পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ মেনে নিতে আহ্বান ৬০ নাগরিকের
Published: 30th, June 2025 GMT
ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিতে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাত (পিআর) পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্ঠনের প্রস্তাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানিয়েছেন ৬০ নাগরিক। সোমবার বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, জুলাই সনদে পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ অন্তর্ভুক্ত করুন।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে অন্যতমরা হলেন- মানবাধিকার কর্মী আইরিন খান, আলোকচিত্রি শহিদুল আলম, শিক্ষক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, আইনজীবী মানজুর আল মতিন, উদ্যোক্তা ফাহিম মাশরুর, অর্থনীতিবিদ জ্যোতি রহমান, অর্থনীতিবিদ জিয়া হাসান, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠক ফারাহ কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড.
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০ দল এবং জোটের মধ্যে বিএনপিসহ ছয়টি চায় নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে রাজনৈতিক দলের মধ্যে। জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ ২০টি দল চায় সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। বাকি চারটি দলের অবস্থা স্পষ্ট নয়।
বিএনপি বলছে, সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের দুই তৃতীয়াংশের সংখ্যাগরিষ্ঠতার বাধ্যবাধকতা থাকলে পিআর পদ্ধতি মেনে নেওয়া সম্ভব। অন্য দলগুলো বলছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মৌলিক সংস্কারের অংশ। এতে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ৬০ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একটি প্রধান রাজনৈতিক দল যেভাবে প্রস্তাব করেছে, সেভাবে যদি নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন করা হয়, তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিবর্তন আসবে না। ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠিত হলে, সরকারের জবাবদিহিতা এবং ক্ষমতার ‘চেক অ্যান্ড ব্যাল্যান্স’- এ ভূমিকা রাখতে পারবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে কোনো দল যদি নিম্নকক্ষে একচেটিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, তবুও পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এছাড়াও কিছু ছোট দল সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পেয়েও সংসদে আসন পাবে না, কিন্তু উচ্চকক্ষে প্রতিনিধিত্ব থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে। ফলে সরকার জনবিরোধী ও অগণতান্ত্রিক উদ্যোগ নিলে বিরোধী দলগুলো কার্যকরী সংসদীয় প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে।
সীমিত ক্ষমতার উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাত্যহিক নির্বাহী কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়। উচ্চকক্ষ সংবিধান সংশোধন এবং যুদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত বিষয় ব্যতীত, আইন প্রণয়নে যাতে ভেটো দিতে না পারে। বিল এবং সরকারের সিদ্ধান্ত শুধু নিরীক্ষা এবং তদারকিমূলক কিছু ক্ষমতা পেতে পারে।
বিবৃততিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বারবার হুমকিতে ‘জয়ী সব পাবে’ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। ক্ষমতাসীনরা কখনও বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেয়নি। বিরোধী দলগুলোও ধ্বংসাত্মক বাঁধা তৈরি করে জাতীয় স্বার্থ ঝুঁকিতে ফেলে। আমরা বিশ্বাস করি, পিআর পদ্ধতির উচ্চকক্ষ পারস্পারিক সহযোগিতা এবং আলোচনার নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র অন প ত র জন ত ক দলগ ল ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
পাথর তোলায় রাজনৈতিক দলের ‘ঐকমত্য’, পরে লুট, ঘটল কীভাবে
বড় পাথর, মাঝারি পাথর, ছোট পাথর। তার মধ্য দিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ জলধারা। সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের সেটাই ছিল আকর্ষণ। পর্যটকেরা গিয়ে পাথরের ওপর বসতেন, ছবি তুলতেন।
অবশ্য এখন তা অতীত। চার মাস ধরে লুট করা হয়েছে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের পাথর। এই লুটের কথা সবাই জানত। কারণ, দিনদুপুরে চলেছে লুটপাট। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন কিছু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তা জোরালো ছিল না। ফলে পাথর লুট ঠেকানো যায়নি।
সরেজমিনে গত মঙ্গলবার দেখা যায়, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যেখানে বড় বড় পাথর ছিল, সেখানে এখন গর্ত। সব জায়গায় পাথর তুলে নেওয়ার চিহ্ন। প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট করা হয়েছে। ফলে সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কমেছে পর্যটকের সংখ্যা।
বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলেও পাথর উত্তোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য ছিল। কারণ, পাথর উত্তোলন, পরিবহন, মজুত রাখা, ভাঙা ও বিক্রির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
স্থানীয় প্রশাসনও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সম্প্রতি মত দিয়েছে। কিন্তু সরকার সাড়া দেয়নি। পরে হয় শুরু গণলুট। লুটের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানেও তাঁদের নাম এসেছে। কেউ কেউ আত্মগোপনেও চলে গেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পাথর লুট ঠেকাতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। এর সঙ্গে প্রকাশ্যে ও গোপনে জড়িত রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা। তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
পাথর উত্তোলনে ‘ঐকমত্য’সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা যেভাবে সভা-সমাবেশে কোয়ারি চালুর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা দুঃখজনক। পাথর লুটের দায় এসব নেতা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) সিলেটের সদস্যসচিব আবদুল করিম চৌধুরীউল্লেখ্য, জাফলং (জাফলং-ডাউকি নদী) পরিবেশ অধিদপ্তর ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)। জাফলংসহ অন্যান্য এলাকা থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হলে পরিবেশ আইনে জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আবার খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইনেও এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন পাথর আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা, যার দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। দেশের নির্মাণ খাতে পাথরের চাহিদার বড় অংশ আমদানি করে মেটানো হয়। বাকিটা চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হয় দিনাজপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্প ও সিলেট থেকে উত্তোলন করা পাথর দিয়ে।
সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের আগের অবস্থা। ছবিটি গত ৩০ এপ্রিল তোলা