পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধে হামলার শিকার হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক নেতা। তাঁকে বাঁচাতে আসা দলটির আরও পাঁচ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার বালিপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। হামলার পর ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।
বিএনপি সূত্র জানায়, বুধবার বালিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের দিন নির্ধারিত হয়। ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন দলের উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহরিয়ার আবদুল্লাহ সোহেল। তিনি বুধবার বেলা ১১টার দিকে বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সদস্য সচিব আব্দুল জলিলের সমর্থকরা তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। সোহেলের সঙ্গে থাকা ছাত্রদল নেতা সাকিবকে পিটিয়ে সম্মেলনের ব্যানার ও কমিটির কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন তারা।
সংবাদ পেয়ে বিএনপি নেতা আবুল কালাম শিকদারের সমর্থকরা সেখানে এলে তাদের ওপর হামলা হয়। এ সময় তাঁর পক্ষের জাকির হোসেন (৩৫), রিয়াজুল ইসলাম (৫০), এনায়েত হাওলাদারসহ চারজন আহত হন। এ সময় সম্মেলনে অতিথি হয়ে আসা জেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ও উপজেলা বিএনপির অন্য নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
হামলায় নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক ও ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বাবুল। তাঁর ভাষ্য, শাহরিয়ার সোহেল ওয়ার্ড কমিটিতে আওয়ামী লীগ ও জেপির লোকজনকে নির্বাচিত করিয়েছেন। এতে ক্ষুব্ধ পরাজিত নেতারা এই হামলা করেছেন।
শাহরিয়ার আবদুল্লাহ সোহেলের ভাষ্য, বালিপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনকে পণ্ড করতেই পরিকল্পিতভাবে হামলা হয়েছে। ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাবুল ও সদস্য সচিব আবদুল জলিল শেখের লোকজন দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেন। তারা সাতটি ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা ও দলীয় ব্যানার ছিনিয়ে নিয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে এসে দলের পাঁচ-ছয়জন নেতাকর্মী আহত হন।
জেলা বিএনপির সদস্য আবুল কালাম বলেন, যেসব ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে বিরোধ, সেগুলো নিয়ে দুই পক্ষের সঙ্গে বিকেলে বসেছিলেন। সেখানে মীমাংসা হয়েছে। শুক্রবার সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ইসল ম উপজ ল সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
নদীভাঙন রোধে পাটুরিয়ায় ৩ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট এবং আশপাশে এলাকা নদীভাঙন থেকে রক্ষা করার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী। এ সময় তারা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে তারা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় এ সব কর্মসূচি পালন করেন।
আন্দোলনকারী আজিবার রহমান জানান, পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পাটুরিয়া ফেরি, লঞ্চঘাট, ঘাটসংলগ্ন ধুতরাবাড়ী ও তেগুরি গ্রামে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম দুটিতে কয়েকটি বসতবাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। এরই মধ্যে লঞ্চঘাট নদীতে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনে ফেরিঘাটও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
নেত্রকোনায় বিকাশকর্মী হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি
রংপুরে শ্বশুর-জামাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মানববন্ধন
তিনি আরো জানান, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের ভাঙনের বিষয়টি অবহিত করা হয়। তবে ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এর প্রেক্ষিতে আজ রবিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটসংলগ্ন শহীদ রফিক চত্বরে উথলী-পাটুরিয়া সড়কে তিন ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট থেকে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বেলা ১২টার দিকে মিছিলটি পাটুরিয়া ঘাটের অদূরে শহীদ রফিক চত্বর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর সেখানে উথলী-পাটুরিয়া সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। বিভিন্ন যানবাহন আটকা পড়ে যাত্রী ও পরিবহন-শ্রমিকেরা ভোগান্তিতে পড়ে। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে। তবে আন্দোলনকারীরা অবরোধ কর্মসূচি পালন করতে থাকে। প্রায় তিন ঘণ্টা পর বেলা ৩টার দিকে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করলে তারা সড়ক থেকে সরে যায়।
অবরোধ চলাকালে নদীভাঙন প্রতিকারের দাবিতে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এলাকাবাসী বক্তব্য দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন খান (পান্নু), ব্যবসায়ী নূর ইসলাম, স্থানীয় আরুয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তাপস খান, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন, উত্তম পাল, আরিফ হোসেন ও রানা শিকদার।
বক্তারা বলেন, ‘‘দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরিঘাট নদীভাঙনে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘাট এলাকা ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জীবনের শেষ আশ্রয়স্থল হারিয়ে অনেকে পথে বসেছে। অথচ ভাঙনরোধে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’’
নদীভাঙন প্রতিরোধে বক্তারা দাসকান্দি থেকে নয়াকান্দি এলাকা পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, ঘাট সংলগ্ন দুই কিলোমিটার এলাকা বিআইডব্লিউটিএর আওতাধীন। এরপরও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাটুরিয়া ঘাট ও আশপাশে নদীভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ভাঙনরোধে কাজ শুরু করা হবে। তবে ইতোমধ্যে পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
ঢাকা/চন্দন/বকুল