অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর স্থিতিশীলতা এসেছে: শরিফ
Published: 30th, June 2025 GMT
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল বলেছেন, “বিএনপি গত ১৭ বছর ধরে মানুষের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর বাংলাদেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা ফেরত এসেছে।”
সোমবার (৩০ জুন) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের একটি রেষ্টুরেন্টে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শরিফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, “দৌলতপুরের ছেলে হিসেবে আমি এখন দৌলতপুরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। প্রতিটি নেতাকর্মীর খোঁজ খবর রাখছি।”
আরো পড়ুন:
‘মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করলাম’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান বিএনপির
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে অংশ হতে পেরে গর্বিত জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ১৭ বছরে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ৩০০’র বেশি মামলার আসামি হয়েছি। ২৮টি গুলিবিদ্ধ শরীর নিয়েও সরকার পতনের আন্দোলন চালিয়ে গেছি।”
যুবদলের এই নেতা বলেন, “আমার রাজনীতির বয়স ৩১ বছর। এই ৩১ বছরের মধ্যে ৩১ মিনিটও আমার রাজনীতিতে গ্যাপ নেই। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে আমি সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করি।”
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হবেন কিনা জানতে চাইলে শরিফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, “দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করতে প্রস্তত আছি।”
মনোনয়ন না পেলে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “দল যাকেই মনোনয়ন দেবে, তার জন্যই আমি শতভাগ উজাড় করে দিয়ে কাজ করব। মনোনয়ন পেলে দলের কর্মী, না পেলে দলের কর্মী না; আমি মোটেও সেই নীতিতে বিশ্বাসী না।”
মতবিনময় সভায় কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলতাফ হোসেন, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মন্টি সরকার, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাতসহ স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র দ লতপ র র আহ ব
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যায়বিচার ও সামাজিক প্রতিরোধ
বাংলাদেশে ধর্ষণ যেন অপ্রতিরোধ্য অপরাধে পরিণত। গত মার্চে মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশব্যাপী সংঘটিত প্রবল প্রতিবাদের রেশ না কাটিতেই গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরে একজন হিন্দু নারী ধর্ষণের শিকার হইলেন। শুধু উহাই নহে; রবিবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এক বিবৃতিতে জানাইয়াছে, চলতি বৎসরের জানুয়ারি হইতে মে মাস পর্যন্ত দেশে ৩৮৩টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে; যাহার অর্ধেকেরও বেশি ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ বৎসরের কম। বলা যায়, অত্যন্ত কঠোর আইন, নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ, সংবাদমাধ্যমের আধেয়– কোনো কিছুই ধর্ষণকারীর দৌরাত্ম্য বন্ধে যথেষ্ট নহে বলিয়া প্রমাণিত। দেশের সর্বত্র বিভিন্ন বয়সী নারী ধর্ষণের শিকার হইতেছেন। কখনও কখনও অবিশ্বাস্য রকমের পাশবিক কায়দায় এই জঘন্য অপরাধটি ঘটিতেছে। ইহার পরিপ্রেক্ষিতে যখন সমগ্র দেশে ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদ জাগিয়া উঠে তখন কর্তৃপক্ষেরও চৈতন্যোদয় হয়। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ধর্ষণপ্রবণতা সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় ক্রমবর্ধমান।
অতীতে দেখা গিয়াছে, যখনই কোনো ধর্ষণের ঘটনার পর জনপরিসরে জোর প্রতিবাদ চলিত, তখনই সরকারের ঊর্ধতন ব্যক্তিবর্গ ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি লইয়া জনসমক্ষে আসেন। কিন্তু প্রতিবাদ থামিয়া গেলে সকল কিছুই চাপা পড়িয়া যায়। পরিস্থিতি রহিয়া যায় তথৈবচ। বর্তমান সরকারও মুরাদনগরের ঘটনায় দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়াছে। হয়তো আছিয়াকাণ্ডের ন্যায় উক্ত ঘটনারও নিম্ন আদালতে বিচার দ্রুত হইবে। কিন্তু শাস্তি কার্যকর হইতে কতকাল লাগিবে, তাহা কেহ বলিতে পারে না। বিচারের এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া লইয়া অতীতে যদ্রূপ কাজ হয় নাই, এখনও তাহা দৃশ্যমান নহে। অথচ এই জন্য একদিকে বিচারের বাণী নীরবে ক্রন্দনরত, অন্যদিকে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় গ্রহণে অনিচ্ছুক হইয়া উঠে। আলোচ্য ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী ও তাঁহার পরিবার যে মামলা করিবার পরও তাহা তুলিয়া লইবার কথা বলিতেছেন, তাহার কারণ যে এইখানে নাই– কে বলিতে পারে! উপরন্তু সোমবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনে যদ্রূপ বলা হইয়াছে, ভুক্তভোগী নারীর পিতা বলিয়াছেন, সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তির রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব এতটাই যে, তাহারা মামলা চালাইতে উৎসাহ বোধ করিতেছেন না। প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়াছে, অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনায় কোনো মামলা হয় না। ফলে দেশে ৯৯ শতাংশের বেশি মামলায় অপরাধীরা শাস্তির বাহিরে থাকিয়া যায়। ন্যায়বিচারের এহেন দুরবস্থার মধ্যে যেইখানে সচেতন মানুষেরও আইন-আদালত সম্পর্কে হতাশ হইবার কথা, সেইখানে সমাজের দুর্বল ও অসহায় ভুক্তভোগীদের কী অবস্থা হইতে পারে, তাহা ব্যাখ্যার প্রয়োজন নাই।
ধর্ষণের ন্যায় অপরাধের বাড়বাড়ন্তের জন্য অপরাধীদের প্রতি রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় যে বহুলাংশে দায়ী– তাহা অতীতে আমরা বলিয়াছি; আলোচ্য ক্ষেত্রেও উহা স্পষ্ট। অথচ অন্তত বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এমনটা হইবার কথা ছিল না। শুধু উহাই নহে; দুর্ভাগ্যবশত, অপরাধীর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা লইয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অতীতের ন্যায় বাগ্বিতণ্ডাও পরিলক্ষিত হইতেছে। এমতাবস্থায় অপরাধী ধরা পড়িবার পরও ন্যায়বিচার যে কঠিন, তাহা অনুমানে বিশেষজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতনসহ সকল প্রকার অপরাধবৃত্তি দমনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা সরকারের দায়িত্ব। আমাদের বিশ্বাস, আলোচ্য ঘটনায়ও সরকার উক্ত দায়িত্ব যথাযথ পালন করিবে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলিকেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে হইবে– অপরাধীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় প্রদান করা হইবে না। সমাজের সচেতন নাগরিকদেরও এই সকল ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উচ্চকণ্ঠ থাকিতে হইবে।