জুলাই ঘোষণাপত্র, প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এবং গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর ভাষায় দায়ী করেছে এবং ঘোষণাপত্র না দেওয়ার ব্যর্থতার জন্য তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে সংগঠনটি মাসব্যাপী ৩৬ দিনের কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‌‌‘আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই—জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র কোনো প্রাইভেট ইনিশিয়েটিভ হতে পারে না, এটি একটি রাষ্ট্রীয় দলিল। ফলে এই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সরকারকেই দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে ছাত্র-জনতা প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নেমে এসে সকল রাজনৈতিক দল, মত ও অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের কাছ থেকেই জুলাই ঘোষণাপত্র আদায় করে নেবে ইনশাআল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সাড়ে পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই এবং লাখো ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছি। কিন্তু সরকার এখনও পর্যন্ত শহীদদের স্বীকৃতি, আহতদের পুনর্বাসন কিংবা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।”

গত ১০ মে সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছিল। সেই সময়সীমা ২৫ জুনে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত সরকার কোনো বক্তব্য বা ব্যাখ্যা দেয়নি—এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আপ বাংলাদেশ।

৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা:

আপ বাংলাদেশ জানায়, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হবে। ঘোষিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১। ১ জুলাই–৩৬ জুলাই: দেশব্যাপী গণসংযোগ
২। ৪ জুলাই: বরিশাল বিভাগীয় গণসংযোগ
৩। ৫ জুলাই: রংপুর বিভাগীয় গণসংযোগ
৪। ১১ জুলাই: চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসংযোগ
৫। ১২ জুলাই: সিলেট বিভাগীয় গণসংযোগ
৬। ১৫ জুলাই: নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ স্মরণ
৭। ১৬ জুলাই: দোয়া ও শহীদদের কবর জিয়ারত
৮। ১৮ জুলাই: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধ স্মরণ
৯। ১৮ জুলাই: খুলনা বিভাগীয় গণসংযোগ
১০। ১৯ জুলাই: রাজশাহী বিভাগীয় গণসংযোগ
১১। ১৯ জুলাই: মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধ স্মরণ
১২। ২০ জুলাই: মেহনতি মানুষের প্রতিরোধ স্মরণ
১৩। ২৫ জুলাই: ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণসংযোগ
১৪। ২৬ জুলাই: ঢাকা বিভাগীয় গণসংযোগ
১৫। ১ আগস্ট: জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
১৬। ৩ আগস্ট: হাসিনা পতনের এক দফা স্মরণ
১৭। ৫ আগস্ট: গণঅভ্যুত্থান ও নতুন বাংলাদেশ দিবস উদযাপন

এছাড়া, জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবিতে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সংলাপের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। পাশাপাশি, সারাদেশে সাধারণ সমর্থক বৃদ্ধির কার্যক্রমও চলমান থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনের সমাপ্তিতে বলা হয়, ‘‘জুলাই আমার, জুলাই আপনার, জুলাই বাংলাদেশের আপামর ছাত্র-জনতার। নতুন বাংলাদেশের পথরেখা হবে এই আত্মত্যাগ ও কুরবানির ভিত্তিতেই। সরকার যেন আর কালক্ষেপণ না করে, জনগণের স্পন্দন বুঝে দ্রুতই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করে।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আপ বাংলাদেশের সদস্য সচিব আরেফিন মোহাম্মদ হিজবুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা ইরা, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমাদ এবং অন্যান্য কেন্দ্রীয় সদস্য ও সংগঠকবৃন্দ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আপ ব ল দ শ ব ভ গ য় গণস য গ ভ গ য় গণস য গ ১ প রক শ সরক র আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন ড. ইউনূস 

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেছেন, ‍“চলমান সংস্কার, খুনিদের বিচার ও দেশের বর্তমান অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ড. ইউনূস সরকার হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন। এভাবে চলতে থাকলে দেশ থেকে মুজিববাদ ও ফ্যাসিবাদ বিলোপ হবে না।”

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের ফ্যামিলি জোন নামে একটি রেষ্টুরেন্টে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে ২০২৪ সালের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং একটি সফল গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয় শীর্ষক’ আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মো. রাশেদ খান বলেন, “চুনোপুটিদের নয়, খুনি শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, কামাল ও শামীম ওসমানদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির দড়িতে ঝোলাতে হবে। এ নিয়ে জাতি কোনো টালবাহানা সহ্য করতে পারে না। প্রয়োজন হলে আরো ১০টি ট্রাইব্যুনাল বসাতে হবে। টাকা না থাকলে জনগণ টাকা দেবে।”

এনসিপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই দলটি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। এটা আমার কথা নয়, টিআইবি প্রধান তাদের কিংস পার্টি বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাছাড়া এনসিপি সমর্থিত দুই উপদেষ্টা পদ নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। তারপরও হাসনাত আব্দল্লারা ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা করছেন। তাদেরও ভুল ভাঙ্গতে বসেছে।”

তিনি বলেন, “যারা হাসিনার মতো স্বৈরশাসককে পরাজিত করতে পেরেছে, তারা আজ নানা কলঙ্কের তিলক মাথায় নিচ্ছে। চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হচ্ছেন। মানুষ ও সমাজের কাছে এইসব বীরেরা হেয় হচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ছাত্রদের কলঙ্কিত করলো কারা?”

রাশেদ খান বলেন, “প্রত্যেক উপদেষ্টা দুর্নীতি করছেন। তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। ডিসি নিয়োগ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই দুর্নীতির ছোঁয়া লেগে আছে। ১৬ বছর বিএনপি-জামায়াতের তকমা গায়ে লাগানো আমলারা এখনো নির্যাতিত ও পদ বঞ্চিত হচ্ছেন।”

জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্ন গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, “যে সরকার শহীদদের তালিকা তৈরি করতে পারে না, তাদের কাছ থেকে জাতি কি আশা করতে পারে। জাতিসংঘের তদন্তে নিহতের সংখ্যা ১৪০০, কিন্তু জুলাই সনদে সংখ্যা এক হাজার করা হলো। এটা কেন এবং কিভাবে হলো?”

গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে মাঠে থাকার আহ্বান জানিয়ে মো. রাশেদ খান বলেন, “মাঠে না থাকলে আওয়ামী লীগ মাঠ দখল করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে তারা এমন ষড়যন্ত্র করে বসে আছে। তাই সবাইকে কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকতে হবে। ১৪ দল ও জাতীয় পার্টি নানা বাহানায় নির্বাচন করতে চাইবে। তাদেরকেও প্রতিহত করতে হবে। কারণ তারাও হাসিনার সঙ্গী।” ১৪, ১৯ ও ২৪ সালে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী ডিসি, এসপি ও ইউএনওদের বিচার দাবি করেন তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি শাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, যুব অধিকারের সভাপতি রাকিবুল হাসান রকিব, যুবনেতা মো. মিশন আলী, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুল্লা আল মামুন, সাধারণ সম্পাদ মো. রায়হান হোসেন রিহান, মো. মাহাফুজ রহমান, মো. হালিম পারভেজ ও মো. নাহিদ হাসনান বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিচার বিভাগকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করছে ফ্যাসিস্ট আ.লীগ ও তাদের দোসররা
  • ফতুল্লায় শহীদ ও আহতদের স্বরণে এনসিপির দোয়া
  • জবির ছাত্রী হলে মেডিকেল সেবা চালুর উদ্যোগ
  • বাংলাদেশে থাকা ৭১ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর পাশে মাস্তুল ফাউন্ডেশন
  • গণ-অভ্যুত্থান ছাড়া ফ্যাসিবাদ সরানো যায় না: মাহমুদুর রহমান
  • তরুণরাই হবেন নতুন বাংলাদেশের চালিকাশক্তি: আসিফ
  • দেশে কিছু ভুয়া সমন্বয়ক সৃষ্টি হয়েছে: দুদক চেয়ারম্যান
  • অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, হাসিনার পরামর্শে দেশ চালাচ্ছেন ড. ইউনূস