বিদায়ী অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানি আগের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের বাইরে প্রচলিত-অপ্রচলিত নানা ধরনের পণ্য রপ্তানির ওপর ভর করে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে অর্থবছরের শেষ দুই মাসে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানিতে ভারত বিধিনিষেধ আরোপ করায় ভবিষ্যতে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে আছেন রপ্তানিকারকেরা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ভারতে পণ্য রপ্তানি কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতে ১৮১ কোটি ৫১ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২৩-২৪ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ১৫৮ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে গত অর্থবছরেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানির সিংহভাগ তৈরি পোশাক। তবে ভারতে রপ্তানির বড় অংশই তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্য। গত অর্থবছরে ভারতে মোট রপ্তানির ৩৬ শতাংশ বা প্রায় ৬৫ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাক ছাড়া অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি ছিল ৬৪ শতাংশ বা ১১৬ কোটি ৬১ লাখ ডলার।

কোন পথে কত রপ্তানি, কী রপ্তানি হয়

প্রতিবেশী দেশ ভারতে তিন পথেই অর্থাৎ স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে পণ্য রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ১৫টি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে রপ্তানির বড় অংশই হচ্ছে স্থলবন্দর দিয়ে।

গত অর্থবছরে ভারতে মোট রপ্তানির ৪৮ শতাংশ বা ৮৭ কোটি ডলারের পণ্য নেওয়া হয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। সব মিলিয়ে ১৫টি স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে, অর্থাৎ স্থলপথে ৭৮ শতাংশ পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সমুদ্রবন্দর ও আকাশপথে রপ্তানি হয়েছে ২২ শতাংশ।

গত অর্থবছরে ভারতে এক হাজার ৪৭ ক্যাটাগরির পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তৈরি পোশাক ছাড়া এই তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে ধানের কুঁড়ার তেল, খাদ্যপণ্য, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, জুতা, পাট ও পাটজাতীয় পণ্য, মাছ, সুপারি, প্লাস্টিকের কাঁচামাল, ব্যাগ, মরিচারোধী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের পরিত্যক্ত টুকরা ইত্যাদি।

বিধিনিষেধে রপ্তানিতে ধাক্কা

গত অর্থবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে পণ্য আমদানিতে ভারত বিধিনিষেধ দেওয়া শুরু করে। প্রথম দফায় গত ১৭ মে বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাব, সুতা ও সুতার উপজাত, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয় প্রভৃতি পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেয় দেশটি। এসব পণ্য রপ্তানির জন্য ভারতের নভোসেবা বন্দর ও কলকাতা বন্দর খোলা রাখা হয়। খাদ্যপণ্য রপ্তানির জন্য সমুদ্রপথের পাশাপাশি ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানির সুযোগ রাখা হয়।

দ্বিতীয় দফায় ২৭ জুন বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে নতুন করে ৯ ধরনের পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে ভারত। ভারতের বিধিনিষেধের তালিকায় থাকা ৯ পণ্যের মধ্যে রয়েছে ফ্লাক্স সুতার বর্জ্য, কাঁচা পাট, পাটের রোল, ফ্লাক্স সুতা, পাটের সুতা, ফুড গ্রেড সুতা, লিনেন কাপড়, লিনেন ও তুলার সুতা মিশ্রিত কাপড় এবং কম প্রক্রিয়াজাত বোনা কাপড়।

এই দুই দফায় বিধিনিষেধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে অর্থবছরের শেষ মাস জুন থেকে। গেল জুন মাসে ভারতে প্রায় ১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪ সালে একই সময়ে রপ্তানি হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি ডলারের পণ্য।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, ভারতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির সহজ পথ হলো স্থলপথ। এই পথে দ্রুত পণ্য পাঠানো যায়। খরচও কম। স্থলপথে কম খরচে ও কম সময়ে পণ্য রপ্তানির সুবিধা কাজে লাগিয়ে মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার তৈরি হচ্ছিল। বড় শিল্প গ্রুপের পাশাপাশি ছোট প্রতিষ্ঠানও পণ্য রপ্তানি করে অবস্থান বাড়িয়েছিল।

বিধিনিষেধের পর তৈরি পোশাক এখন পুরোপুরি সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। মূলত বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নানা বাধা মোকাবিলা করে পণ্য রপ্তানি অব্যাহত রাখলেও ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোর রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে পড়েছে।

ভারতের বিধিনিষেধে কী প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভারতে এখন খাদ্যপণ্য শুধু ভোমরা ও সমুদ্রপথে রপ্তানি করা যায়। আমরা এখন ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি করছি। ভোমরা দিয়ে ভারতের নানা রাজ্যে পণ্য নেওয়ার জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এতে খরচ ও সময় বেশি লাগছে।’

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিধিনিষেধের পাশাপাশি এখন প্রতিটি চালানের পরীক্ষা হচ্ছে। এতেও অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। রপ্তানিতে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার না হলে ভারতে সামনে রপ্তানি কমতে পারে বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন। বাণিজ্যের এসব বাধা দূর করতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থলপথ

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন