ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ-২০২৫ এ দক্ষিণ আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার পারফরম্যান্স যেন দুই মেরুতে দাঁড়িয়ে। যেখানে ব্রাজিলের চারটি ক্লাব— ফ্ল্যামেঙ্গো, পালমেইরাস, বোতাফোগো ও ফ্লুমিনেন্স; দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে। সেখানে আর্জেন্টিনার দুই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব বোকা জুনিয়র্স ও রিভার প্লেট গ্রুপপর্বেই বিদায় নিয়েছে।

শেষ ষোলোতে পালমেইরাস ও বোতাফোগো মুখোমুখি হচ্ছে। ফলে অন্তত একটি ব্রাজিলিয়ান ক্লাব কোয়ার্টার ফাইনালে নিশ্চিত। অন্যদিকে ফ্ল্যামেঙ্গো খেলবে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে। আর ফ্লুমিনেন্স লড়বে ইন্টার মিলানের সঙ্গে।

চলুন ক্লাবগুলোর গ্রুপ পর্বের পারফরম্যান্সে চোখ বুলানো যাক—

আরো পড়ুন:

শেষ নয়, আল-নাসরে নতুন অধ্যায়ের শুরু রোনালদোর

কষ্টের জয়ে শেষ ষোলোতে ইন্টার, বরুসিয়াও নকআউট পর্বে

ব্রাজিলের চার ক্লাব: দুর্দান্ত ধারাবাহিকতা

১.

ফ্ল্যামেঙ্গো (গ্রুপ ডি):
ম্যাচ ১: ফ্ল্যামেঙ্গো ৩–১ চেলসি।
ম্যাচ ২: ফ্ল্যামেঙ্গো ২–০ এস্পেরঁস (তিউনিসিয়া)।  
ম্যাচ ৩: ফ্ল্যামেঙ্গো ১–১ এলএএফসি।
পয়েন্ট টেবিল: ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।  
দলের উল্লেখযোগ্য পারফরমার: জর্জিয়ান ডি আরাস্কায়েতা (২টি ম্যাচে ম্যাচসেরা)।

২. পালমেইরাস (গ্রুপ এ):
ম্যাচ ১: পালমেইরাস ০–০ পোর্তো। 
ম্যাচ ২: পালমেইরাস ২–০ আল আহলি।  
ম্যাচ ৩: পালমেইরাস ২–২ ইন্টার মায়ামি।
পয়েন্ট টেবিল: ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।  
দলের উল্লেখযোগ্য পারফরমার: “মেসিনহো” নামে পরিচিত তরুণ এস্তেভাও উইলিয়ান (১টি ম্যাচে ম্যাচসেরা)।

৩. বোতাফোগো (গ্রুপ বি):
ম্যাচ ১: বোতাফোগো ২–১ সিয়াটল সাউন্ডার্স।
ম্যাচ ২: বোতাফোগো ১–০ পিএসজি।  
ম্যাচ ৩: বোতাফোগো ০–১ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ  
পয়েন্ট টেবিল: ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার-আপ।  
দলের উল্লেখযোগ্য পারফরমার: ইগর জেসুস (২টি ম্যাচে ম্যাচসেরা)।

৪. ফ্লুমিনেন্স (গ্রুপ এফ):
ম্যাচ ১: ফ্লুমিনেন্স ১–১ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।
ম্যাচ ২: ফ্লুমিনেন্স ২–০ উলসান এইচডি।
ম্যাচ ৩: ফ্লুমিনেন্স ১–০ মামেলোডি সানডাউন্স।  
পয়েন্ট টেবিল: ৭ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন।  
দলের উল্লেখযোগ্য পারফরমার: জন আরিয়াস (ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে ম্যাচসেরা)।

আর্জেন্টিনার দুই ক্লাব: হতাশাজনক বিদায়

১. রিভার প্লেট (গ্রুপ ই):
ম্যাচ ১: রিভার প্লেট ১–১ উরাওয়া রেড ডায়মন্ডস।
ম্যাচ ২: রিভার প্লেট ০–২ মন্টেররে।
ম্যাচ ৩: রিভার প্লেট ০–২ ইন্টার মিলান। 
পয়েন্ট টেবিল: ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে চতুর্থ।

২. বোকা জুনিয়র্স (গ্রুপ সি):
ম্যাচ ১: বোকা জুনিয়র্স ০–৩ বায়ার্ন মিউনিখ।
ম্যাচ ২: বোকা জুনিয়র্স ১–১ বেনফিকা।
ম্যাচ ৩: বোকা জুনিয়র্স ০–১ অকল্যান্ড সিটি।  
পয়েন্ট টেবিল: ১ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপে তৃতীয়।  

ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলো সম্মিলিতভাবে ১৪ গোল করেছে, খেয়েছে মাত্র ৪টি এবং কেউই হারেনি গ্রুপপর্বে। আর্জেন্টিনার ক্লাবগুলো মাত্র ২ গোল করেছে, খেয়েছে ৭টি এবং কেউ-ই জয় পায়নি। এই পারফরম্যান্স প্রমাণ করে, দক্ষিণ আমেরিকার ক্লাব ফুটবলে ব্রাজিলের আধিপত্য এখনো অটুট এবং তারা ইউরোপীয় জায়ান্টদের জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠছে।

ক্লাব বিশ্বকাপে ভালো করার পেছনের কারণ:
ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলো তাদের মিড-সিজন ফর্ম ও উচ্চ তাপমাত্রায় খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছে। যেখানে ইউরোপীয় ও আর্জেন্টাইন ক্লাবগুলো ছিল অফ-সিজনে। এখন দেখার বিষয় নকআউটপর্বে তারা কেমন কী করে।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল প রফরম য ন স আর জ ন ট ন র ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে 

পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।

শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্‌ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।

১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে। 

একনজরে জয়দেব

চারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।

ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। 

পাহাড় আর ঝিরির পথে পথে

খাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।

জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে। 

সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে। 

জয়দেব রোয়াজা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে