সংবিধানের মূলনীতিতে ‘গণতন্ত্র’ যুক্ত রাখতে হলে আগের মতো আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাসও যুক্ত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।

আজ রোববার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে এক ব্রিফিংয়ে গাজী আতাউর রহমান এ মন্তব্য করেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে এই বৈঠক শুরু হয়।

আতাউর রহমান বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতায় সঠিক নয়। সেই সংবিধান জনগণের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়নি। এ জন্য অধিকাংশ দল এই মূলনীতি বাতিলের পক্ষে। সে জন্য বাহাত্তরের মূলনীতি বাদ দিয়ে নতুন মূলনীতি নিয়ে আসতে হবে।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা তিনটি বিষয়— সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার সংবিধানে যুক্ত করলে কোনো আপত্তি নেই। তবে গণতন্ত্র যুক্ত রাখতে হলে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস যেটি ছিল সংবিধানে, এটি যুক্ত করতে হবে। এটি আমাদের পাশাপাশি অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের প্রস্তাব ছিল।’

আতাউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু এখানে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে, এ জন্য সংবিধানের মূলনীতির বিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। পরবর্তী সময়ে হয়তো আলোচনা হবে। যদি আলোচনা করে একমত হওয়া যায়, নয়তো গণভোট হবে। নয়তো পরবর্তী সংসদ এগুলোর সিদ্ধান্ত নেবে।’

ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র আরও বলেন, সমস্যার মূলে হলো নির্বাচন। উচ্চকক্ষের নির্বাচন নিয়ে এজেন্ডা আছে, বিতর্ক আছে; কিন্তু নিম্নকক্ষের নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে কোনো এজেন্ডা নেই। এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন চেয়েছি। এ জন্য এটি এজেন্ডা আকারে আনা হোক।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

হাওরতীরের ব্যাটনবাড়ি

বেলা দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মোটরবাইকে চড়ে উঁচু-নিচু টিলাপথ পাড়ি দিয়ে ব্যাটনবাড়িটির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছি আমরা। কাছাকাছি পৌঁছে চৌধুরীবাড়ির খোঁজ করতেই পথচারী মুরব্বি আঙুলের ইশারায় সাদা বাড়িটির দিকে ইঙ্গিত করলেন। হাওর হাকালুকির তীরঘেঁষে শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে চুন-সুরকি আর ব্যাটনে গড়া এক ঐতিহ্যিক বাস্তুভিটা। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নে বাড়িটির অবস্থান। 
বাড়ির ভেতরের প্রবেশদ্বারেই মাথা নিচু করে ঝুঁকে রয়েছে একটি বাগানবিলাস। ধবধবে সাদা রঙের দেয়ালঘেঁষে ঝুলছে থোকা থোকা লাল ফুল–এ এক আভিজাত্যের মিশেল। বৈঠকখানায় স্বাগত জানালেন বাড়ির বর্তমান স্বত্বাধিকারী ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা দেওয়ান আশরাফি। ঐতিহ্য লালনের পরম্পরায় বাড়িতে এখন চতুর্থ পুরুষের বাস। 
একসময় সিলেট ও আসাম একই ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে ছিল। সে কারণে এ ধরনের বাড়ি সিলেটে ‘আসাম টাইপ হাউস’ বা আসামরীতির বাড়ি নামে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলো ধরনের বাড়িগুলোর দেয়াল বানাতে বাঁশ-কাঠের ব্যাটন ব্যবহার করা হয় বলে এগুলো ‘বাংলা ব্যাটন স্টাইল’ বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয়রা সহজ করে বলেন ব্যাটনের ঘর।
বাড়িটি ঘুরে দেখাতে দেখাতে দেওয়ান আশরাফি জানালেন, বাড়িটি নির্মাণ করেছেন আব্দুল গণি চৌধুরী। এটি গণি মিয়া চৌধুরীবাড়ি নামেই পরিচিত। কথিত আছে সিলেটের প্রভাবশালী জমিদার আলী আমজদ খানও এখানে প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি আব্দুল গণি চৌধুরীর কারণে। পালকি রাখার জন্য আব্দুল গণি চৌধুরীর কাছে জায়গা চেয়েও পাননি আলী আমজদ। 
বাড়ির সৌন্দর্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে বাহারি ফুল ও ফলের গাছ। পুরো বাড়িটিতে অদ্ভুত ছাতা মেলে ধরেছে বেশ কয়েকটি বয়সী লিচুগাছ। গাছগুলোর বয়স নাকি প্রায় দু’শ বছর! এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাচীন লিচুগাছটিও রয়েছে এখানে। প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকায় ভোর হতেই বিভিন্ন ধরনের পাখির কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে বাড়িটি। শাহনেওয়াজ চৌধুরী বললেন, ‘হাওরলাগোয়া হওয়াতে শীতে এখানে পরিযায়ী পাখিরাও আসে। আমরা নিজেরা কখনোই পাখিকে বিরক্ত করি না। কোনো শিকারিকেও এই গ্রামে প্রবেশ করতে দিই না। আবার এ বাড়িতে কোনো যৌতুক দেওয়া-নেওয়ারও নিয়ম নেই।’
বাড়িটি আধেক পাকা দেয়ালের ওপরের অংশ কাঠ-বাঁশের ব্যাটনে গড়া। বাঁশের তরজা নির্মাণ করে তাতে দেওয়া হয়েছে মাটির প্রলেপ। পরবর্তী সময়ে তা কাঠের ফ্রেমে আটকে দেওয়া হয়েছে। চুন-সুরকির আস্তরণ, খোলা বারান্দার সিলিংয়ে বাঁশের নানা রকম দেশজ নকশা, গরাদের জানালা, টিনের চালা আর কালো রঙের ব্যাটন। সাদামাটা বাড়িটিও যেন অদ্ভুত সৌন্দর্য নিয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে। 
হাওর এলাকা হলেও এখানকার বাড়িগুলো সব টিলার ওপরে। নিচে জলাভূমি ওপরে টিলা। ভরা বর্ষায় যখন থই থই পানি, টিলাবাড়ি থেকে তখন হাওরের আসল রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায়। গল্প-কথায় যুক্ত হলেন প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক নূর মাহমুদ চৌধুরী। বললেন, ‘এ ধরনের ঘর সিলেটের ঐতিহ্য। আমরা আস্ত গাছ দিয়ে বারান্দার খুঁটি নির্মাণ করতে দেখেছি। এখন এসব দেখা যায় না। পরবর্তী প্রজন্মকে ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত করাতে হলে এ বাড়িগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।’
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে শামছুল মজিদ চৌধুরী সাকির ‘আসাম টাইপ ইউনিক হেরিটেজ হাউজেস ইন সিলেট’ শীর্ষক গ্রন্থে স্থপতি আনোয়ার ইকবালের ‘আসামবাড়ি’ শিরোনামের নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ঔপনিবেশিক আমলে স্থানীয় উপকরণে, স্থানীয় প্রযুক্তিতে নতুন এক স্থাপত্যধারার প্রচলন হয়। গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করে ইংরেজরা আসামের প্রকৃতি, পরিবেশ ও আবহাওয়া অনুকূল একটি নতুন স্থাপত্যধারা প্রস্তাব করে; যা পরবর্তীকালে সিলেটসহ এই রাজ্যের বরাক উপত্যকায় ‘আসাম টাইপ হাউস’ হিসেবে পরিচিতি পায়। এ ধরনের ঘর নির্মাণে উপাদান হিসেবে বেছে নেওয়া হলো বাঁশ, কাঠ, নলখাগড়া। জানালার চৌকাঠ পর্যন্ত পাকা দেয়াল। তার ওপরের অংশ ব্যাটন। উল্লিখিত গ্রন্থে শামছুল মজিদ চৌধুরী সাকি আরও জানিয়েছেন, বাড়িগুলো শীতে উষ্ণ ও গ্রীষ্মে শীতল থাকে। বাড়িগুলো একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব ও আরামপ্রদ। পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশনের জন্য বায়ু চলাচলের সুযোগ থাকে। ফলে কখনও দেয়াল ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে হয় না, যদিও উপমহাদেশের অন্যতম বৃষ্টিবহুল এলাকায় সিলেটের অবস্থান। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়। এ ধরনের ঘরের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, রান্নাঘর থেকে কোনো কারণে আগুন ছড়িয়ে গেলে তা যেন সহজে শোয়ারঘরে পৌঁছাতে না পারে, সে জন্য মাঝখানে রাখা হতো একটি খোলা বারান্দা। ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বৈভবশালী প্রাসাদগুলো মুখ থুবড়ে পড়লেও আসাম টাইপ ব্যাটন বাড়িগুলো টিকে ছিল সগর্বে। ফলে রাতারাতি এই রীতির নির্মাণপদ্ধতি সমাজের সকল স্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠল। এই ধারায় নির্মিত হতে লাগল বনেদি বাড়িগুলোও। 
তবে কালের পরিক্রমায় আসাম টাইপের এই বাড়িগুলো হারিয়ে যাচ্ছে– একথা মানতেই হয়। নতুন বাড়ি নির্মাণের তাগিদে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যিক নির্মাণ। শাহনেওয়াজ চৌধুরী ও দেওয়ান আশরাফি দম্পতি জানান, সামর্থ্য থাকলেও এ বাড়ি ভেঙে নতুন বাড়ি করার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। এ দম্পতির ছেলেমেয়েরাও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বাড়িটি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চান স্থাপত্য ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে। v
লেখক: ঐতিহ্য সংগ্রাহক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লন্ডন বৈঠক নিয়ে শরিকেরা সন্তুষ্ট: আমীর খসরু
  • সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নের জন্য নয়: আলী রীয়াজ
  • বিশ্বকে বদলে দিতে চাই
  • আমরা আসলে কেমন রাষ্ট্রপতি চাই
  • দলীয়করণ করলে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের অবমূল্যায়ন করা হবে: জাহিদ হোসেন
  • ইবির ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ভর্তি শুরু ২৯ জুন
  • হাওরতীরের ব্যাটনবাড়ি
  • দারিদ্র্য থাকলে গণতন্ত্র আসবে না
  • অনেক ষড়যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হচ্ছে: রিজভী