জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বা এমন কোনো পর্ষদের চিন্তা বাদ দিলে এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তুলেছে, সেটা মেনে নেবে বিএনপি। আজ বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা বৈঠকের ষষ্ঠ দিনের আলোচনা শেষে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজকের আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এনসিসির মতো আর কোনো বডি নির্বাহী ক্ষমতার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে বা ইন্টারফেয়ার করে বা এমন ব্যবস্থা থাকলে আমরা সে প্রস্তাবটা গ্রহণ করব না। এনসিসির মতো ব্যবস্থা থাকলে আমরা আগের অবস্থায় থাকব (কারও প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ১০ বছর মানবেন না)।’

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ফ্রিডম অব প্রেস (সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা) যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি, দুদকসহ অন্যান্য রিলেটেড প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমরা শক্তিশালী করতে পারি, এখানে গণতন্ত্র রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে তারা। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হবে না।’

রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য আইনে বিধান রাখার কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) নিশ্চিত করতে হবে। যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এটার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলোর আইন না থাকলে আইন করা। আর যেগুলোর আইন আছে, সে আইন সংস্কার করা। তাহলে রাষ্ট্রে ক্ষমতার মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স (ক্ষমতার ভারসাম্য) তৈরি হবে।’

যে দেশে ফ্রিডম অব প্রেস বেশি, সে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এগুলো না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না।সালাহউদ্দিন আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে এবং জুডিশিয়ারির (বিচার বিভাগ) স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায় এবং দুদকসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত, সেগুলোকে যদি শক্তিশালী করা যায় তাহলে তা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া, গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ছাড়া, গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হবে না।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, যে দেশে ফ্রিডম অব প্রেস বেশি, সে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এগুলো না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না।

আজকের আলোচনায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। বৈঠকে সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, এনসিসি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ন শ চ ত কর গণতন ত র ঐকমত য সদস য সরক র ব এনপ ক ষমত এনস স

এছাড়াও পড়ুন:

মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার; তিনি মনে করছেন, নানা মহলের স্বার্থ দেখায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও মতৈক্য হবে না।

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন, সংস্কার প্রস্তাবসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। বর্তমান সংবিধান মেনে শপথ নেওয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করেন তিনি আগের মতোই।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এ আলোচনায় ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ। এই সরকারের কোনো এখতিয়ার নাই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তৈরি করার। এই সরকারের কোনো এখতিয়ারই নাই কোনো কমিশন তৈরি করার। কারণ, এটা ইলিগ্যাল গভর্নমেন্ট।’

ছাত্র–জনতার যে অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে, তাতে নেতৃত্ব দেওয়া অনেক তরুণই ফরহাদ মজহারের চিন্তার অনুসারী বলে মনে করা হয়। অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন বঙ্গভবনে শপথ নিয়েছিল, তখনই তার সমালোচনা করেছিলেন তিনি।

‘নভেম্বর থেকে জুলাই: বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’ শিরোনামের আজকের গোলটেবিলেও তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার সংবিধানে যদি আপনি শপথ করেন, আপনি রক্ষা করেন, তাহলে এটা রক্ষা করতে হবে। এটাকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, সংস্কার করতে পারবেন না।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘সম্পূর্ণ গণবিরোধী’ প্রস্তাব ছিল মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘এটাতে যারা পার্টিসিপেট করেছে, এরা গণবিরোধী। কারণ, আমাদের তো গণঐক্য ছিল। আমরা যে গণ–অভ্যুত্থান করেছি গণঐক্যের ভিত্তিতে, কোনো দল, দলের ভিত্তিতে করি নাই। এটাই ছিল এই আন্দোলনের বিউটি।’

অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করেছে, সেই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর যে সুপারিশ করেছে, তাতে নানা বিষয়ে বিভেদ দেখা দিয়েছে।

তা নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তাঁরা কখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন করপোরেশনের বিভিন্ন স্বার্থকে রক্ষা করে।’

সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে দেশের সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছেন লুটেরা মাফিয়া শ্রেণির সঙ্গে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। জনগণের সঙ্গে না। কোনো গণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও না। নারীদের সঙ্গে করেছে? করেনি। তো কার সঙ্গে করেছে?’
ফরহাদ মজহার মনে করেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর উচিত ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য অথবা শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার শপথ নেওয়া। সেটা না করে তারা ‘মারাত্মক ভুল’ করেছে।

গোলটেবিল আলোচনায় ফরহাদ মজহারের পাশেই বসে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন সমন্বয়ক, বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তখনকার ভুল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজেরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।’

ফরহাদ মজহার সেই ভুল শুধরে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘৫ আগস্ট আমরা ভুল করেছি। তো কী হয়েছে? আমরা আবার ঠিক করব।’ বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল করতে দ্রুত সময়ে গণপরিষদ গঠন করার কথা বলেন তিনি।

এই আলোচনায় এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এমন অনেক দল ছিল, যারা অনুভব করতে পারছিল না, চব্বিশের জুলাইয়ে দেশে অনেক বড় একটা ঘটনা ঘটেছে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাবিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৭৫ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন
  • প্রধান উপদেষ্টা আহ্বান জানালে আমরা যাব, অন্য দলকে দিয়ে আহ্বান কেন: সালাহউদ্দিন
  • যে বিষয়গুলো আলোচনাতেই আসে নাই, সেগুলোও ঢুকিয়েছে ঐকমত্য কমিশন: সেলিমা রহমান
  • সুস্থ থাকার মন্ত্রে নানা আয়োজনের ফ্লো ফেস্ট
  • বিএনপির জন্ম হয়েছে সংস্কার করার জন্য: ডা. জাহিদ  
  • অন্তর্বর্তী সরকার কেন জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করতে পারল না
  • নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু থিঙ্কট্যাংক বলছে, জুলাই সনদে নারী, কৃষক, শ্রমিক নেই: প্রেস সচিব
  • মতৈক্য হবে না, কারণ দলগুলো বিভিন্ন মহলের স্বার্থ দেখে: ফরহাদ মজহার
  • যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে
  • সংবিধান ও আইন অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ বিএন‌পি