যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি যন্ত্রে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ, কেন?
Published: 25th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস তাদের সদস্য ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ব্যবহৃত সরকারি যন্ত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাউসের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার (সিএও)। এ বিষয়ে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কাছে পাঠানো এক ই–মেইল বার্তায় বলা হয়েছে, তাঁরা যেন সরকারি কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মুঠোফোন, ট্যাবলেটসহ সব ধরনের যন্ত্র থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলেন। এমনকি ব্যক্তিগত যন্ত্রে যদি সরকারি কোনো কাজ করা হয়, সে ক্ষেত্রেও অ্যাপটি মুছে ফেলতে হবে।
হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে। কারণ, অ্যাপটি কীভাবে তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে থাকে, তা স্পষ্ট নয়। সংরক্ষিত তথ্য এনক্রিপ্ট করা হয় না এবং এতে একাধিক নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা রয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হিসেবে সিগন্যাল, অ্যাপলের আইমেসেজ ও ফেসটাইম, মাইক্রোসফট টিমস ও উইকার ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে বার্তা ও ছবি নিরাপদ রাখতে এই ৬ সুবিধা ব্যবহার করছেন তো০৪ মে ২০২৫হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো প্রতিটি বার্তা এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড করা থাকে। ফলে প্রেরক ও প্রাপক ছাড়া অন্য কেউ তা জানতে পারেন না। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপও নয়।’
আরও পড়ুনহোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়ে তথ্য চুরি, নিরাপদে থাকবেন যেভাবে২৭ মে ২০২৫গত জানুয়ারিতে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছিল, ইসরায়েলের স্পাইওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান প্যারাগন সলিউশনস সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ বেশ কিছু পেশার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ওপর নজরদারি করার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি ইরান সরকারও হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। ইরান সরকারের অভিযোগ, এসব অ্যাপের মাধ্যমে দেশের সংবেদনশীল তথ্য বাইরে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: নিউজ ১৮
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য় টসঅ য প ব যবহ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সহানুভূতি: একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ
সহানুভূতি একটি শক্তিশালী মানবিক গুণ, যা আমাদেরকে অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের আবেগ ও অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করে। তাদের দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ বা ভয়ের মতো অনুভূতিগুলো নিজের মধ্যে অনুভব করা যায়।
সহানুভূতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, যা রাসুল (সা.) তাঁর জীবনে বারবার প্রদর্শন করেছেন। সহানুভূতি অনুশীলনের পাঁচটি ধাপ নিয়ে আমরা আলোচনা করব, যা আমাদের জীবনে এই ভুলে যাওয়া সুন্নাহ পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে আশা করা যায়।
সহানুভূতি মানে অন্যের অনুভূতি নিজের মধ্যে অনুভব করা এবং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি বোঝা।সহানুভূতি ও সমবেদনার পার্থক্যসহানুভূতি (এমপ্যাথি) ও সমবেদনা (সিমপ্যাথি) প্রায়ই একই মনে হলেও এদের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সমবেদনা হলো অন্যের জন্য উদ্বিগ্ন বোধ করা বা তাদের দুঃখে দুঃখিত হওয়া। কেউ অসুস্থ হলে তার জন্য দুঃখবোধ করা সমবেদনা। কিন্তু সহানুভূতি এর চেয়ে গভীর।
সহানুভূতি মানে অন্যের অনুভূতি নিজের মধ্যে অনুভব করা এবং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিস্থিতি বোঝা। যেমন, একজন মা তার সন্তানের পড়ে যাওয়ার ব্যথা কেবল বুঝেন না, বরং নিজেও সেই ব্যথা অনুভব করেন। এই পার্থক্য বোঝা সহানুভূতির প্রকৃতি উপলব্ধি করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫সহানুভূতির প্রকারভেদসহানুভূতির তিনটি প্রধান ধরন রয়েছে, যা এই গুণটির বিভিন্ন দিক বুঝতে সাহায্য করে।
১. জ্ঞানগত সহানুভূতি
জ্ঞানগত সহানুভূতি হলো অন্যের পরিস্থিতিতে নিজেকে কল্পনা করা এবং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করা। একজন শিক্ষক যখন দেখেন তার ছাত্র পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তিনি ছাত্রের স্থানে নিজেকে কল্পনা করে প্রশ্নপত্রের কাঠিন্য অনুভব করেন। এই ধরনের সহানুভূতি মানুষকে অন্যের অবস্থান বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
২. আবেগগত সহানুভূতি
আবেগগত সহানুভূতি হলো অন্যের আবেগ নিজের মধ্যে অনুভব করা। এটি দুঃখ, আনন্দ, ভয় বা রাগের মতো অনুভূতিগুলো নিজে অনুভব করে তাদের তীব্রতা বোঝা। যেমন, একজন মা যখন তার সন্তানের পড়ে যাওয়ার ব্যথা দেখেন, তিনি কেবল ব্যথার কথা চিন্তা করেন না, বরং সেই ব্যথা নিজের মধ্যে অনুভব করেন। এই ধরনের সহানুভূতি মানুষের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি করে।
তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল, যিনি তোমাদের কষ্টে কষ্ট পান, তোমাদের কল্যাণে আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময়।সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮৩. নবীজির সহানুভূতি
মহানবী (সা.)-এর জীবন সহানুভূতির সর্বোচ্চ উদাহরণ। কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমাদের কাছে এসেছেন তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল, যিনি তোমাদের কষ্টে কষ্ট পান, তোমাদের কল্যাণে আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময়। ” (সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)
রাসুল (সা.) কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, এমনকি অমুসলিমদের জন্যও উদ্বিগ্ন ছিলেন।
রাসুল (সা.)-এর জীবন থেকে সহানুভূতির উদাহরণ
তাঁর জীবন সহানুভূতির অসংখ্য উদাহরণে ভরপুর। নিচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা তুলে ধরা হলো:
১. ইকরিমা ইবন আবু জাহলের প্রতি সহানুভূতি
ইকরিমার পিতা আবু জাহল ছিলেন ইসলামের কট্টর শত্রু। বদরের যুদ্ধে তিনি নিহত হন। এই সংবাদে ইকরিমা গভীরভাবে মর্মাহত হন এবং মক্কায় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন। রাসুল (সা.) সাহাবীদের নির্দেশ দেন যেন তারা ইকরিমার পিতাকে ‘আবু জাহল’ (অজ্ঞতার পিতা) বলে না ডাকে, কারণ এটি ইকরিমার অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে। (ইবনে হিশাম, আস–সিরাত আন–নাবাবিয়্যা, ৪/৩২)
এমনকি ইকরিমা ইসলাম গ্রহণ করলেও তিনি তার পিতার প্রতি তার সন্তানসুলভ ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। এটি সহানুভূতির একটি অসাধারণ উদাহরণ, যা দেখায় কীভাবে একজন নেতা শত্রুর সন্তানের প্রতিও সংবেদনশীল হতে পারেন।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর প্রথম ক্রন্দন১১ জুন ২০২৫২. বিশর ইবনে উকবার প্রতি সান্ত্বনা
একটি সামরিক অভিযানে মদিনার একজন সাহাবী উকবা (রা.) শহীদ হন। অভিযান থেকে ফিরে আসা সাহাবীদের স্বাগত জানাতে রাসুল (সা.) মদিনার বাইরে যান। ছোট্ট বিশর তার পিতার জন্য অপেক্ষা করছিল, কিন্তু তার পিতাকে না দেখে সে বুঝতে পারে তার পিতা আর নেই। সে কাঁদতে থাকে। রাসুল তাকে দেখে তাঁর বাহন থেকে নেমে তাকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন, “কেঁদো না। তুমি চাইলে আমি তোমার বাবা হবো এবং আয়েশা হবে তোমার মা।” (ইমাম বুখারি, আত–তারিখ আল–কাবির, ২/৭৮; আলবানি, আস–সিলিসলাহ আস–সাহিহাহ, ৭/৭৫৪)
এই ঘটনা রাসুল (সা.)-এর গভীর সহানুভূতির প্রমাণ, যেখানে তিনি একটি শিশুর দুঃখ নিজের মধ্যে অনুভব করে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন।
এ ছাড়াও হাদিসে আছে, তিনি শিশুর কান্না শুনে জামাতের নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন, যাতে মা অস্থির না হন (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৭৮) এবং একজন বেদুইন মসজিদে প্রস্রাব করলে তিনি তাকে শাসন না করে শান্তভাবে বুঝিয়েছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৮৫)
এই ঘটনাগুলো দেখায় যে রাসুল (সা.) কেবল তাঁর অনুসারীদের জন্য নয়, শত্রু, শিশু, এমনকি অমুসলিমদের প্রতিও গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন।
কেঁদো না। তুমি চাইলে আমি তোমার বাবা হবো এবং আয়েশা হবে তোমার মা।হাদিস, ইমাম বুখারি, আত–তারিখ আল–কাবির, ২/৭৮সহানুভূতি অনুশীলনের পাঁচটি ধাপসহানুভূতি অনুশীলনের জন্য পাঁচটি ব্যবহারিক ধাপ রয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এই সুন্নাহকে প্রয়োগ করতে সাহায্য করতে পারে:
১. শোনা: কেউ যখন কিছু বলছে, তখন মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। এটি সহানুভূতির প্রথম ধাপ, যেখানে আমরা অন্যের কথা পুরোপুরি বোঝার চেষ্টা করি।
২. বিচার না করা: শোনার সময় বিচার করা সহানুভূতির বিপরীত। আমাদের উচিত সাহায্য করার মনোভাব নিয়ে শোনা, বিচার করার জন্য নয়।
৩. বোঝা: অন্যের পরিস্থিতি এবং আবেগ বোঝার জন্য বিচক্ষণতার প্রয়োজন। এটি জ্ঞানগত সহানুভূতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৪. কল্পনা করা: নিজেকে অন্যের জায়গায় কল্পনা করে তাদের আবেগ অনুভব করা। এটি আবেগগত সহানুভূতির মূল।
৫. প্রতিক্রিয়া জানানো: সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া মানে অন্যের সমস্যার প্রতি উপযুক্তভাবে সাড়া দেওয়া, এমনকি সমাধান দিতে না পারলেও। এটি মানুষের মধ্যে আস্থা ও সংযোগ তৈরি করে।
সহানুভূতির সীমাবদ্ধতামনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত সহানুভূতি কখনো কখনো ক্ষতিকর হতে পারে। রাসুল (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন যে মানুষকে খুশি করার আগে আল্লাহকে খুশি করা উচিত। এটা মনে রাখলে সহানুভূতি আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর সীমার মধ্যে রাখবে। হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল, এবং তোমাদের প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৯৩)
তাই সহানুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব পালনেও ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
আরও পড়ুনমহান আল্লাহর হাসি১১ জুলাই ২০২৫