মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার আরও উন্মুক্ত করতে প্রস্তুত ভিয়েতনাম
Published: 13th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য রপ্তানির জন্য ভিয়েতনাম নিজেদের বাজার আরও উন্মুক্ত করতে ও অতিরিক্ত প্রণোদনা দিতে প্রস্তুত। দেশটির শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী গুয়েন হং দিয়েন গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন সিনেটর রজার মার্শালের সঙ্গে এক বৈঠকে এ তথ্য জানান।
ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী গুয়েন হং জানান, পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম ও প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের বার্তা তিনি সিনেটর রজার মার্শালের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। বার্তায় বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও জোরদারে ভিয়েতনাম দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং উভয় দেশের জনগণ ও পারস্পরিক ব্যবসার স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে আগ্রহী। খবর ভিয়েতনাম নিউজের
চলমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে হং দিয়েন বলেন, আলোচনায় ভিয়েতনাম বরাবরের মতোই নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে আছে। তিনি জানান, আলোচনার ভিত্তি হবে পরস্পরের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, স্বার্থের ভারসাম্য ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং উভয় দেশের উন্নয়ন।
হং দিয়েন আশা প্রকাশ করেন, সিনেটর রজার মার্শাল যেহেতু রিপাবলিকান পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং বাণিজ্য, কৃষি ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সেহেতু তিনি আলোচনার সময় নিজ দেশের (ভিয়েতনাম) পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি মার্কিন সরকার, বিশেষ করে কানসাস রাজ্যের সঙ্গে ভিয়েতনামের সহযোগিতা আরও জোরদারে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করবে। কারণ, কৃষিসহ মহাকাশপ্রযুক্তি ও জীবপ্রযুক্তিতে কানসাসের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।
মার্কিন সিনেটর রজার মার্শাল ভিয়েতনামের আন্তরিকতা, অগ্রগামী মনোভাব ও সদিচ্ছার প্রশংসা করেন। তিনি জানান, আলোচনার বিষয়টি তিনি শিগগিরই প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রিপরিষদের সংশ্লিষ্ট সদস্যদের সামনে উপস্থাপন করবেন। আলোচনায় উভয় দেশের জন্য ইতিবাচক ফলাফল আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন মার্শাল।
একই দিনে ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী গুয়েন হং দিয়েন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত সুপারশপ ওয়ালমার্ট এবং অ্যাথলেটিক বা খেলাধুলার জুতা ও ক্রীড়াসামগ্রীর প্রতিষ্ঠান নাইকির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এই দুটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ভিয়েতনামে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।
নাইকির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে গুয়েন হং দিয়েন তাঁর দেশে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল ও দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির প্রশংসা করেন। বর্তমানে নাইকির বিশ্বব্যাপী জুতার প্রায় ৫০ শতাংশই ভিয়েতনামে তৈরি হয়, যা সরাসরি ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্টের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ভিয়েতনামের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী দিয়েন বিশ্ববাজারে ভিয়েতনামি পণ্যের প্রচারে ওয়ালমার্টের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি প্রস্তাব দেন, ওয়ালমার্ট যেন উচ্চমূল্যের ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের ক্রয় বাড়ায় এবং ভিয়েতনামে একটি কৌশলগত সোর্সিং হাব প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিবেচনা করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ ল প ও ব ণ জ যমন ত র য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না
বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।
আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।
কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতাঅনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান