সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের হেনস্তার অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
Published: 22nd, June 2025 GMT
জামালপুরের বকশীগঞ্জে সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সোহেল রানা পলাশের বিরুদ্ধে। শনিবার বিকেলে রাস্তার কাজে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে উপজেলার ঘাসিরপাড়া মন্ডলবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরে এ সংক্রান্ত ২ মিনিটের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে। এ ঘটনায় রাত ১২টার দিকে বকশীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আল মুজাহিদ বাবু। তিনি দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধি। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যায়ে বগারচর ইউনিয়নের ঘাসিরপাড়া মন্ডলবাড়ী থেকে সামাদ হাজির বাড়ি পর্যন্ত সিসি রাস্তার কাজ চলছে। নিম্নমানের ইট খোয়া দিয়ে রাস্তাটির কাজ করছেন চেয়ারম্যান- এমন অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। পরে রাস্তার অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে যান এমদাদুল হক লালন, আল মোজাহিদ বাবু, আমিনুল ইসলাম, বাঁধন মোল্ল্যা ও ইমরান সরকারসহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক।
রাস্তার অনিয়মের ভিডিও ধারণকালে মোটরসাইকেলযোগে দ্রুত সেখানে আসেন ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পলাশ। এসেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে মারমুখী আচরণ শুরু করেন। ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। এক পর্যায়ে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমার এই রাস্তার কাজের ক্ষতি হলে সাংবাদিকরা জীবন্ত ফিরতে পারবে না।’
হেনস্তার শিকার সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে চেয়ারম্যান বাধা দেন। কোনো কথা না শুনেই তিনি আমাদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও মারমুখী আচরণ করেন। ক্যামেরা বন্ধ না করলে ভেঙে ফেলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। তার বাজে আচরণে আমরা হতভম্ব হয়ে পড়ি। পরে রাতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
বাঁধন মোল্ল্যা জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পলাশ মারমুখী ছিলেন। উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যামেরা বন্ধ না করলে কেউ জীবন্ত ফিরতে পারবে না। তার আচরণে আমরা ভয় পেয়ে যাই।’
বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল লতিফ লায়ন বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জুলাই পরবর্তী সময়ে এমন ঘটনা মেনে নেওয়ার মত না।
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সোহেল রানা পলাশ বলেন, ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত। এজন্য আমি সাংবাদিকদের কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছি। আসলে আমার এমন আচরণ করা ঠিক হয়নি।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহম্মেদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করায় তদন্তের মুখে বাংলাদেশি আইনজীবী
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আইনজীবী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার টুল চ্যাটজিপিটি থেকে নেওয়া ভুয়া মামলা উদ্ধৃত করে অপেশাদার আচরণ করেছেন বলে রায় দিয়েছেন লন্ডনের আপার ট্রাইব্যুনাল (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড অ্যাসাইলাম চেম্বার)। ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য আদালত থেকে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
মামলাটি যুক্তরাজ্যে প্রথম বড় কোনো উদাহরণ, যেখানে একজন আইনজীবী চ্যাটজিপিটি দ্বারা তৈরি ভুয়া রায় আদালতে ব্যবহার করেছেন। ফলে এটি পুরো আইন পেশায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের ঝুঁকি ও নৈতিকতা নিয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মামলার শুনানি হয় চলতি বছরের ২৩ জুলাই এবং রায় প্রকাশিত হয় ১২ আগস্ট। রায়ে বলা হয়, ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান তাঁর আপিলের খসড়ায় ‘Y (China) [2010] EWCA Civ 116’ নামে একটি মামলা উদ্ধৃত করেন। কিন্তু বাস্তবে এই মামলার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেও আদালতে জেরার মুখে এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে এই মামলার উদ্ধৃতি এসেছে চ্যাটজিপিটি নামক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল থেকে। তবে আদালতে জমা দেওয়ার আগে তিনি এর সত্যতা যাচাই করেননি।
আদালতের বিচারপতি জাস্টিস ডভ ও জজ লিন্ডসলি বলেন, যেকোনো আইনজীবীর প্রথম দায়িত্ব হলো আদালতকে সত্য ও সঠিক তথ্য প্রদান করা। যাচাই ছাড়া এআই-সৃষ্ট কনটেন্ট ব্যবহার করা বিপজ্জনক ও অপেশাদার আচরণ। এ ঘটনায় একাধিকবার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা দিয়ে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমান সততা ও পেশাদারত্বের মানদণ্ড ভঙ্গ করেছেন।
ট্রাইব্যুনাল মনে করেন, এটি ইচ্ছাকৃত ভুয়া মামলা তৈরি করার ঘটনা নয়। তাই পুলিশি তদন্ত বা আদালত অবমাননা প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এ ধরনের আচরণ আদালত ও পেশার প্রতি আস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। এ জন্য বিষয়টি বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ডের কাছে পাঠানো হলো, যাতে তারা তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। বিচারপতিরা আরও উল্লেখ করেন, আদালতকে বিভ্রান্ত করার মতো শর্টকাট কোনো পথ বেছে নেওয়া কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড হলো যুক্তরাজ্যের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এটি আইনজীবীদের পেশাগত নীতি, আচরণবিধি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মান তদারক করে। কোনো আইনজীবী যদি আদালতে ভুয়া তথ্য দেন, অনৈতিক আচরণ করেন অথবা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করেন, তাহলে বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যেমন সতর্কীকরণ, জরিমানা, সাসপেনশন বা চূড়ান্তভাবে ব্যারিস্টারি লাইসেন্স বাতিল করা।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ব্যারিস্টার মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মামলায় তিনি আদালতে যথেষ্ট পরিমাণ নথিপত্র (সাবমিশন) জমা দিয়েছেন। কিন্তু আদালত সেগুলোকে বিবেচনায় না নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। তিনি এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তাঁর আইনজীবী আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।