নতুন আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই হামলার হুমকি থেকে সরে আসতে হবে: ইরান
Published: 30th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে হামলার পরিকল্পনা পুরোপুরি বাতিল না করলে ইরান কোনো আলোচনা শুরু করবে না। বিবিসিকে এমনটাই জানালেন ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভানছি।
মাজিদ তাখত-রাভানছি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে ইরানকে জানিয়েছে, তারা আলোচনায় ফিরতে চায়। কিন্তু আলোচনা চলার মধ্যেই আর হামলা হবে কি না, সেই ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে’ ওয়াশিংটন এখনো স্পষ্ট কোনো বার্তা দেয়নি।
ইসরায়েল ১৩ জুন ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলা শুরু করলে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত শুরু করে। ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে ২১ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে যোগ দেয়। দেশটি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেন, ক্ষতি ‘গুরুতর’ হলেও ‘সম্পূর্ণ (ধ্বংস) হয়নি’।
তাখত-রাভানছি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতেই পারি। এটাকে বোমা বানানোর চেষ্টা বলা ঠিক নয়।’
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পাচ্ছি না। তাই নিজেদের মতো করে এগোতে হচ্ছে।’
ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা আলোচনার বিষয় হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কিন্তু যদি কেউ বলে, একদম বন্ধ করতে হবে, না হলে হামলা হবে—তাহলে সেটা আইন নয়, বর্বরতার শাসন।’
২০১৫ সালে ছয় বিশ্ব শক্তি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করেছিল ইরান। এই চুক্তির আনুষ্ঠানিক নাম জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ), যা সংক্ষেপে ইরান পরমাণু চুক্তি নামে পরিচিত। ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নজরদারি করতে এই চুক্তি করা হয়েছিল, যাতে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইরান সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারত। ফর্দো পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৫ বছর কোনো কার্যক্রম চালানো নিষিদ্ধ ছিল।
চুক্তি করার বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছিল পশ্চিমা দেশগুলো। কিন্তু ২০১৮ সালে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে একতরফা বের হয়ে যায়। ফলে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে চুক্তিটি নবায়নের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু সফল হননি।
গত জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তেহরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির চেষ্টা শুরু করেন। দেশ দুটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ওমান ও ইতালিতে কয়েক দফায় অপ্রত্যক্ষ বৈঠক হয়। ওমানে ষষ্ঠ দফার বৈঠকের দুই দিন আগে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের হামলার সপ্তাহ দু-এক আগে আইএইএর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ১৭ মে পর্যন্ত ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় সমৃদ্ধ ৪০৮ দশমিক ৬ কেজি ইউরেনিয়াম মজুত করেছে। পরমাণু অস্ত্র নেই—এমন যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত নজিরবিহীন ঘটনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ হলেই তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য উপযুক্ত।
তাখত-রাভানছি মনে করেন, ইউরোপ ও পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষে একচোখা অবস্থান নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা আমাদের সমালোচনা করছেন, তাঁদের উচিত আগে আমাদের প্রতি কী আচরণ করা হয়েছে, সেটা দেখা। তাঁদের যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমালোচনা করা উচিত। তাঁদের যদি যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার সাহস না থাকে, তাহলে হামলাকে ন্যায্যতা না দিয়ে অন্তত চুপ থাকা দরকার।’
ইরানের পার্লামেন্ট সম্প্রতি আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটির বিরুদ্ধে তারা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছে।
ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আলোচনার সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় (এজেন্ডা) নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি আরব দেশ, বিশেষ করে কাতার আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে।
তাখত-রাভানছি দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সরকার হটানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড নিয়ে ইরানিদের ভেতরে সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু বিদেশি আগ্রাসনের মুখে তারা সবাই এক হয়ে প্রতিরোধ করবে।’
উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি টিকবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ইরানের ওপর যদি কোনো সামরিক হামলা না হয়, তাহলে তারা এই যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে।
শেষে তাখত-রাভানছি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা সংলাপ ও কূটনীতি চাই। তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে—যেন আবার হঠাৎ হামলায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় না হই।’
সর্বশেষ তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ইরান সরকারের হিসাবে এখন পর্যন্ত দেশটির ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে ইরানি হামলায় ইসরায়েলে মারা গেছেন ২৮ জন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপপরর ষ ট রমন ত র য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র র জন য পরম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলা বহরের ম্যারিনেট গাজা জলসীমা থেকে কত দূরে
দ্য ম্যারিনেট। ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নৌবহরের নৌযান। নৌযানটি এখনো ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আজ শুক্রবার আল-জাজিরার অনলাইনে এই তথ্য জানানো হয়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি বলছে, একমাত্র দ্য ম্যারিনেটকেই এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। বহরের বাকি নৌযানগুলোকে তারা ইতিমধ্যে আটক করেছে।
দ্য ম্যারিনেট পোল্যান্ডের পতাকাবাহী নৌযান। তবে নৌযানটির মালিকের বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য কোনো নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়, দেখুন লাইভ ট্র্যাকারেনৌযানটিতে ছয়জন আরোহী আছেন। এই আরোহীদের মধ্যে একজন তুরস্কের অধিকারকর্মী সিনান আকিলতু। তিনি আজ নৌযানটি থেকে একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা এখন উচ্চ ঝুঁকির এলাকায় প্রবেশ করেছি। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা দুটি মহৎ পরিণতির যেকোনো একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছি।’
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্যের বরাত দিয়ে আল-জাজিরা জানায়, আজ ভোরের দিকে ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলছিল ম্যারিনেট। এ সময় সূর্যোদয় হচ্ছিল।
ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৪টার দিকে ম্যারিনেটের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩ দশমিক ৭৮ নট। (ঘণ্টায় প্রায় ৭ কিলোমিটার)। নৌযানটি গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে প্রায় ৪৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছিল।
আরও পড়ুনগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জাহাজে জলকামান ব্যবহার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী১৩ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি বাদে সব নৌযান আটক করেছে ইসরায়েলইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেই ম্যারিনেটকে সতর্ক করে দিয়েছে। তারা বলেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ ও অবরোধ ভাঙার যেকোনো চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে নৌযানটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। তবে তা ঠিক করা হয়েছে। নৌযানটি গাজা অভিমুখে চলছে।
ফ্লোটিলা আয়োজকেরা জানিয়েছেন, বহরের ৪২টি নৌযানকে অবৈধভাবে আটকানো হয়েছে। আরোহীদের আটক হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও ম্যারিনেট পিছু হটছে না।
আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনইসরায়েল ‘জলদস্যুর কাজ’ করেছে: এরদোয়ান১৪ ঘণ্টা আগেগ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বলেছে, ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়, ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।
ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযুক্ত আছে বলে জানিয়েছে ফ্লোটিলা আয়োজকেরা।
আরও পড়ুনসুমুদ ফ্লোটিলার আটক অধিকারকর্মীরা ২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলে পৌঁছতে পারেন২০ ঘণ্টা আগে