১৮৯৮ সালে এক বিজ্ঞানী পৃথিবীতে ৪০০ বছরের অক্সিজেন আছে বলে কল্পনা করেন। আমাদের দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির বিভিন্ন বিজ্ঞান বইয়ে সেই বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বেশ পরিচিত এক নাম। উনিশ শতকের বিজ্ঞান–দুনিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব লর্ড কেলভিন। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে নির্বাচিত প্রথম বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি। একাধারে গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী হিসেবে তাঁর অবদান এখনো বিজ্ঞান–দুনিয়ায় আলোচিত। যান্ত্রিক (মেকানিক্যাল) রেফ্রিজারেশনের মৌলিক নীতি নিয়ে তাঁর অনেক কাজ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে প্রায়ই মেকানিক্যাল রেফ্রিজারেশনের জনক হিসেবে ভূষিত করা হয়। পরম শূন্য তাপমাত্রার মান নির্ধারণের জন্য তিনি আলোচিত। লর্ড কেলভিনের আগে এই তাপমাত্রার ধারণা প্রচলিত থাকলেও তিনিই প্রথম তা শূন্যের নিচে ২৭৩.
লর্ড কেলভিনের আসল নাম উইলিয়াম থমসন। তিনি ১৮২৪ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জেমস থমসন ছিলেন গণিতবিদ ও রয়াল বেলফাস্ট একাডেমিক্যাল ইনস্টিটিউশনের প্রকৌশলী। মাত্র ১০ বছর বয়সে লর্ড কেলভিন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুলের শিক্ষাদান করা হতো। লর্ড কেলভিন তেমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুলের শিক্ষা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সে গ্রিক ভাষা থেকে ডায়ালগস অব গডস নামের একটি বই অনুবাদ করে পুরস্কার পান তিনি। ১৮৪০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি পৃথিবীর আকার শীর্ষক একটি লেখার জন্য পুরস্কার পান। ১৮৪১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি থার্মাল কনডাকশন ও ইলেকট্রোস্ট্যাটিকস নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র রচনা করেন। ১৮৪১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি। গবেষণার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মিথ প্রাইজ পান। ১৮৪৭ সালের মধ্যে তিনি শক্তিমান বিজ্ঞানী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ১৮৪৮ সালে তিনি পরম তাপমাত্রার স্কেলের প্রস্তাব দেন।
১৮৪৬ সালে কেলভিন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক দর্শনের অধ্যাপনা শুরু করেন। এই পদে তিনি ৫০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। গ্লাসগোতে তিনি ব্রিটেনের প্রথম পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার তৈরি করেন। তিনি তড়িতচুম্বকত্ব ও তাপগতিবিজ্ঞানের একজন পথিকৃৎ হিসেবে আলোচিত। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সঙ্গে তিনি তড়িতচুম্বকীয় ক্ষেত্রের ধারণা প্রবর্তন নিয়ে গবেষণা করেন। তাপগতিবিজ্ঞানে বিজ্ঞানী থমসন আরও দুই বিজ্ঞানী নিকোলাস কার্নট ও জেমস জুলের কাজকে আত্মীকরণ করে বিকশিত করেন। তাপগতিবিদ্যায় তাঁর গবেষণা আধুনিক রেফ্রিজারেশনশিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে। তাপ ও তাপমাত্রার প্রকৃতি নিয়ে তাঁর পরম তাপমাত্রা স্কেল এখন কেলভিন স্কেল নামে পরিচিত। দক্ষ শীতলীকরণ প্রযুক্তি বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করেন তিনি। তাপমাত্রার একটি মৌলিক নিম্নসীমা হিসেব তিনি পরম শূন্য তাপমাত্রার ধারণাকে বিস্তৃত করেন।
লর্ড কেলভিন সাবমেরিন টেলিগ্রাফির ওপর কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আটলান্টিক টেলিগ্রাফ কেব্ল স্থাপনের ক্ষেত্রে কেলভিন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ জন্য তাঁকে ১৮৬৬ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সামুদ্রিক বিষয়ে আগ্রহের জন্য তিনি একটি কম্পাস তৈরি করেন। এ ছাড়া জোয়ার–ভাটার যন্ত্র ও গভীরতা পরিমাপের সরঞ্জাম উদ্ভাবন করেন তিনি। তিনি অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। গ্লাসগোতে তাঁর বাড়িতে প্রথম বৈদ্যুতিক আলো প্রবেশ করে। ১৮৬৫ সালে তিনি সাগরে তার স্থাপনের জন্য এসএস গ্রেট ইস্টার্নের অভিযানে যুক্ত হন। ১৮৬৯ সালে তিনি ফ্রেঞ্চ আটলান্টিক সাবমেরিন কেব্ল স্থাপনের কাজে যুক্ত হন। ১৮৮৪ সালের পর তিনি প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে ডাক ম্যাটার ধারণা সম্পর্কে তাত্ত্বিক ধারণা দেন। ছায়াপথে ডার্ক ম্যাটার খোঁজার চেষ্টা করেন।
থমসন ১৮৯২ সালে লর্ড অব লার্জস উপাধিতে উন্নীত হন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত রয়াল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৭ সালে স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারে মারা যান। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
সূত্র: বিবিসি
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জন য ত র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
যান্ত্রিক রেফ্রিজারেটরের জনক
১৮৯৮ সালে এক বিজ্ঞানী পৃথিবীতে ৪০০ বছরের অক্সিজেন আছে বলে কল্পনা করেন। আমাদের দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির বিভিন্ন বিজ্ঞান বইয়ে সেই বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিন বেশ পরিচিত এক নাম। উনিশ শতকের বিজ্ঞান–দুনিয়ার প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব লর্ড কেলভিন। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসে নির্বাচিত প্রথম বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি। একাধারে গণিতবিদ, পদার্থবিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী হিসেবে তাঁর অবদান এখনো বিজ্ঞান–দুনিয়ায় আলোচিত। যান্ত্রিক (মেকানিক্যাল) রেফ্রিজারেশনের মৌলিক নীতি নিয়ে তাঁর অনেক কাজ রয়েছে। এ জন্য তাঁকে প্রায়ই মেকানিক্যাল রেফ্রিজারেশনের জনক হিসেবে ভূষিত করা হয়। পরম শূন্য তাপমাত্রার মান নির্ধারণের জন্য তিনি আলোচিত। লর্ড কেলভিনের আগে এই তাপমাত্রার ধারণা প্রচলিত থাকলেও তিনিই প্রথম তা শূন্যের নিচে ২৭৩.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হিসেবে বের করেন।
লর্ড কেলভিনের আসল নাম উইলিয়াম থমসন। তিনি ১৮২৪ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জেমস থমসন ছিলেন গণিতবিদ ও রয়াল বেলফাস্ট একাডেমিক্যাল ইনস্টিটিউশনের প্রকৌশলী। মাত্র ১০ বছর বয়সে লর্ড কেলভিন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুলের শিক্ষাদান করা হতো। লর্ড কেলভিন তেমনিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কুলের শিক্ষা লাভ করেন। ১২ বছর বয়সে গ্রিক ভাষা থেকে ডায়ালগস অব গডস নামের একটি বই অনুবাদ করে পুরস্কার পান তিনি। ১৮৪০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানে তিনি পৃথিবীর আকার শীর্ষক একটি লেখার জন্য পুরস্কার পান। ১৮৪১ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি থার্মাল কনডাকশন ও ইলেকট্রোস্ট্যাটিকস নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র রচনা করেন। ১৮৪১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও বেশ সক্রিয় ছিলেন তিনি। গবেষণার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মিথ প্রাইজ পান। ১৮৪৭ সালের মধ্যে তিনি শক্তিমান বিজ্ঞানী হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ১৮৪৮ সালে তিনি পরম তাপমাত্রার স্কেলের প্রস্তাব দেন।
১৮৪৬ সালে কেলভিন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাকৃতিক দর্শনের অধ্যাপনা শুরু করেন। এই পদে তিনি ৫০ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। গ্লাসগোতে তিনি ব্রিটেনের প্রথম পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার তৈরি করেন। তিনি তড়িতচুম্বকত্ব ও তাপগতিবিজ্ঞানের একজন পথিকৃৎ হিসেবে আলোচিত। বিজ্ঞানী ফ্যারাডের সঙ্গে তিনি তড়িতচুম্বকীয় ক্ষেত্রের ধারণা প্রবর্তন নিয়ে গবেষণা করেন। তাপগতিবিজ্ঞানে বিজ্ঞানী থমসন আরও দুই বিজ্ঞানী নিকোলাস কার্নট ও জেমস জুলের কাজকে আত্মীকরণ করে বিকশিত করেন। তাপগতিবিদ্যায় তাঁর গবেষণা আধুনিক রেফ্রিজারেশনশিল্পের ভিত্তি স্থাপন করে। তাপ ও তাপমাত্রার প্রকৃতি নিয়ে তাঁর পরম তাপমাত্রা স্কেল এখন কেলভিন স্কেল নামে পরিচিত। দক্ষ শীতলীকরণ প্রযুক্তি বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করেন তিনি। তাপমাত্রার একটি মৌলিক নিম্নসীমা হিসেব তিনি পরম শূন্য তাপমাত্রার ধারণাকে বিস্তৃত করেন।
লর্ড কেলভিন সাবমেরিন টেলিগ্রাফির ওপর কাজ করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আটলান্টিক টেলিগ্রাফ কেব্ল স্থাপনের ক্ষেত্রে কেলভিন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ জন্য তাঁকে ১৮৬৬ সালে নাইট উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সামুদ্রিক বিষয়ে আগ্রহের জন্য তিনি একটি কম্পাস তৈরি করেন। এ ছাড়া জোয়ার–ভাটার যন্ত্র ও গভীরতা পরিমাপের সরঞ্জাম উদ্ভাবন করেন তিনি। তিনি অনেক বৈদ্যুতিক যন্ত্র আবিষ্কার করেন। গ্লাসগোতে তাঁর বাড়িতে প্রথম বৈদ্যুতিক আলো প্রবেশ করে। ১৮৬৫ সালে তিনি সাগরে তার স্থাপনের জন্য এসএস গ্রেট ইস্টার্নের অভিযানে যুক্ত হন। ১৮৬৯ সালে তিনি ফ্রেঞ্চ আটলান্টিক সাবমেরিন কেব্ল স্থাপনের কাজে যুক্ত হন। ১৮৮৪ সালের পর তিনি প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে ডাক ম্যাটার ধারণা সম্পর্কে তাত্ত্বিক ধারণা দেন। ছায়াপথে ডার্ক ম্যাটার খোঁজার চেষ্টা করেন।
থমসন ১৮৯২ সালে লর্ড অব লার্জস উপাধিতে উন্নীত হন। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত রয়াল সোসাইটির সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৭ ডিসেম্বর ১৯০৭ সালে স্কটল্যান্ডের আয়ারশায়ারে মারা যান। ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
সূত্র: বিবিসি