জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার চক্রান্ত চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সালাহউদ্দিন আহমদ, মির্জা আব্বাসসহ দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম, এই গণ-অভ্যুত্থানের পরে বিভিন্ন রকমভাবে একটা প্রচেষ্টা, চক্রান্ত চলছে গণতন্ত্রকে আবার ধ্বংস করার জন্য।’

‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের’ তাৎপর্য-প্রেরণা নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস আমাদের সেই পথেই যেতে অনুপ্রাণিত করে, যে পথে সত্যিকার অর্থে আমরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব। একটা সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব। জনগণের ভোটের অধিকারকে সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠা করতে পারব। বিচারের অধিকার নিশ্চিত করতে পারব। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, বিএনপি এগিয়ে যাব।’

বিএনপি সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন দলটির মহাসচিব।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হিসেবে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করে রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব অর্পণের কাজটি বাংলাদেশের অগ্রগতির মোড় ঘোরানো দিক ছিল। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রপরিচালনার চার বছরে জিয়াউর রহমান দেশে আমূল পরিবর্তন আনেন। তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, তা দেশকে পরবর্তীকালে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ বিষয়ে মির্জা ফখরুলের কাছে জানতে চান সাংবাদিক। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে নতুন করে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পাঠানো বক্তব্যই বিএনপির চূড়ান্ত বক্তব্য বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

আজ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিক দলসহ বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এসে শ্রদ্ধা জানান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ য় উর রহম ন গণতন ত র ব এনপ র ফখর ল

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক

১.

একটি প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করি।

আকাশে উড়ন্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানে যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন শিক্ষক, অপরজন ছাত্র। কিন্তু বিমানে প্যারাসুট আছে তিনটি! একটা প্যারাসুট নিয়ে পাইলট বললেন, ‘আমি লাফিয়ে পড়ছি, আমাকে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট করতে হবে যে বিমান ক্রাশ করছে।’ রাজনৈতিক নেতা একটি প্যারাসুট নিয়ে বললেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার অনেক কিছুই করার এখনো বাকি। তাই আমার বেঁচে থাকা দরকার।’

পাঠক, নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন এ রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশি ছাড়া আর কে হবেন। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাই যে এমন তা বলছি না। এটিও তো ঠিক, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন যারা দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করার কথা বলে গলা ফুলিয়ে ফেললেও বিপদে আগেই সরে পড়েন। নিজের দলের কর্মীদেরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালাতে একমুহূর্ত দেরি করেন না।

তবে কৌতুকটি এখানেই শেষ নয়। বাকি আছেন শিক্ষক ও এক ছাত্র। শিক্ষক বললেন, প্যারাসুট তো আছে আর একটা। এখন কী হবে? ছাত্র বলল, চিন্তা নেই স্যার। প্যারাসুট দুইটিই আছে। ওই নেতা ব্যাটা প্যারাসুট মনে করে আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। এতক্ষণে নির্ঘাত অক্কাও পেয়েছেন। শিক্ষকের প্রাণে পানি এল। তাঁরা শুধু বাঁচার উপায় পেয়েই আনন্দিত হলেন না, নেতার করুণ পরিণতি দেখেও যেন ‘নিষ্ঠুর আনন্দ’ পেলেন। কেনই–বা পাবেন না?

আরও পড়ুন‘আমার তো রাজনীতি নাই, আমার হইল পেটনীতি’২৩ অক্টোবর ২০২৫২.

একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ মনোনয়ন পাবেন, কেউ পাবেন না। এতে কেউ হতাশ হবেন, কেউ উল্লসিত হবেন—এটিই তো স্বাভাবিক। শুধু তা–ই নয়, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ প্রতিক্রিয়াও এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়েছে। তা হচ্ছে মনোনয়নবঞ্চিত হলে সড়ক অবরোধ করা, ধর্মঘট-হরতাল ডাকা, ভাঙচুর করা, আগুন জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি।

হ্যাঁ, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনাও আছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বঞ্চিত পক্ষের ওপর হামলে পড়া। এটিই তো দেখলাম গতকাল সোমবার দেশে বর্তমান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণার পর।

আমরা সংস্কার সংস্কার বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি ঠিকই, কিন্তু গাছের গোড়াতে পানি ঢালার কথা কেউ বলছি না, বললেও সেটি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গাছের গোড়ার পানি ঢালার বিষয়টা কী? যারা রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার আনবে, তাদের ভেতরেই সংস্কারটা আগে হতে হবে। এর জন্য জরুরি হচ্ছে, মন ও মগজে সংস্কার আনা। সেটিই যদি করা না যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের বলে যাওয়া সেই উক্তিই সঠিক হয়—গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খ ও অযোগ্যদের শাসন।

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ-আশাশুনি আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মনোনয়ন না পাওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। অথচ এ দেশে হরতালের রাজনীতি বহু আগেই আবেদন হারিয়ে ফেলেছে, সেটি তাদেরই সবার আগে বোঝার কথা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। ফলে এ হরতাল জন-স্বতঃস্ফূর্তামূলক ছিল না। যার যার ব্যস্ততা নিয়েই মানুষ কাজেকর্মে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হয়েছে। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকেরা জোরপূর্বক হরতাল পালন করতে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে যে চরম যানজট তৈরি করলেন, তাতে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হলো।

গতকাল সন্ধ্যায় প্রার্থিতা ঘোষণার পরপরই দ্রুত প্রতিক্রিয়াটা আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আসন থেকে। সে আসনে বিএনপির এক সাবেক যুগ্ম মহাসচিবকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের লাইফলাইনখ্যাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আটকে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ যানজট ছড়িয়ে মহাসড়কের দুই পাশে, এমনকি এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরেও। শুধু তা–ই নয়, মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনও অবরোধ করেন।

চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতার বিক্ষুব্ধ কর্মী–সমর্থকেরা ঢাকা–চট্টগ্রাম শহর অবরোধ করেন। সোমবার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর আজ
  • সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএন‌পি 
  • সংবিধান সংস্কার জনগণের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত: ড. কামাল হোসেন
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে ও রাজনৈতিক দলে গণতন্ত্রচর্চাসহ আট দফা সুপারিশ
  • ৭ নভেম্বরের চেতনায় জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
  • তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের পেছনে ছিল রাজনৈতিক বিদ্বেষ: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব ঘোচাতে আলোচনায় ৯ দল
  • বিএনপির মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে: নজরুল ইসলাম খান
  • নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক