বাংলাদেশের অর্থনীতি অস্থিরতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশ। ব্যাংকটি বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল হয়েছে ও টাকার মানের উন্নতি হচ্ছে। একই সঙ্গে রপ্তানি খাতেও দেখা যাচ্ছে ইতিবাচক গতি। ফলে আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করছে এসসিবি।

রাজধানীর একটি হোটেলে আজ বুধবার এসসিবি বাংলাদেশ আয়োজিত বার্ষিক ‘গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং’ অনুষ্ঠানে এ প্রত্যশার কথা তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি ছাড়াও ব্যাংকটির বেশ কিছু গ্রাহকও অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের বৈশ্বিক গবেষণা দল বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ তুলে ধরে। তারা বলছে, সাম্প্রতিক অস্থিরতা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে দেশ। মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে থাকলেও তা ধীরে ধীরে কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্থিতিশীলতা এসেছে এবং টাকার মান কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ইতিবাচক গতি দেখা যাচ্ছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও আমাদের আস্থা দীর্ঘমেয়াদি মৌলিক ভিত্তির ওপর। এখনকার স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে তার জন্য দরকার পরিকল্পিত নীতি, চলমান বিদেশি সহায়তা ও কাঠামোগত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার। এসব উদ্যোগ বৈশ্বিক রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও দেশের প্রবৃদ্ধিকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করবে।’

স্বল্প মেয়াদে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও আমাদের আস্থা দীর্ঘমেয়াদি মৌলিক ভিত্তির ওপর। এখনকার স্থিতিশীলতা ভবিষ্যতের টেকসই প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছেনাসের এজাজ বিজয়, সিইও, এসসিবি বাংলাদেশ

অনুষ্ঠানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ জানান, গত বছর নেওয়া সরকারের নীতিগত পরিবর্তনগুলো বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে একটি মজবুত অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে। প্রবৃদ্ধির সূচকগুলোয় উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।

তবে ব্যাংকটির গবেষণায় কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের কথাও উঠে এসেছে। বহুজাতিক ব্যাংকটি বলছে, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের হারও অনেক বেশি। রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার তুলনায় কমে গেছে, যা আগামী দিনে বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ করে রাজস্ব ও ভর্তুকি খাতে সংস্কার ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি টেকসই হবে না বলে মনে করছে ব্যাংকটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিরতায় বৈদেশিক মুদ্রা ও সুদের হারজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার ব্যবসা সহজ করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ জন্য নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।

এ ছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বৈদেশিক মুদ্রাবাজার, বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা ও বিশ্বব্যাপী চাহিদার পরিবর্তন নিয়েও মত বিনিময় করেন। পাশাপাশি নির্বাচনী সংস্কার ও গণতান্ত্রিক রূপান্তরপ্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১২০ বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে আসা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক দেশের বিভিন্ন বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পে বিনিয়োগ ছাড়াও আমদানি-রপ্তানি, এসএমই ঋণ ও গ্রাহক সেবায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ অন ষ ঠ ন এসস ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশে নামিয়ে আনল আইএমএফ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর আগে গত এপ্রিলে সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। 

আজ সোমবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের নির্বাহী পর্যদ বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির ১৩৪ কোটি ডলার ছাড় করার অনুমোদনের সঙ্গে বাড়তি ৮০ কোটি ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর আইএমএফ এক বিবৃতিতে এ তথ্যের পাশাপাশি জিডিপির পূর্বাভাসসহ অর্থনীতির বেশকিছু উল্লেখ করেছে। 

এতে বলা হয়, আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। এ দিকে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্যও আইএমএফ প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে। যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ অনুমানের চেয়ে কম। একই সঙ্গে সংস্থাটি জানিয়েছে, আগামী অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়াবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।  

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর দ্রুত অন্তর্বর্তী সরাকর গঠন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়। ফলে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে পর্যায়ক্রেম যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। তবে চলমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান বাধা এবং ব্যাংকিং খাতে চাপ বাড়ার কারণে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আগের চেয়ে কমেছে। 

আইএমএফের ডিএমডি এবং পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ার নাইজেল ক্লার্ক বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নীতি কার্যক্রম ও সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এবং বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগকে স্বাগত জানায় আইএমএফ। 

তিনি আরও বলেন, কঠিন রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত এবং বর্ধিত নিম্নমুখী ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি সংক্রান্ত অগ্রগতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, ঝুঁকিগ্রস্থ মানুষকে রক্ষা করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সংস্কার এজেন্ডা এগিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা উত্তর সিটিতে ৬ হাজার ৬৯ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
  • মশা মারতে ডিএনসিসির বাজেট ১৮৮ কোটি টাকা
  • কালোটাকা সাদা না করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত
  • রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ ৪ কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি খারাপ
  • জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৫.৪ শতাংশে নামিয়ে আনল আইএমএফ
  • সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা
  • একনেকে ৮৯৭৪ কোটি টাকার ১৭ প্রকল্প অনুমোদন
  • হঠাৎ সরকারের ঋণ বেড়েছে সঞ্চয়পত্রে
  • চসিকের ২১৪৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা