জুভেন্টাসের বিপক্ষে ৫-২ গোলের দাপুটে জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে নিজেদের শক্ত অবস্থান আরও একবার তুলে ধরল গার্দিওলার দল। ফুটবল মাঠে সিটি যেন এক তরঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ল; গতি, কৌশল, নতুন মুখ এবং পুরনো তারকাদের পারস্পরিক মেলবন্ধনে তৈরি হলো এক নিখুঁত সিম্ফনি।

শুরু থেকেই বলের দখল, আক্রমণের ধার এবং মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণ; সবদিক থেকেই সিটি ছিল সম্পূর্ণ আধিপত্যে। নবম মিনিটে জেরেমি ডোকু ম্যাচের সূচনা করেন এক চমৎকার গোলে। যার পরপরই (২৬ মিনিটে) সাভিনহোর ক্রস থেকে জুভেন্টাসের কালুলু আত্মঘাতী গোল করে বসেন। কিন্তু সবচেয়ে দৃষ্টি কেড়েছেন আর্লিং হালান্ড। যিনি দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নেমে সপ্তম মিনিটেই নিজের পেশাদার ক্যারিয়ারের ৩০০তম গোলটি করেন চূড়ান্ত ফুটওয়ার্ক ও শীতল স্নায়ুর দুর্দান্ত সমন্বয়ে।

সিটির চতুর্থ গোলটি আসে ফিল ফোডেনের পা থেকে। আর জয় নিশ্চিত করেন সাভিনহো যিনি ম্যাচ জুড়েই ছিলেন দুর্দান্ত ছন্দে। ওদিকে, জুভেন্টাস ম্যাচে কিছু মুহূর্তে প্রতিরোধ গড়লেও কুপমেইনার্স ও ভ্লাহোভিচের গোলগুলো ছিল অনেকটাই সান্ত্বনার মতো।

আরো পড়ুন:

গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে রিয়াল

ব্রাজিলের ৪টি ক্লাবই নকআউটে, আর্জেন্টিনার সব ক্লাবই গ্রুপপর্বে বিদায়

এই ম্যাচে নতুন মুখদের পারফরম্যান্স ছিল অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। মিডফিল্ডে রেইজেন্ডার্স ও চেরকি বলের নিয়ন্ত্রণ ও ডিস্ট্রিবিউশনে দেখিয়েছেন পরিপক্বতা। রায়ান আইত-নৌরি রক্ষণে যেমন বল কাড়ায় কার্যকর ছিলেন, তেমনই আক্রমণেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সিটির সাম্প্রতিক রিক্রুটমেন্ট যে নিখুঁত ছিল, তা মাঠেই প্রমাণিত।

দলের নেতৃত্বে পরিবর্তনের পর নতুন অধিনায়ক বার্নার্ডো সিলভার অধীনে সিটি যেন মানসিকভাবে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ম্যাচ শেষে সিলভা বলেন, বিগত মৌসুমের ব্যর্থতা ভুলে গিয়ে তারা এবার নিজেদের নতুনভাবে গড়ে তুলতে চায়। তার মতে, নেতৃত্ব এখন ব্যক্তিনির্ভর না হয়ে দলনির্ভর হয়ে উঠেছে, যেখানে প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে দলকে এগিয়ে নিতে সচেষ্ট।

গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচে তিন জয় আর ১৩ গোল করে ম্যানচেস্টার সিটি দেখিয়ে দিলো তারা আর পিছনে তাকাতে রাজি নয়। জুভেন্টাস এই হারেও নকআউটে উঠলেও সিটির বার্তা ছিল স্পষ্ট, বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এবার তাদেরই চাই।

আগামী ১৩ জুলাই নিউ জার্সিতে নির্ধারিত ফাইনালে ওঠার দৌড়ে এই আত্মবিশ্বাসই হতে পারে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

দাম্পত্য–জীবনে মতভেদ হলে ইসলামের নির্দেশনা

আল্লাহ বলেন, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে একটি হলো—তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করো। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২১)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, দাম্পত্য জীবন মানে একজন আরেকজনের মধ্যে শান্তি খোঁজা, একে অপরকে ভালোবাসা ও দয়া দেখানো। সম্মান, বোঝাপড়া, সহানুভূতি—এই গুণগুলো ছাড়া সম্পর্ক টিকে থাকে না।

নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪

এক দম্পতির স্ত্রীর অভিযোগ, তাঁর স্বামী প্রতিটি বিষয়কে ‘ধর্মীয় দায়িত্ব’ বলে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তো শুধু আল্লাহর সামনে দায়িত্ব পালন করছি, তুমি মানো বা না মানো, সেটা তোমার ব্যাপার।’

কিন্তু স্ত্রী এতে আহত হন, কারণ এতে তিনি বোঝেন—স্বামী আসলে তাঁর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। ইসলাম শিক্ষা দেয়—পরামর্শ যেন হয় কোমল ভাষায়, স্নেহ ও শ্রদ্ধার সঙ্গে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, নরম স্বভাব যা কিছুতেই থাকবে, তা তাকে সুন্দর করে তোলে, আর যখনই তা থেকে তুলে নেওয়া হয়, তা কুৎসিত হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৫৯৪)

অন্য হাদিসে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫)

আরও পড়ুনআয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন১২ জুন ২০২৫পরামর্শ ও সমাধান কী হতে পারে?

এমন পরিস্থিতি প্রায় দম্পতির মধ্যেই হয়। তাই একে জটিল করে দেখা উচিত নয়। পারস্পরিক কল্যাণ ভাবনার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। কয়েকটি কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার:

আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’

১. আলোচনার পথ খোলা রাখা

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মতভেদ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হয় যখন একপক্ষ সবসময় আদেশ করে আর অন্য পক্ষ কথা বলার সুযোগই পায় না। ভালোবাসার সম্পর্কে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি যদি স্ত্রী হন, তবে শান্তভাবে বলুন—’আমি তোমার কথা শুনতে চাই, কিন্তু আমাকেও কথা বলতে দাও।’ আর যদি স্বামী হন, তাহলে বুঝুন—আপনার স্ত্রীর মন খুলে কথা বলার প্রয়োজন আছে। আপনি তাঁর মালিক নন, বরং তাঁর সঙ্গী।

২. ‘পরামর্শ’ আর ‘নিয়ন্ত্রণ’ এক নয়

অনেকে পরামর্শের নামে স্ত্রীকে চাপে ফেলেন। সেটা ঠিক না। পরামর্শ তখনই কাজে আসে, যখন তা ভালোবাসা আর সম্মানের সঙ্গে দেওয়া হয়। কাউকে সম্মান করা মানে এই নয় যে তাঁর সব কথা মানতেই হবে। ইসলাম আমাদের চিন্তা ও বিচারবোধ দিয়েই সম্মানিত করেছে।

৩. বড় সিদ্ধান্তগুলো একসঙ্গে নিন

বিয়ের আগে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না—যেমন: পোশাক, হিজাব বা নিকাব নিয়ে মতভেদ, সন্তান পালনের পদ্ধতি, সামাজিক আচার ইত্যাদি। এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করুন। একসাথে বসে ঠিক করুন—কোন বিষয়গুলো তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলোতে একে অপরকে ছাড় দেওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন২৫ জুন ২০২৫

৪. সমঝোতা ও সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন

আপনার স্বামী যদি বলে, ‘আমি তো দায়িত্ব পালন করে দিচ্ছি, তুমি মানো বা না মানো সেটা তোমার ব্যাপার’, তখন আপনি বলতে পারেন: ‘আলহামদুলিল্লাহ, আপনি দায়িত্ব পালন করছেন। আমিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই চিন্তা করি। আসুন আমরা একসাথে বুঝে নেই কী করলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন, আর আমাদের সম্পর্কটাও সুন্দর থাকবে।’

তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার পরিবারের জন্য উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের জন্য সবচেয়ে উত্তম।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৮৯৫

৫. একান্ত প্রয়োজনে পারিবারিক পরামর্শ নিন

দাম্পত্যে কিছু সমস্যা এমন হয় যা বাইরের একজন বোঝাতে পারলে দুজনেই স্বস্তি পায়। একজন বিশ্বস্ত ইসলামিক কাউন্সেলর বা বুঝদার অভিভাবকের সহায়তা নিতে পারেন। বিয়ে মানে শুধু দায়িত্ব নয়, বরং একে অপরের অন্তরকে জানার, বোঝার এবং নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার সম্পর্ক।

মতভেদ থাকবেই। কিন্তু সেটা যেন ভালোবাসা ও সম্মানের ভিতরে থেকে সমাধান হয়। কারও মুখ বন্ধ করে দিয়ে, কাউকে নিচু দেখিয়ে কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। একসাথে বসে কথা বলুন, ভুল বুঝলে ক্ষমা চান, একজন আরেকজনের হৃদয় খোলার সুযোগ তৈরি করুন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে শান্তিপূর্ণ, ভালোবাসাময় দাম্পত্য জীবন গঠনের তাওফিক দিন।

আরও পড়ুনকোরআনের আয়াত ও দাম্পত্য সম্পর্কে সমঝোতা১৪ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ