বছরের পর বছর নিউইয়র্কের মুসলিমরা ঈদ উপলক্ষে ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে নামাজ আদায়ের জন্য জড়ো হন। সেখানে এ শহরের ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে।

তবে এবার ডানপন্থী প্রভাবশালীরা সেই জমায়েতের ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে তা ‘অশুভ তৎপরতা’ বলে প্রচার করছেন। এর সঙ্গে মুসলিম মার্কিন নাগরিক ও নিউইয়র্ক সিটির ডেমোক্র্যাট মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানির যোগসূত্র টেনে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

‘এটা (এই অপপ্রচার) ভয় দেখানোর জন্য একধরনের পাগলামি’, বলেন স্থানীয় ইতিহাসবিদ ও মুসলিম আমেরিকান কর্মী আসাদ দান্দিয়া। মামদানির প্রচারাভিযানের এই সমর্থক আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, আমাদের কমিউনিটি ও নেতৃত্ব জানে, আমরা এখন নজরদারিতে রয়েছি।’

নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আসাদ দান্দিয়ার মতো মুসলিমরা বলছেন, সম্প্রতি ডেমোক্র্যাট প্রাইমারিতে মামদানির জয়ের পর ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্যের প্রবণতা বেড়েছে।

মামদানির সমর্থকেরা বলছেন, এসব ঘৃণামূলক মন্তব্য প্রমাণ করে যে যুক্তরাষ্ট্রে ইসলামবিদ্বেষ এখনো ঘৃণার একটি সহনীয় রূপ হিসেবে টিকে আছে; যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা কিছুটা কমে গিয়েছিল।

‘যতই পরিবর্তন হোক, প্রকৃতপক্ষে কিছুই বদলায়নি’, বলেন দান্দিয়া।

‘বোরকা পরা’ স্ট্যাচু অব লিবার্টির কার্টুন

ইন্টারনেটে বেনামি ব্যবহারকারী এবং মুসলিমবিদ্বেষী অ্যাকাউন্টগুলোই শুধু মামদানি ও তাঁর মুসলিম পরিচিতিকে নিয়ে আক্রমণ করছে না। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ অনেক রাজনীতিকও এমন আক্রমণে শামিল হয়েছেন।

কংগ্রেস সদস্য র‍্যান্ডি ফাইন কোনো প্রমাণ ছাড়াই বলেছেন, মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্কে ‘খিলাফত’ কায়েম করবেন। আরেক কংগ্রেস সদস্য মার্জোরি টেলর গ্রিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বোরকা পরা স্ট্যাচু অব লিবার্টির কার্টুন পোস্ট করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের ভাষ্যমতে, ‘ইসলাম একটি রাজনৈতিক মতবাদ, ধর্ম নয়।’

রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্ক ৯/১১ হামলা প্রসঙ্গ টেনে মামদানিকে আখ্যা দিয়েছেন ‘মুসলিম মাওবাদী’ হিসেবে। আর ডানপন্থী ভাষ্যকার অ্যাঞ্জি ওং সিএনএনে বলেছেন, ‘একজন মুসলিম মেয়রকে নিয়ে নিউইয়র্কবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ও কট্টর ডানপন্থী লরা লুমার মামদানিকে বলেছেন ‘জিহাদপন্থী মুসলিম’ এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন যে তাঁর সঙ্গে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সম্পর্ক রয়েছে।

বিচার বিভাগে চিঠি দিয়ে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল ও তাঁকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য অ্যান্ডি ওগলস।

গত রোববার কংগ্রেস সদস্য ব্র্যান্ডন গিল মামদানির হাতে বিরিয়ানি খাওয়ার একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘তাঁর উচিত তৃতীয় বিশ্বে ফিরে যাওয়া। “সভ্য মানুষ” যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে খায় না।’

আরও পড়ুনট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ জোহরান মামদানি২৫ জুন ২০২৫নিউইয়র্ক সিটির ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্কে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজে অংশ নেন মুসলিম নারীরাও। ৩০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক গ র স সদস য য ক তর ষ ট র ন উইয র ক ম মদ ন র বল ছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না হলেও অগ্রগতি হয়েছে

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁদের বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিষয়ের মীমাংসা বাকি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে শুক্রবার দীর্ঘ এ বৈঠক শেষে পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে অগ্রগতি অর্জনের জন্য আমাদের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন। চুক্তি ‘শেষ পর্যন্ত’ তাঁদের ওপর নির্ভর করবে এবং তাঁদের সম্মত হতে হবে।

চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা তা সেখানে পেলাম না।’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তিনিও ‘আন্তরিকভাবে আগ্রহী’। এই যুদ্ধকে ‘ট্রাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ নিরসন করতে হবে।

বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ইউক্রেন সংঘাত ছিল জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের এই সংঘাতের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে হবে।’ তবে মূল কারণগুলো বলতে কী বুঝিয়েছেন, তার বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়রা শান্তিপ্রক্রিয়ায় বাধা না দেওয়ার পথ বেছে নেবেন বলে আশা করছেন তিনি।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুভ কামনার স্বর প্রকাশের জন্য আমি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকেই ফলাফলের দিকে নজর দিতে হবে।

পুতিন আরও বলেন, ‘ট্রাম্প স্পষ্টত তাঁর দেশের সমৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী। তবে তিনি এটাও বুঝেছেন, রাশিয়ারও নিজের স্বার্থ রয়েছে।’

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকে। যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য ইউক্রেনকে বিপুল আধুনিক সমরাস্ত্র সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে রাশিয়ার ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। কার্যত রাশিয়াকে সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে ‘একঘরে’ করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বাইডেন প্রশাসন। এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসা রাশিয়া ইউক্রেনের একটি বড় অংশ দখল করে আছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্কের অবনমন নিয়েও কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে কোনো বৈঠক হয়নি। দুই দেশের সম্পর্ক স্নায়ুযুদ্ধের পর সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

২০২০ সালের নির্বাচনের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট থাকলে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুই হতো না বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার যে দাবি করে আসছেন, তার সঙ্গেও একমত জানিয়েছেন পুতিন।

এখন সংঘাত থেকে সংলাপে ফেরার সময় উল্লেখ করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বৈঠক আরও অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল।

পুতিন জানান, তিনি ও ট্রাম্প বেশ কয়েকবার ‘খোলামেলা’ ফোনালাপ করেছেন। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফও আলোচনা এগিয়ে নিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ