জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আরও পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরুর কথা জানায়।

যাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাঁরা হলেন বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা পূর্ব কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী জিয়া মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর বিভাগের অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা, উপকর কমিশনার মো.

মামুন মিয়া ও কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।

অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা হলেন এনবিআরের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মহাসচিব। এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আন্দোলনের জেরে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি করার জন্য এমন তদন্ত করা হচ্ছে।

দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অসাধু সদস্য ও কর্মকর্তারা কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে করদাতাদের কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও এনবিআরের কর্মকর্তারা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ কর আদায় না করে তাঁদের করের পরিমাণ কমিয়ে দিতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ঘুষ না পেয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার মিথ্যা মামলা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানমালিককে হয়রানি করেন।

দুদক জানায়, অনেক করদাতা আগাম কর দেন। আবার কেউ কেউ বেশি কর দেন। নিয়ম হচ্ছে, এই কর হিসাব-নিকাশ করার পর বেশি দেওয়া হলে তা ওই করদাতাকে ফেরত দিতে হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, করের বাড়তি টাকা ফেরত পেতে আরও অন্তত অর্ধেক টাকা ঘুষ বা উপহারে খরচ হয়। অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তারা করের টাকা ফেরত দিতে নিজেরাও কামিয়ে নিচ্ছেন মোটা টাকা।

এর আগে গত চার দিনে এনবিআরের সদস্য, কমিশনারসহ উচ্চ পদের ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের মধ্যে এনবিআরের দুজন সদস্য আছেন। এ ছাড়া এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদারও আছেন।

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন স্টেশনে চাকরিকালীন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুল্ক, ভ্যাট ও ক্ষেত্র বিশেষে আয়কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়ে ও নিজে লাভবান হয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র

এছাড়াও পড়ুন:

সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কোনো সুসংবাদ দেননি। দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি দাপট দেখালেও আয়করের সীমা না বাড়ানোয় তঁাদের কপালে ভাঁজ থেকেই গেছে। ফলে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি যাঁদের বার্ষিক আয়, তাঁদের আয়কর দিতে হচ্ছে। কিন্তু অর্থবছরের পয়লা দিন প্রবীণ, অবসরভোগী ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য নতুন দুঃসংবাদ হলো সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমে যাওয়া।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১ জুলাই থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমানো হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। নতুন হার অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

পৃথিবীর সব কল্যাণকামী রাষ্ট্রেই প্রবীণ, অসমর্থ ও অবসরভোগী মানুষের জন্য আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে। সেটি কোথাও নগদ অর্থ বা কম দামে পণ্য কেনার সুযোগের মাধ্যমে। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এতটাই ভঙ্গুর যে খুব কম মানুষ এর থেকে সুবিধা পান। বিগত সরকারের স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে সেই নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফল যাঁদের পাওয়ার কথা, তাঁরা পাননি। সে ক্ষেত্রে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের একাংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লভ্যাংশের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন এবং এখনো আছেন। ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোয় তাঁরা বিপদে পড়বেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যে দেখা গেছে।

তবে সরকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার তুলনামূলকভাবে বেশি দেওয়ায় অপেক্ষাকৃত সীমিত আয়ের মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবেন, যদিও তা আগের মতো নয়। কম বিনিয়োগে বেশি সুদের হার এবং বেশি বিনিয়োগে কম সুদের হার—সরকারের এই নীতি সঠিক বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে সীমা সাড়ে ৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ করা যেতে পারে। কেননা সাড়ে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে একজন মানুষ মাসে যে লভ্যাংশ পাবেন, তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয় কোনোভাবেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কমিশনারসহ এনবিআরের আরো ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক
  • সীমিত আয়ের মানুষের ওপর চাপ বাড়বে
  • আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত কী, আসিফ মাহমুদ কীভাবে লাইসেন্স পেলেন
  • অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন ১৭ লক্ষাধিক করদাতা
  • অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল ১৭ লাখ ছাড়াল