গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা ঘিরে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে টুঙ্গিপাড়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং জেলা কারাগারের জেলার বাদী হয়ে সদর থানায় আরেকটি মামলা করেন। দুটি মামলায় ২৪২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোহাম্মদ সাহেদুর রহমান ও টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

টুঙ্গিপাড়ায় সড়ক অবরোধ করে আতঙ্ক তৈরির অভিযোগে টুঙ্গিপাড়া থানার উপপরিদর্শক মো.

মনির হোসেন বাদী হয়ে টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম শেখ, সাধারণ সম্পাদক ইফতি জামানসহ ৮২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২০০ জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) ধারায় মামলা করেন। অন্যদিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জেলার তানিয়া জামান বাদী হয়ে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি নিউটন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমানসহ ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে সদর থানায় অন্য মামলাটি করেন।

টুঙ্গিপাড়া থানার মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৬ জুলাই এনসিপির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি চৌরঙ্গী মোড় ও আশপাশের এলাকার রাস্তাঘাট, পিরোজপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে যান চলাচল ব্যাহত করেন আসামিরা। আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও এনসিপির পথসভা নস্যাৎ করার লক্ষ্যে পিরোজপুর-ঢাকা মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরুদ্ধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ সরকারি সম্পত্তি মহাসড়কের ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশ্যে জনসাধারণের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা দেন।

এ নিয়ে গোপালগঞ্জে পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোট ১০টি‌ মামলা করা হলো। সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। ১০টি মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৬০০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৯ হাজার ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এসব মামলায় ১৬ জুলাই থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলার ৫টি থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সদর থানায় নতুন ১১ জনসহ ১১২ জন, কাশিয়ানীতে ৭৭ জন, মুকসুদপুরে ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ২৯ জন ও কোটালীপাড়ায় ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত বুধবার এনসিপির কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা হামলা চালান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেদিন প্রথমে ১৪৪ ধারা জারি করেন জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেট মুহম্মদ কামরুজ্জামান। রাতেই জারি করা হয় কারফিউ। পরে কারফিউর মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হলেও গত রোববার কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়।

আরও পড়ুন৪টি হত্যা মামলা করল পুলিশ, আসামি ৫,৪০০২০ জুলাই ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ সদর থ ন এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।

গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।

নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
  • নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু, দেড় লাখ পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে