গি হাউসবোটসহ অন্যান্য হাউসবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য পর্যটকদের অনুরোধ করা জানানো হয়। এ ছাড়া হাউসবোটে কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বা প্রতারণার শিকার হলে দ্রুত জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উল্লাস ট্রাভেলের ফেসবুক পেজে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
এদিকে আজ মঙ্গলবার টাঙ্গুয়ার হাওরে উচ্চ স্বরে গান বাজানোর দায়ে উপজেলা প্রশাসন একটি পর্যটকবাহী নৌযানকে জরিমানা করেছে।
এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবুল হাসেম বলেন, ‘হাউসবোটগুলোকে অবশ্যই নীতিমালা মেনে চলতে হবে। পর্যটকদের প্রতিশ্রুত সেবা ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে হবে। কোনোভাবেই হাওরের প্রকৃতি–পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ করা যাবে না। কোনো অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নেব।’
সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট–বড় ১০৯টি বিল আছে। হাওরের ভেতরে অসংখ্য খাল ও নালা রয়েছে। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।
হাওর, পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরা দেয় সুনামগঞ্জে। হাওর পর্যটনে গত পাঁচ বছরে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে হাউসবোট। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টাঙ্গুয়ার হাওরে নিবন্ধিত প্রায় ১০০ হাউসবোট আছে। এর বাইরে নানা জায়গা থেকে ছোট-বড় প্রায় ১০০ নৌকা ও বোট আসে টাঙ্গুয়ার হাওরে। পর্যটকেরা এসব বোটে সারা দিন হাওরে ঘুরে বেড়ান, পরে বোটেই রাত কাটান হাওরের টেকেরঘাট এলাকায়। আবার অনেক বোট সারা দিন ঘুরে পর্যটকদের নিয়ে হাওর থেকে ফিরে আসে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট ঙ গ য় র হ ওর হ ওর র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস