শিক্ষিকা ছিলাম, এই মৃত্যু সহ্য হচ্ছে না
Published: 22nd, July 2025 GMT
‘বাচ্চাদের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। কান্না থামাতে পারছি না। কী দেখছি এসব! ছবি–ভিডিও। এমন দৃশ্য দেখে গা শিউরে উঠছে। নিজেও তো একজন শিক্ষক ছিলাম। শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীদের এমন মৃত্যুতে কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে। শিক্ষিকার মৃত্যু আমাকে পোড়াচ্ছে।’ কথাগুলো অভিনয়শিল্পী দিলারা জামানের। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুর্ঘটনা নিয়ে এভাবে কষ্টের কথা জানালেন দিলারা জামান।
অভিনয়শিল্পী দিলারা জামান নিজেও শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘ ২৬ বছরের শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি অভিনয়ে পরে নিয়মিত হন। আশি পেরোনো দিলারা জামান এখনো অভিনয় করে চলেছেন। ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা দিলারা জামান জানালেন, তাঁদের আসা–যাওয়ার পথ মাইলস্টোন স্কুল–কলেজের সামনে দিয়ে। কী সুন্দর ভবন! বললেন, ‘সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় স্কুল–কলেজের বাচ্চাদের দেখতাম। ওদের কলকাকলিতে মুখর থাকত আশপাশ। কিন্তু গতকাল (সোমবার) বিমান দুর্ঘটনার পর থেকে কেমন যেন পরিবেশ হয়ে গেছে। কোনো ছবি, ভিডিও দেখতে পারছি না। আমি ১২ নম্বর সেক্টরের মাঠে হাঁটতে যাই। সেখানে দুই দিন ধরে শুধু মাইলস্টোনের বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা। শিক্ষার্থীদের করুণ মৃত্যু মাঠে আসা সবাইকে স্তব্ধ করেছে। বারবার চোখ ভিজে গেছে আমারও।’
ঢাকা–চট্টগ্রামের চারটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন দিলারা জামান। ২৬ বছরের শিক্ষকতায় তিনি বাংলা পড়াতেন। সারা দেশে ছড়িয়ে আছেন তাঁর শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের অনেকে দেশ–বিদেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত। প্রথম আলোকে দিলারা জামান বলেন, ‘উত্তরা থেকে ঢাকায় যেতে হলে ওই রাস্তাটা দিয়ে যাই আমরা। মাইলস্টোন বিরাট একটা কমপ্লেক্স করেছে, ওটা দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এখন যেন পুরো পরিবেশ কেমন হয়ে গেছে। আমার মেয়ে কানাডা থেকে দেশে এসেছে। সে বলল, আম্মা, তুমি একটু বাইরে যাও। পরে আমি আমার বাসার রাস্তার উল্টো দিকে যে ১২ নম্বর সেক্টরের পার্ক আছে, ওখানে গিয়ে বসলাম সবার সঙ্গে। সবারই মন খারাপ। আমার তো আরও বেশি খারাপ লাগছে, আমি নিজেও শিক্ষক ছিলাম। যেভাবে একজন শিক্ষিকা বাচ্চাদের বাঁচাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত মারা গেলেন। আসলে শিক্ষকেরা তো সব সময় বাচ্চাদের জন্য নিবেদিত থাকেন, নিজের সন্তানের মতো বাচ্চাদের ভালোবাসেন।’
দিলারা জামান সর্বশেষ শিক্ষকতা করেন ঢাকার নামকরা স্কুলে। জানালেন, দলাদলির কারণে তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। অভিনেত্রী দিলারা জামানের দাপটের কাছে শিক্ষিকা দিলারা জামান অভিমান নিয়ে দূরে সরে গেলেন। অভিমান নিয়েই আছেন, দূরে থেকে দেখছেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার
বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।
জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।
পরিচালক আনোয়ার হোসেন
আরো পড়ুন:
জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট
নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?
এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।”
লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।”
‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।”
সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।
ঢাকা/শান্ত