আগের রাত থেকে আমার স্ত্রীর জ্বর। তাই পরদিন ছেলেকে (সায়ের মাহবুব) আমিই স্কুলে নামিয়ে দিয়ে এসেছি। দুপুরে আমার কাছে একটি ফোন আসে। জানতে পারি, মাইলস্টোন স্কুলের মধ্যে বিমানের কী যেন একটা ভেঙে পড়েছে। অফিসের কাজে আমি তখন বনানী। স্কুলের একজনকে ফোন করলাম, তিনি তখন বাইরে ছিলেন, সঠিক তথ্য দিতে পারলেন না। এরপর জানতে পারলাম, স্কুলের মধ্যে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। মাইলস্টোনের ঠিক সেই শাখায়, যে শাখার ইংরেজি ভার্সনে ক্লাস এইটে পড়ে সায়ের। দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম।

দিয়াবাড়ি মোড়ের কাছে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ। মোটরসাইকেল নিয়েও যেতে পারছি না। একটা গলির মধ্যে ঢুকে মোটরসাইকেলটা সেখানে ফেলে রেখেই হেঁটে চলে এলাম স্কুলের কাছে। কিন্তু এত মানুষ! কিছুতেই ভেতরে যেতে পারছি না। অভিভাবকদেরও ভেতরে যেতে দিচ্ছে না। অভিভাবক পরিচয়ের বাইরেও আমার আরেকটা পরিচয় আছে, আমি একজন সাংবাদিক। নিজের পরিচয়পত্রটি দেখিয়ে সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।

চারদিকে মানুষের ছোটাছুটি। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্কুলের ছেলেরাও উদ্ধারকাজ করছে। দেখলাম, আমার ছেলের ক্লাসরুমের নিচেই বিমানটা বিধ্বস্ত হয়েছে। দোতলায় সায়েরের ক্লাসরুম কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, আগুনের কুণ্ডলীও দেখা যাচ্ছে। তখনই ধরে নিলাম, আমার ছেলেও হয়তো নেই। উদ্ধারকারীরা একের পর এক মৃত, পোড়া শিক্ষার্থীদের বের করে আনছে আর আমি শুধু ভাবছি এই বুঝি আমার সায়েরকে দেখতে পাব। এ যে কী দীর্ঘ অপেক্ষা, একজন বাবাই শুধু সেটা উপলব্ধি করতে পারবেন। ছোট ছোট পোড়া শরীরগুলোকে প্যাকেটে করে আনা হচ্ছে, আর আমি ভাবছি এরা আমার একেকটা সায়ের। আমার চোখে পানি।

উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান। গতকাল সোমবারের ছবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ইলস ট ন ব ধ বস ত

এছাড়াও পড়ুন:

লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার

বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।  

জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।

পরিচালক আনোয়ার হোসেন

আরো পড়ুন:

জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট

নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?

এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।” 

লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।” 

‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।” 

সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘নতুন একটি দলের কয়েকজন মহারথী’ বলার পর বক্তব্য বদলালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে একজনের মৃত্যু
  • ভাসানীরা না থাকলে শেখ মুজিব কখনো তৈরি হতেন না: নাহিদ
  • কাভার্ড ভ্যানের পেছনে ধাক্কা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে গেল যাত্রীবাহী বাস
  • নিউ ইয়র্কে নিহত বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে যা জানা গেলো
  • পাঁচ দ্বীপে বাড়ি কিনলেই পাবেন পাসপোর্ট, দেড় শতাধিক দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশ সুবিধা
  • মানুষকে জড়িয়ে ধরল হস্তীশাবক
  • ‘একজন শিল্পীকে ভীষণভাবে অসম্মানিত করা হচ্ছে’
  • ‘শফিউল বারী বাবু ছিলেন আন্দোলনের প্রেরণা’ 
  • লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার