‘আমার মেয়ে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না’
Published: 24th, June 2025 GMT
‘আমার মেয়ে লঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে, না তাকে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে, না ধর্ষণ করে মেরে ফেলে দেওয়া হয়েছে—আমরা কিছুই জানি না। আমরা জানতে চাই। কারণ, আমার মেয়ে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না। আমাদের একটাই দাবি, কীভাবে হলো, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত বিষয়টি জানতে চাই। যদি কোনো অপরাধী বের হয়, তাঁর যেন শাস্তি হয়।’
কথাগুলো বলছিলেন ভোলা পৌর এলাকার এক গৃহবধূ। ২০ জুন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীরহাট নৌ পুলিশ মেঘনা নদীতীর থেকে তাঁর অনার্স পড়া মেয়ের (২৩) লাশ উদ্ধার করে। এর আগে ১৭ জুন ভোলা থেকে ঢাকাগামী একটি লঞ্চ থেকে ওই ছাত্রী পড়ে যান। তিনি নিজে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছেন নাকি তাঁকে কেউ ফেলে দিয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমন অবস্থায় তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটনের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
ওই ছাত্রী ভোলা সরকারি কলেজের একটি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি কোনো পদে না থাকলেও কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকমের বাজে মন্তব্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে কলেজ শাখা ছাত্রদল। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কলেজের সামনে মানববন্ধন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে মৃত্যুর ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন এবং অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ভোলা কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব মো.
বক্তারা বলেন, একটি মহল ওই ছাত্রী ও ছাত্রদলকে জড়িয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজেবাজে পোস্ট দিচ্ছে। ছাত্রদল এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চায়। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুরহস্য ও দোষীদের খুঁজে বের করতে হবে। যদি কোনো অপরাধী এর সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। কেউ কিছু না জেনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উল্টাপাল্টা কিছু লিখলে তাঁর বিরুদ্ধে ছাত্রদল মামলা করবে বলে বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন।
ওই ছাত্রীর বাড়ি ভোলা পৌরসভার একটি ওয়ার্ডে। আজ দুপুরে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছাত্রীর মা কাঁদছেন। তাঁকে পাড়াপ্রতিবেশী সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
মেয়ের ছবি হাতে মায়ের কান্না। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা পৌরসভার একটি ওয়ার্ডেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ছ ত র ছ ত রদল তদন ত র একট
এছাড়াও পড়ুন:
সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে শাবিপ্রবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
এ সময় বক্তারা ২ মে শাবিপ্রবির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। সেই সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাইবার বুলিংয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তির দাবি জানানো হয়।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, দুই ছাত্রের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পর সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ধারাবাহিক সাইবার বুলিং করা হচ্ছে। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ফেসবুকে বিভিন্ন ভুয়া পেজ ও আইডি খুলে শিক্ষার্থীদের নামে বিভিন্ন অপতথ্য ছড়াচ্ছেন। এ ছাড়া নারী শিক্ষার্থীদেরকে মেসেঞ্জারে ও বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় দুই ছাত্র জড়িত থাকায় সামাজিক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা জড়িতদের রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। আমরা তাদের সঙ্গে নিয়ে ক্লাসে বসতে চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের মাধ্যমেও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।’
ঘটনার পর থেকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে অধ্যাপক আল–আমিন বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আমরা এসব সাইবার বুলিংয়ের নিন্দা জানাচ্ছি। নারী শিক্ষার্থীদের নামে বানোয়াট তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তা বন্ধ না হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
এদিকে সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদে আজ দুপুরে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল হোসেন বলেন, ‘সাইবার বুলিংয়ে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আমাদের সহপাঠী ও বিভাগের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। আমরা এর যথাযথ বিচার দাবি করছি।’
গত ২ মে শাবিপ্রবির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এরপর ধর্ষণের ঘটনায় প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।