জোহরানের জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন উগ্রবাদীরা
Published: 1st, July 2025 GMT
বছরের পর বছর নিউইয়র্কের মুসলিমরা ঈদ উপলক্ষে ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। সেখানে এ শহরের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে।
তবে এবার ডানপন্থী প্রভাবশালীরা সেই জমায়েতের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে তা ‘অশুভ তৎপরতা’ বলে প্রচার করছেন। এর সঙ্গে মুসলিম মার্কিন নাগরিক ও নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানির যোগসূত্র টেনে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
‘এটা (এই অপপ্রচার) ভয় দেখানোর জন্য একধরনের পাগলামি’, বলেন স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও মুসলিম আমেরিকান কর্মী আসাদ দান্দিয়া। মামদানির প্রচারাভিযানের এই সমর্থক আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের কমিউনিটি ও নেতৃত্ব জানে, আমরা এখন নজরদারিতে রয়েছি।’
নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আসাদ দান্দিয়ার মতো মুসলিমরা বলছেন, সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে মামদানির জয়ের পর ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রবণতা বেড়েছে।
মামদানির সমর্থকেরা বলছেন, এসব ঘৃণামূলক মন্তব্য প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষ এখনো ঘৃণার একটি সহনীয় রূপ হিসেবে টিকে আছে; যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা কিছুটা কমে গিয়েছিল।
‘যতই পরিবর্তন হোক, প্রকৃতপক্ষে কিছুই বদলায়নি’, বলেন দান্দিয়া।
‘বোরকা পরা’ স্ট্যাচু অব লিবার্টির কার্টুন
ইন্টারনেটে বেনামি ব্যবহারকারী এবং মুসলিমবিদ্বেষী অ্যাকাউন্টগুলোই শুধু মামদানি ও তাঁর মুসলিম পরিচিতিকে নিয়ে আক্রমণ করছে না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেক রাজনীতিকও এমন আক্রমণে শামিল হয়েছেন।
কংগ্রেস সদস্য র্যান্ডি ফাইন কোনো প্রমাণ ছাড়াই বলেছেন, মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্কে ‘খিলাফত’ কায়েম করবেন। আরেক কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বোরকা পরা স্ট্যাচু অব লিবার্টির কার্টুন পোস্ট করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের ভাষ্যমতে, ‘ইসলাম একটি রাজনৈতিক মতবাদ, ধর্ম নয়।’
রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ক ৯/১১ হামলা প্রসঙ্গ টেনে মামদানিকে আখ্যা দিয়েছেন ‘মুসলিম মাওবাদী’ হিসেবে। আর ডানপন্থী ভাষ্যকার অ্যাঞ্জি ওং সিএনএনে বলেছেন, ‘একজন মুসলিম মেয়রকে নিয়ে নিউইয়র্কবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও কট্টর ডানপন্থী লরা লুমার মামদানিকে বলেছেন ‘জিহাদপন্থী মুসলিম’ এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন যে তাঁর সঙ্গে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সম্পর্ক রয়েছে।
বিচার বিভাগে চিঠি দিয়ে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল ও তাঁকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস।
গত রোববার কংগ্রেস সদস্য ব্র্যান্ডন গিল মামদানির হাতে বিরিয়ানি খাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘তাঁর উচিত তৃতীয় বিশ্বে ফিরে যাওয়া। “সভ্য মানুষ” যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে খায় না।’
আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহরান মামদানি২৫ জুন ২০২৫নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নেন মুসলিম নারীরাও। ৩০ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক গ র স সদস য য ক তর ষ ট র ন উইয র ক ম মদ ন র বল ছ ন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ভরা মৌসুমেও ইলিশ সরবরাহ কম, দাম লাগামহীন
চাঁদপুর থেকে বরগুনা, বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর মোকাম– সর্বত্রই এখন ইলিশের দাম নাগালের বাইরে। ভরা মৌসুমেও সরবরাহ কম। এদিকে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে এবার ইলিশের দামের লাগাম টানার সরকারি চেষ্টা শুরু হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দাম নির্ধারণের প্রস্তাবটিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুমোদন নিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস আদেশে জানানো হয়, চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের একটি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি ইলিশের মূল্য নির্ধারণ ও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুমোদন দিয়েছেন। একই সঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রগতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন গত মাসের শেষ দিকে চিঠির মাধ্যমে মন্ত্রিসভা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের জানান, চাঁদপুর ও আশপাশের জেলার কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অস্বাভাবিক দাম হাঁকাচ্ছেন। এতে সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ। শুধু চাঁদপুর নয়, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ সাগর ও নদীবেষ্টিত জেলাগুলোর ব্যবসায়ীরাও এ সিন্ডিকেটে যুক্ত।
১ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ইলিশের ভরা মৌসুম। জুলাই থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকে না। অথচ মৌসুমের প্রথম দিনই বড় ধরনের হতাশা নিয়ে এসেছে ভোক্তা ও জেলেদের জন্য।
বরিশালের অন্যতম বড় ইলিশ মোকাম পোর্ট রোডে গতকাল মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, স্বল্পসংখ্যক ইলিশ এসেছে। সেখানকার আড়তদাররা জানাচ্ছেন, বড় আকারের ইলিশের প্রতি কেজির দাম ২ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। খুচরায় সেই দাম ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় পৌঁছাচ্ছে। এমনকি এক কেজির ওপরে ইলিশ ৪ হাজার টাকায় বিক্রির তথ্যও পাওয়া গেছে।
বরিশালের হিজলা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম বলেন, বর্ষার এই সময় ইলিশের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বৃষ্টি ও জোয়ার থাকলেও ঘাটে ইলিশের সরবরাহ কম। এ সময়ের তুলনায় আগের বছর অনেক বেশি ইলিশ উঠেছিল বলে জানান তিনি।
বরগুনার পাথরঘাটা, পটুয়াখালীর মহিপুর-আলীপুর, ভোলার চরফ্যাসন, এমনকি চাঁদপুরের সদরের বাজারেও একই ছবি। আড়তে ইলিশ আসছে খুব কম, যেটুকু আসছে তার দাম অস্বাভাবিক বেশি। পাথরঘাটার বিএফডিসির ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার মাসুদ সিকদার জানান, মঙ্গলবার মাত্র ৫৫৬ কেজি ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এক কেজি ওজনের মাছের দর ছিল ৩ হাজার টাকা।
আড়তদাররা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না। জেলেরা নদীতে যেতে পারছেন সীমিত আকারে। অন্যদিকে গত বছর নদীতে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে জাটকা নিধনের কারণে এবার উৎপাদনেও ধাক্কা লেগেছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মো. আলফাজ উদ্দিন শেখ বলেন, ইলিশ সাধারণত ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে আসে। জুলাই থেকে বেশি পরিমাণে ইলিশ নদীতে আসে বলেই তখন ভরা মৌসুম ধরা হয়। তবে এবার তুলনামূলক ইলিশ কম ধরা পড়তে পারে। এর সঙ্গে বাজারের চাহিদা, পরিবহন ব্যয় এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিও যুক্ত।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন মন্ত্রিসভা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে প্রস্তাব করেছেন, ইলিশের মূল্য নির্ধারণে কোনো নির্দিষ্ট জেলার প্রশাসন নয়, বরং সমন্বিতভাবে জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে। নদী ও সাগরে আহরণ ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে যুক্তিসঙ্গত মূল্য নির্ধারণের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যসীমা নির্ধারণ করতে পারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ইলিশ বাজারে স্বস্তি ফিরতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হলেও এখন দেশের সবচেয়ে দামি মাছ ইলিশ। অথচ যাদের ঘামঝরা পরিশ্রমে মাছ ধরা হয়, সেই জেলেরা পান সামান্য দাম। মাঝখানে মুনাফার লুটছে সিন্ডিকেট। সময় হয়েছে ইলিশের বিষয়ে কার্যকর নীতি গ্রহণ ও নজরদারি বাড়ানোর।